ডায়রির ভাঁজ থেকে | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | অয়ন সাঁতরা | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
0 (0)

সোমবার যেকোনো অফিসেই কাজের চাপ একটু বেশি থাকে। তবে কাজের চাপের মাঝেও অংশুর মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রোফেসারের শ্বশুর বাড়ির ওই বুড়োর কথাগুলো। প্রোফেসারের নাম শুনে অমন খেপে উঠেছিল কেন লোকটা? ওনাদের বাড়ির মেয়ে, মানে প্রোফেসারের স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য প্রোফেসার কতখানি দায়ী? তাছাড়া, প্রোফেসারের শ্বশুরবাড়িতে যখন ড.দাস ঢুঁ মেরেইছিলেন, তাহলে সেখান থেকে জোগাড় করা ইনফরমেশান ডায়ারিতে নোট করেননি কেন? নাকি এমন কিছু ইনফরমেশান পেয়েছিলেন যে তার পিছনে ছুটতে ছুটতে আর ডায়ারিতে নোট করা হয়ে ওঠেনি? সম্ভবত তাই। কারন ড.দাসের নোট নেওয়া ডায়ারি দিশার কাছে আছে মানে দার্জিলিঙে উনি এই ডায়ারি ক্যারি করেননি। অর্থাৎ হতে পারে ওই বাড়ি থেকে প্রাপ্ত কোনো তথ্যই ড.দাসকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল দার্জিলিঙে। কিন্তু কি সেই তথ্য? আর প্রোফেসারের ডায়ারিতে উল্লিখিত গুপ্তধনটাই বা কি? সেটা কি টাকা? যদি টাকাই হয়, সেটা ওই বাড়িতেই কোথাও আছে? নাকি সেটা…

এইরকম সাতপাঁচ ভাবনার মাঝেই ফোনটা এল।

-‘হ্যালো?’

-‘আপনি অংশুমান রায় তো?’

-‘হ্যাঁ। বলছি। আপনি কে বলছেন?’

-‘আমি ইন্সপেক্টার দত্ত কথা বলছি, মিছরিপুর থেকে’।

-‘ও হ্যাঁ হ্যাঁ, বলুন বলুন’।

-‘এদিকে একবার আসবেন নাকি? মানে আপনার ক্লাইন্ডকে তো আসতেই হচ্ছে। খবর দেওয়া হয়েছে ওনাকে’।

-‘কি ব্যাপার বলুন তো?’

-‘সেকি মশাই? আপনার মক্কেল আপনাকে ফোন করেনি?’

-‘না। কেন?’

-‘কাল রাতে তো আর শুধু গুলিগালার আওয়াজ নয় মশাই, একেবারে খুন হয়ে গেছে প্রোফেসারের বাড়ির উঠোনে। তাও আবার একটা নয় দুটো’।

-‘খুন? কে খুন হয়েছে?’

-‘একটা তো বাড়ির কেয়ারটেকার ছোঁড়াটা। বারন করা সত্ত্বেও কি ধান্দায় বাড়িতে এসেছিল কে জানে? আর দু নম্বর বডির কল হিস্ট্রিতে আপনার মক্কেলের ফোন নাম্বার পাওয়া গেছে। …যাই হোক, আপনি কাল এসেছিলেন তাই একবার ফোন করলাম; যদি আসেন। তবে এলে একটু তাড়াতাড়ি আসুন’।

-‘হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি আসছি। আর খবরটা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ’।

মিতাকে ফোন করার কথা আর মাথাতে আসেনি অংশুর। কারন এই মাত্র যা খবর পাওয়া গেল, তাতে হিসেব সব গুলিয়ে গিয়েছে। সব নতুন করে সাজাতে হবে।

অংশু পৌঁছে দেখল আগের দিনের মতোই প্রোফেসারের বাড়ির সামনে হালকা জটলা। এক আধ জন ঘাড় ঘুড়িয়ে পুলিশের গাড়িগুলো পর্যবেক্ষণ করতে করতে চলে যাচ্ছে। ‘সাহস করে আর পাড়ায় থাকি কি করে বলত?’ ইত্যাদি টুকরো টুকরো মন্তব্যও কানে ভেসে আসছে।

অংশু বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেল একটা টুলের উপর বসে আছে দিশা। টুলের পাশে কয়েকজন মহিলা কন্সটেবল।

ইন্সপেক্টর দত্ত দিশার উপর প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ করছিলেন এতক্ষন তা বোঝাই যাচ্ছে।

অংশুকে দেখতে পেয়ে ইন্সপেক্টার এগিয়ে এলেন ওর দিকে।

-‘আসুন মি.রায়। কি হয়েছে না হয়েছে সব শুনে নিন। তা দাঁড়িয়ে কথা হবে নাকি বসবেন ভিতরে?’

-‘না আগে একবার…’

-‘নেই। বডি আপনি আসার পাঁচ মিনিট আগে বেড়িয়ে গেছে। তবে ঘটনা আর দুটো বডিরই ফটোগ্রাফ আপনাকে দিচ্ছি, আসুন’ –বলে দত্তবাবু নিজে একটা চেয়ার টেনে বসলেন আর একটা দেখিয়ে দিলেন অংশুকে। অংশু চেয়ারটা দিশার পাশে নিয়ে গিয়ে একবার ওকে আড় চোখে দেখে নিয়ে বসে বলল –‘বলুন তাহলে। শুনি’।

-‘দাঁড়ান আগে ছবিগুলো দিই’ বলে মোবাইলটা অংশুর দিকে এগিয়ে দিলেন দত্তবাবু। তারপর বললেন –‘আজ সকালে বাজারে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির জনৈক মধু সামন্ত নামে একজন এই বাড়ির সামনের দরজার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে মাটির উপর কাউকে শুয়ে থাকতে দেখেই ভয় পেয়ে যান। কারন বাড়িতে যে এখন কেউ নেই তা তো গ্রামের সবাই জানে। তারপর পাড়ার লোক আসে আর পুলিশে খবর দেয়’।

-‘এখানে পুলিশের টহল দেওয়ার কথা ছিল না?’

-‘ওইটেই তো মিসটেক হয়ে গেছে। আজ থেকে তো উইথ আর্মস পুলিশ টহলে থাকবে। …যাই হোক, দুটো বডির একজন তো সেই কেয়ারটেকার, আপনাকে তখনই বলেছি। আর দ্বিতীয়জন অরুনাভ পাইন। এই পাইনবাবুর মোবাইল থেকেই আপনার মক্কেলের নাম্বার পাওয়া গেছে। তাও আবার লাস্ট কল রাত দশটা তেত্রিশে’। শেষের কথাগুলো দত্তবাবু দিশার দিকে তাকিয়ে বললেন। তারপর অংশুকে উদ্দেশ্য করে বললেন –‘অরুনাভকে উনি কিভাবে চেনেন সেটা জেনে নিন। তারপর পরবর্তী প্রসঙ্গে আসছি’।

দিশা জানাল, অরুনাভর সঙ্গে তার আলাপ ইউ.কে তে। ওখানকার এক ইউনিভার্সিটিতে হিস্ট্রির ভালো ছাত্র ছিল অরুনাভ। বছর তিনেক আগে কলকাতায় আসে রিসার্চের কাজে। কী কাজ তা সবিস্তারে জানে না দিশা। তবে কোলকাতায় আসার কয়েকদিনের মধ্যেই অরুনাভর সঙ্গে দিশার দেখা হয় এবং স্বাভাবিকভাবে পূর্ব পরিচিতি থাকার দরুন যথেষ্ট মেলামেশাও করেছে। সম্প্রতি দঃআমেরিকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর কিছু বইও ওর থেকে নিয়েছিল দিশা। এছাড়াও দিশার কাজের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল অরুনাভ। তাই ফোনে মাঝে সাঝেই কথা হত। আর গতকাল রাতে এমনিই ফোন করেছিল দিশা, তবে কথা বেশিক্ষন হয়নি। ‘বিজি’ আছি বলে ফোন রেখে দেয় অরুনাভ।

দত্তবাবু অংশুকে উদ্দেশ্য করে বললেন –‘আপনার মক্কেল মিস বসু বলছেন, লন্ডনে বেড়াতে গিয়ে অরুনাভবাবুর সাথে ওনার আলাপ। কিন্তু এটা আমার পক্ষে হজম করা একটু অস্বস্তির হচ্ছে মি.রায়’।

এবার দিশাই বলল –‘কেন? বিদেশে গিয়ে কারুর সাথে বন্ধুত্ব হতে পারে না?’ বচসা আরো বাড়তে পারে দেখেই অংশু চট জলদি জিজ্ঞেস করে –‘আচ্ছা দত্তবাবু, আপনি কি কোনো রকম সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছেন এর মধ্যে?’

–‘দেখুন কিছুই তো বুঝতে পারছি না। কিসের কারনে দুজনের এখানে আগমন, মানে প্রোফেসারের বাড়ির প্রতি এত আকর্ষণ কিসের সেটাই তো…’

-‘আমি কিন্তু জানি আকর্ষণের কারনটা। আমি আপনাকে সেটা জানাতেও পারি, যদি আপনি কথা দেন; আপনি আমাকে সবরকম সাহায্য করবেন এই কেসের তদন্তের জন্যে!

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ছায়া শরীর | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | কেয়া চ্যাটার্জী | Bengali Thriller Story | 9F10
Next post দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌসুমী দাশ | Bengali Murder Mystery Story | 9F10