৫
দিশা যে লন্ডনে বেড়াতে যায়নি সেটা অংশু প্রথমেই বুঝতে পেরেছিল। পরে চেপে ধরতে বলেছে লন্ডনেই ওর মা থাকে তার বর্তমান বরের সঙ্গে। দিশার তার মায়ের উপর রাগের কারনটাও অনেকখানি স্পষ্ট হয়ে গেছে অংশুর কাছে।
হেদুয়ার লেকে একটা বাচ্চা মেয়ে তীরের বেগে এমাথা ওমাথা হচ্ছে।
সূর্য ডুবে এসেছে প্রায়। হেদুয়ার জলের উপরে সামনের সাদা রঙের স্কটিশচার্চ কলেজের ছায়ার উপর অস্তমিত সূর্যের উজ্জ্বল দাগ। এই সময়টা চমৎকার লাগে এই জলের পারে দাঁড়াতে। অংশু আর মিতা প্রায়ই বিকেলের সময় আসে এখানটায়। আজ দিশাকে ডেকে নিয়েছে। অংশু এবার গুছিয়ে ইনভেস্টিগেটিং করবে। দিশার কাছ থেকে যা যা জানার তা তা জেনে নিতে হবে। কারন, দিশাই যদি কোনো কথা চেপে যায় তাহলে সমস্যা আছে।
‘দেখুন মিস বসু, কেসটা এখন আর ড.দাসের ধোঁয়াটে মার্ডার কেস কিংবা প্রোফেসারের গুপ্তধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বুঝতেই পারছেন এর মধ্যে আপনার একজন বন্ধুর খুনও ঢুকে পড়েছে’।
দিশা মাথা নাড়লো।
‘আপনি কি কোনোভাবে অরুনাভবাবুকে প্রোফেসারের গুপ্তধনের ব্যাপারে কিছু বলেছিলেন?’
-‘কক্ষনো না’।
-‘ঠিক?’
-‘ঠিক’।
-‘বেশ। আর কেয়ারটেকারটা কি ড.দাসের সময় থেকেই ছিল?’
-‘হ্যাঁ’।
-‘উম। তাহলে ওর পক্ষে ব্যাপারটা জানা এমন কিছু অসম্ভব নয়’।
এবার মিতা বলে –‘আমার প্রশ্ন হল, কি গুপ্তধন? কোথায় গুপ্তধন? কিছুই জানা নেই পটাপট দু টো লোক মরে গেল গুপ্তধনের পিছনে ছুটে?’
অংশু মিতার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দিশাকেই আবার প্রশ্ন করল –‘এবার বলুন তো, পুলিশকে আপনি কি লুকিয়ে গেছেন?’
-‘কই? কিছু না তো’।
-‘উঁহু। আপনার চোখ সে কথা বলছে না। মিস বসু, আপনি কাল রাতের ওই খুনের ব্যাপারে নিজস্ব কিছু থিওরি পোষণ করছেন। কাইন্ডলি সেটা বলুন’। এবার দিশা প্রায় কেঁদে ফেলে। তারপর পোরশুদিন রাতে সম্রাট কিভাবে রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল তা জানায়।
সব শুনে মিতা হেসে ফেলে। বলে –‘আরে বলা আর করার মধ্যে তফাত নেই নাকি? অমনি রাগ দেখালো বলেই মেরে ফেলল আরেকজনকে, এ আবার হয় নাকি?’
দিশা মাথা নাড়ায় জোড়ে জোড়ে। বলে –‘শুধু তো রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে যাওয়া নয়। সম্রাট বেড়িয়ে যাওয়ার পর আমি নিজে ফোন করেছিলাম অরুনাভকে। অরুনাভ তখন বলে যে ও কি একটা কাজে খুব ব্যাস্ত, আমি যেন পরে ফোন করি। কিন্তু ফোন রাখার আগে আমি স্পষ্ট শুনেছি সম্রাটের বাইকের আওয়াজ’।
হেদোয়ার জলে এখন অলস সূর্যের আলোকরেখা। অংশু সেইদিকে তাকিয়ে বলল – ‘সম্রাটের ফ্ল্যাটের ঠিকানাটা দাও’।
….