৬
মিতাকে গতকাল বিকেলে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে অংশু সম্রাটের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল। তাই কাল ওখানে কী কথা হল তা জানতে আজ লাঞ্চ টাইমে বাইরে খেতে বেড়িয়ে মিতা অংশুর অফিসে চলে এল।
অংশু সবে টিফিন কৌটো খুলে খেতে বসেছিল, এমন সময় মিতা ওর রুমে ঢুকল।
-‘কিরে? এমন সময়?’
-‘তার আগে বল রাতে তোর ফোন সুইচ অফ ছিল কেন?’
-‘কাল রাতে? ও হ্যাঁ। আসলে ছক সাজাচ্ছিলাম’।
-‘তার মানে কাল সম্রাটের সঙ্গে কথা বলে ট্র্যাক খুঁজে পেয়েছিস?’
-‘পেয়েছি। তবে সেখানেও অনেক ডাউট আছে’।
-‘কিরকম?’
-‘বলছি। আজ সন্ধ্যেবেলা অফিস ছুটির পর বাইরে দাঁড়াস। গাড়ি এনেছিস তো?’
-‘হ্যাঁ’।
-‘ঠিক আছে। এখন যা’।
‘এবার বল’ চাবি ঘুড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল মিতা।
-‘সম্রাট দিশার আগে থেকে প্রোফেসারের ডায়রির ব্যাপারে সব জানত’।
-‘তাই? কিভাবে?’
অংশু গতকাল সম্রাটের সঙ্গে হওয়া সব কথাই বলল। সব শুনে মিতা বলল –‘বা রে বা! দিশা কোথায় সম্রাটকে বাঁচাতে তোকে রিকোয়েস্ট করছে আর ও ব্যাটা উলটে দিশাকে ফাঁসাতে চাইছে। এক্কেবারে বাজে ছেলে –দেখে নিস’। অংশু বাঁকা হাসি হেসে বলল –‘কেন? তুই জোড় গলায় বলতে পারিস যে দিশা নিজে সেফ থাকার জন্য ভালো মানুষীর অ্যাক্টিং করছে না?’
-‘সম্রাটের বয়ান হান্ড্রেড পারসেন্ট ট্রু সেটাই বা তুই কী করে বলছিস?’
-‘বলছি না তো… তবে সম্রাটের এ কথাটা ঠিক যে সেদিন রাতে ওখানে অরুনাভ আর সেই কেয়ারটেকার ছেলেটা ছাড়াও আরো একজন ছিল’।
-‘প্রমান?’
-‘আজ সকালে ইন্সপেক্টার দত্তর ফোন এসেছিল। বলেছেন, কেয়ারটেকারের দেহের গুলিটা অরুনাভর বন্দুকের হলেও অরুনাভর দেহে পাওয়া গুলিটা অন্য একটা রিভলভারের। অর্থাৎ আত্মরক্ষার জন্য কেয়ারটেকার ছেলেটা বন্দুক বার করেছিল বা গুলি চালিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু গুলি অরুনাভর গায়ে লাগেনি। অরুনাভকে মেরেছে অন্য কেউ’।
-‘সেটা দিশা?’
-‘হতেও তো পারে’।
-‘সেটা তো সম্রাটও হতে পারে’।
-‘হতেই পারে। তবে সন্দেহের বশে ঢিল ছোঁড়ার চাইতে, আগে কার মোটিভ কতটা স্ট্রং সেটা দেখতে হবে’।
-‘আচ্ছা তোর কী মনে হয়? এই এত সবকিছু শুধুমাত্র পেপার গুলোর জন্য? গুপ্তধন আদৌ নেই?’
-‘গুপ্তধন আছে কিনা জানি না, তবে পেপার নিয়ে যে একটা চক্রান্ত চলছে এ ব্যাপারে আমি সিওর। আর ড.দাসও যে খুব একটা সোজা লোক ছিলেন না সেটাও বুঝতে পেরেছি প্রোফেসারের ওপর ওঁর লেখা ডায়রিটা পড়ে। তবে কি জানিস শুধু প্রোফেসারের পেপারটাই শেষ কথা নয়। আরো কিছু আছে এবং অতি অবশ্যই আমাদের অচেনা আরো কেউ জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে’।
মিতা একটা ট্যাক্সিকে ওভারটেক করে, দীরঘশ্বাস ফেলে বলল –‘এত লেখালেখি, বিজ্ঞান হ্যানা ত্যানা জুড়ে আছে… কি যে হয়েছিল তা মা সরস্বতীই জানেন!’
কথাটা শোনামাত্র অংশু একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকায়। তারপর উত্তেজিতভাবে ‘কি বললি? মা?….শা-আ-লা…’ বলে আচমকা মিতার গালে ছুমু খেল।
-‘ধ্যাত! কি হচ্ছে কি?’ মিতার ছদ্ম কোপের প্রতি অংশু দৃষ্টিপাত করল না। সে মোবাইল বার করে দ্রুত আঙুল চালাচ্ছে তাতে।
মিতা আবার জিজ্ঞেস করে –‘কী হল টা কী’
-‘নজর সামনে রাখিয়ে ম্যাডাম’ বলে দিয়ে মৌজ করে মোবাইলে নিজের কাজ করতে থাকে অংশু। তারপর কাকে একটা ফোন লাগায়।
-‘হ্যাঁ ভাই আমি বলছি’ … ‘চিনতে পেরেছিস! আরে শোন না একটা কাজ করে দিতে হবে’… ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। খুব দরকার’… ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, নাহলে তোকে বলছি কেন? … ‘হ্যাঁ। আমি তোকে ম্যাসেজ করে দিচ্ছি’ … ‘না তুই শুধু নাম্বারটা…’ কথা শেষ হওয়ার আগেই অংশু মিতাকে এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করাতে বলে। গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে কথা টথা বলে মিনিট পোনেরো পর অংশু আবার গাড়িতে ফিরে এসে ‘চল। তোর বাড়ি যেতে হবে একবার’ বলে সিটবেল্ট বাঁধে।
-‘বাবার সঙ্গে দরকার?’
-‘আছে। তবে তোর সাথেও আছে’।