…
‘এক, দুই করে পর পর সাজা তো’ আরাম করে সিংগেল সোফায় বসে, পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে গরম কফিতে চুমুক দিয়ে বলে অংশু।
মিতা হাতের বিস্কিটের শেষ টুকরোটা মুখে ফেলে দিয়ে হাত ঝেড়ে পেন আর নোতপ্যাড নিয়ে বসে বলে –‘হুম। বল’।
-‘প্রোফেসার বাগচী রাঁচি গিয়েছিলেন ১৯৫৯। তারমানে তাঁর মেয়ের বর্তমান বয়স…’
-‘কিন্তু…’
-‘আহ। যা বলছি লিখে যা। লেখ, মেয়ের আনুমানিক বয়স অ্যারাউন্ড ৬০। মানে তাঁর ছেলে বা মেয়ে থেকে থাকলে সেই বাচ্চার বয়স দাঁড়াচ্ছে …’
-‘২৫ এর বেশি তো হবেই’ এই কথাটা বলে মিতা নিজেই চোখ বড় বড় করে বলে –‘তার মানে দিশা কি…’
-‘ধীরে ধীরে। হুট করে ডিসিশান নেওয়াটা না তোর একটা হ্যাবিটে দাঁড়িয়ে গেছে। আচ্ছা তারপর লেখ –অরুনাভর সাথে দিশার আলাপ ইংল্যান্ডে।
ইংল্যান্ডে থাকেন দিশার মা।
দিশা তার মায়ের সঙ্গে থাকে না।
ড.দাস মারা গেছেন দার্জিলিঙে।
সম্রাট জানে ডায়রির আসল বিষয়বস্তু।
ড.দাস লুকিয়ে গেছেন প্রোফেসারের শ্বশুরবাড়ির কথা। আর সব শেষে লেখ প্রোফেসারের বিবাহপূর্ব প্রেম’।
-‘এর সঙ্গে বিবাহপূর্ব প্রেমের আবার কি সম্পর্ক?’
অংশু এই কথার উত্তর না দিয়ে আয়েশ করে কফি শেষ করল। তারপর মুচকি হেসে বলল –‘দ্বিতীয়দিন মিছরিপুরে গিয়ে আমি একা অনেকটা সময় ধরে ওই গ্রাম ঘুরেছি ম্যাডাম’।
-‘তো?’
-‘জানতে পেরেছি, তৎকালীন স্থানীয় জমিদারবাড়ির মেয়ে মালা চৌধুরীর সঙ্গে প্রোফেসার সমীরণ বাগচীর গভীর প্রেম ছিল। কিন্তু মেয়ের বাড়ি থেকে স্বভাবিকভাবে তা মেনে নেওয়া হয়নি এবং এই না মেনে নেওয়াটাই নাকি বাগচীবাবুর প্রথমবার পাগোল হয়ে যাওয়ার প্রধান কারন’।
-‘বাবা…এতো ৮০ র দশকের মেলোড্রামাটিক কমার্শিয়াল!’
-‘এই মেলোড্রামাটিক কমার্শিয়াল পরে হলিয়ুড অ্যাডভেঞ্চারে টার্ন নিয়ে নিয়েছে’।
-‘কিরকম?’
অংশু হেঁয়ালি করে –‘ন্যাশানাল লাইব্রেরিতে খোঁজ করলে বড় বড় ফ্যামেলির বংশতালিকা পাওয়া যায় জানিস?’
-‘এই, তুই সোজা কথার সোজা উত্তর দে না!’
মিতাকে থামিয়ে দিয়ে অংশু নোটপ্যাডটার একটা ছবি তুলল। তারপর বলল –‘এই প্রসঙ্গ বাদ দে। পরের পয়েন্টে আসি আমরা। অরুনাভর মার্ডারটা নিয়ে একটা থিওরি দাঁড় করিয়েছি’।
-‘তাই নাক? কিরকম?’
-‘প্রথমত আমরা ধরে নেব ওই রাতে অরুনাভ আর ওই কেয়ারটেকার ছেলেটি ছাড়া যিনি এসেছিলেন তিনি মিস্টার বা মিস এক্স। এবং এই এক্সের সঙ্গে অরুনাভ বা কেয়ারটেকার ছেলেটির মধ্যে কারুর পূর্ব পরিচয় ছিল। সম্পর্কটা নিঃসন্দেহে প্রোফেসারের ঘরে থাকা পেপার বা গুপ্তধন সংক্রান্ত। অতএব দলীয় বচসাই এখানে খুনের মোটিভ বলে আমরা ধরে নিতে পারি’।
-‘তাহলে মিস বসু প্রথম দিন যেই গুলির আওয়াজ শুনে তোর কাছে এসেছিল, সেটাও ওই দলীয় বচসার কারনে?’
-‘না। সেদিন হয়েছিল অন্যকিছু। তার প্রমান আমি পেয়েছি’।
-‘কী প্রমান?’
-‘কী নয়, বল কী কী প্রমান?’
-‘মানে একাধিক ক্লু তুই পেয়ে গেছিস?’
-‘ইয়েস। পেয়েছি। আর যা পেয়েছি, সেটা কনফার্ম করার জন্য তোর বাবার প্রয়োজন। চলি। গুড নাইট’।
-‘মানে টা কি? কি বুঝেছিস সেটা তো বলে যা। মোস্ট ওয়ান্টেড এখন কে? দিশা না সম্রাট? সেদিনের তৃতীয় ব্যক্তি কে?’