হাতে খড়ি | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | তারক কোলে | Bengali Detective Story | 9F10
0 (0)

আমি ট্রেনের জানালটা দিয়ে বাইরের বিরামহীন বৃষ্টি দেখছি, রুদ্রদা ফিস্ ফিস্ করে বললো, “আমার ডান পাশে, সামনের দিকে যে লোকটা বসে আছে, একবার দেখ”|

আমি মাথা ঘোরালাম, আস্তে করে বললাম, “হ্যাঁ, কি হয়েছে ওর?”

“লোকটার আজ বড্ডো তাড়াহুড়ো ছিল, বোধহয় এই বৃষ্টির জন্য অফিস যেতে লেট করে যাবে|” রুদ্রদা বই এর পাতাটা মুড়ে বললো |

লোকটাকে দেখে তো মনে হয় অফিস যাত্রী, বেশ আঁটোসাঁটো জামা কাপড় এর বহর, চোখে বেশ দামি ব্র্যান্ড এর চশমা | এক দুই হাজার দাম তো হবেই |

আমি রুদ্রদাকে প্রশ্ন করলাম “কি করে বুঝলে?”

রুদ্রদা চোখের ইশারায় লোকটার জুতো দিকে তাকাতে বললো, “একটা জুতোর ফিতে বাঁধতেই ভুলে গেছে” আমি লক্ষ্য করলাম, রুদ্রদা ঠিকই বলছে, “কিন্তু রুদ্রদা, হতেই পারে যে লোকটা ফিতেটা বাঁধতে ভুলে গেছে, ও হয়তো ঠিক টাইম এই বেরিয়েছে|”

 রুদ্রদা একটু ভেবে বললো, “নারে ওতো সোজা না, মানুষ তার ডেইলি হ্যাবিট গুলো হঠাৎ করে ভুলে যেতে পারে না, যতক্ষণ না খুব তাড়াহুড়ো থাকে আর খুব টেনশন এ থাকে| লোকটাকে দেখে টেনশনে আছে বলে মনে হচ্ছে না |”

আমার তাও কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছিলো না, হাতে রাখা বিসকুট এর একটা টুকরো মুখে দিয়ে বললাম,” আচ্ছা তুমি আমাকে আর একটা কারণ বলো, যেটা দেখে মনে হয় যে লোকটা আজ তাড়াহুড়োতে ছিলো|

” রুদ্রদা হেসে বললো, ” বিশ্বাস হলো না তো?”

আমি একটু ইতস্তত ভাবে বললাম, “না না তেমন কিছু না| ওই কিউরিওসিটি আর কি |

“আচ্ছা ভালো করে দেখ, “লোকটা আজ ঘড়ি পড়তেও ভুলে গেছে”|

আমি লোকটার হাত এর দিকে তাকালাম, সত্যি লোকটা আজ ঘড়ি পড়েনি, “কিন্তু এরকম তো হতে পারে যে লোকটা ঘড়িই পরে না |”

“নারে এটা অসম্ভব |  এতো সুটেড-বুটেড মানুষটা ঘড়ি পরে না? এটা হতে পারে না | বাঁ হাতে স্পষ্ট ঘড়ি পড়ার দাগ আছে | ভালো করে দেখ|”

আমি দেখলাম, এবার সত্যি মনে হলো যে লোকটা আজ তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিল|

রুদ্রদা, শিলিগুড়ির ছেলে, এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্ট্রির উপর পি-এইচ-ডি করছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে| আমাদের বাড়িতে ভাড়া থাকে| বাড়ির ভাড়াটিয়া হলেও আমার বাড়ির লোক কখনো রুদ্রদাকে ভাড়াটিয়ার নজরে দেখে না| আমার বাবা, মা একদম নিজের ছেলে মনে করে, সেই তিন বছর থেকে আছে আমাদের সাথে| ইতিহাস এর ছাত্র হলেও সব বিষয় ওর বেশ নলেজ আছে| রুদ্রদার আর একটা ভালো গুন্ হলো ও একটা মানুষ কে একবার দেখেই তার ব্যাপারে অনেক কিছু বলতে পারে| ডিটেক্টিভ বই পরে পরে, সবার মধ্যে থেকে অজানা কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করে|

রুদ্রদা কিছুক্ষন বই পড়ার পর জিগেশ করলো, “এই আর কতক্ষন রে? এই বৃষ্টিতে স্টেশনে তোর মামদাদুর গাড়ি আসবে তো ?”

আমরা চলেছি বর্ধমান, আমার মামার বাড়ি| না, একদম বর্ধমান শহরে না, স্টেশন থেকে প্রায় ত্রিশ-বত্ৰিশ কিমি দূরে, অমরপুর বলে একটা গ্রামে | দাদুর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না, তাই মা বললো রুদ্রদাকে নিয়ে দেখা করে আসতে| এইবৃষ্টি  এর  জন্য  আমার  প্রথমে  মন  চাইছিলো  না,একরকম  রুদ্রদা  জোর করাতেই  আমি  যাচ্ছি |

“এই তো আর  চারটে  স্টেশন  তার  পরে বর্ধমান, তুমি  চিন্তা  করোনা  গাড়ি  এসে যাবে |” কেন  জানিনা  ওই  সামনের  বেঞ্চের  লোকটার  ব্যাপারে  কিছু  জানতে  ইচ্ছা  হলো , আমি  একরকম  নাছোড়বান্দা হয়ে  বললাম,  “রুদ্রদা  ওই লোকটার  ব্যাপারে  আরও কিছু  বলো, ”রুদ্রদা  হেসে  বললো, “আমার  পরীক্ষা  নিচ্ছিস ?”

আমি হেসে বললাম, “আরে না না”|

বলার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেনটা শক্তিগড় স্টেশনে দাঁড়ালো | “আচ্ছা লোকটার ব্যাপারে পরে বলছি| আগে বল বাদাম খাবি?” রুদ্রদা বললো|

আমি দেখলাম একটা হকার ট্রেনে উঠেছে, প্রায় কাক ভেজা হয়ে| “হুম মন্দ হয় না |”

রুদ্রদা দুটো পাঁচ টাকার কয়েন বার করে হকার টাকে দিলো আর  দু প্যাকেট বাদাম নিলো| বাদাম চিবোতে চিবোতে রুদ্রদা বললো, ” আজ হকারটার  বেশ বিক্রি বাট্টা হয়েছে বুঝলি অনু! “

এইখানে বলে রাখা ভালো যে আমার নাম অনুজ সেন| শুধু রুদ্রদাই নয়, আরো অনেকে নামটা ছোট করে নিজের ইচ্ছে মতো ডাকে|

আমি আমার মুখে একটা বাদাম ছুড়ে বললাম, “কি করে বুঝলে?”

“জামার পকেট দুটো লক্ষ্য করেছিস?”

আমি বললাম, “না তো”

“জামার দুটো পকেটই কয়েনের চাপে ঝুলে গেছে, আর ওই বাদাম রাখার রিংটা ও অর্ধেকের বেশি খালি হয়ে গেছে|” আমি মাথা ঘুরিয়ে দেখতে যাবো তার আগেই হকারটা পরের কামরায় চলে গেলো|

“আচ্ছা আর তো মাত্র দুটো স্টেশন, আরও কিছু বলো  লোকটাকে নিয়ে|” ” তুই তো নাছোড়বান্দা রে| আচ্ছা বলছি”

রুদ্রদা লোকটার দিকে আরো একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো, “লোকটার বাড়ি আর অফিস দুটোই স্টেশন এর সামনে|”

“তাই নাকি?”

“হ্যাঁ ভালো করে দেখ, এই বৃষ্টির মাঝেও লোকটার কাছে ছাতা নেই, আর জুতোতেও কাদার সেরকম দাগ নেই|”

দেখলাম, রুদ্রদা ঠিক বলছে| এইসব এর মাঝেই আমরা গাঙপুর স্টেশনে পৌছালাম, পরের স্টেশনই বর্ধমান| আর দশ-বারো মিনিট| আমি জানালা দিয়ে আবার বাইরে তাকালাম|

রুদ্রদার একটা কোথায় আমি মুখ ঘোরালাম, “দাদা আপনার বাঁ পা এর জুতোর ফিতেটা খোলা আছে|” দেখলাম রুদ্রদা ওই লোকটাকে বলছে, রুদ্রদা আর একটা ভালো গুন্, যে কোনো মানুষের সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিতে পারে|

লোকটা জুতোর ফিতেটা বেঁধে নিয়ে বললো, “থ্যাংক ইউ ভাই, আর বোলো না, তাড়াহুড়োর মধ্যে জুতোর ফিতেটা বাঁধতেই ভুলে গেছি” রুদ্রদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, ও বোঝাতে চায় যে আমি হেরে গেছি|

লোকটা রুদ্রদাকে জিগেশ করলো,  “তোমরা এই বৃষ্টির মধ্যে? ডেইলি প্যাসেঞ্জের তো নয়|” লোকটার তোমরা বলার কারণ হয়তো আমি আর  রুদ্রদা একসঙ্গে আছি সেটা বুঝতে পেরেছে|” “ওই মামার বাড়ি যাচ্ছি, কিন্তু ডেইলি প্যাসেঞ্জের যে আমরা নয় সেটা কি করে বুঝলেন?” রুদ্রদা জিগেশ করলো|

“আমি বর্ধমান স্টেশন এর স্টেশন মাস্টার, তাই সবার মুখ চেনা, অচেনা কেউ দেখলে বুঝে যাই|” রুদ্রদার একটা আন্দাজ একদম ঠিক হলো, বুঝতে বাকি রইলো না যে লোকটার অফিস স্টেশনেই, তাই ছাতা নিতে হয়নি কিন্তু বাড়িটা!!!

“রুদ্রদা কিছু একটা প্রশ্ন করতে যাবে তেমন সময় লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “বাড়ি কোথায়? নামবে কোথায়?”

রুদ্রদা রেক এর ওপরে রাখা ব্যাগটা টেনে নিয়ে বললো, “গড়িয়া, যাচ্ছি অমরপুর | আর আপনার বাড়ি?”

বর্ধমান স্টেশনে আমাদের ট্রেনটা সিগন্যাল এর জন্য দাঁড়িয়ে আছে লোকটা উঠে বললো, ” আমার বাড়ি কোলাঘাট, কিন্তু আমি ডানকুনিতে রেলওয়ে কোয়ার্টার্সে থাকি| আজ তাহলে আসি| তোমরা সাবধানে যেও|” রুদ্রদা থ্যাংক ইউ বললো, আর আমার দিকে তাকিয়ে সেই হাসি| ও যেন বলতে চায় “এবার বিশ্বাস হলো রুদ্রদাকে?

আমরা বর্ধমান স্টেশনে নামলাম, এখনোও ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে, রুদ্রদার ছাতার নিচে আমিও মাথা গুজলাম| স্টেশন এর বাইরেটা ফাঁকা ফাঁকা, লোকজনের ভিড় নেই| রুদ্রদা চা খাবার জন্য বললো, আমি না করলাম না| এই ফাঁকে সিগারেট খাওয়া হয়ে যাবে| রুদ্রদার মতো সিগারেট খাওয়াটা এখনো আমার অভ্যাসে পৌঁছায়নি| ওই দিনে একটা কি দুটো, সেটা না হলেও চলে| আমার এই মাঝে মাঝে সিগারেট খাওয়া নিয়ে রুদ্রদার কোনো প্রব্লেম নেই| আর আমার এই সিগারেট খাওয়াটা রুদ্রদা, আর  কলেজ এর দু একটা বন্ধুই জানে| আমরা স্টেশন এর সামনে বট গাছের নিচে গজিয়ে ওঠা চা এর  ঠেকটাতে বসলাম| রুদ্র দা দুটো চা, বিসকুট আর দুটো গোল্ড ফ্লেক বললো, আর আমায় একবার দাদুর বাড়িতে ফোন করতে বললো, গাড়ির ব্যাপারে জানার জন্য| আমার সদ্য কেনা নোকিয়ার ফোন থেকে ফোন করলাম, দাদুর কাছে মোবাইল ফোন নেই, কারণ ওই গ্রাম এখনো মোবাইল টাওয়ার পৌঁছায়নি| এই বর্ধমান স্টেশন এই নেটওয়ার্ক এর এই হাল, দাদুর বাড়িতে যে কি হবে!! ফোন করলাম দাদুর ল্যান্ডলাইনে| ফোনটা বেশ খানিক্ষন রিং হওয়ার পর দাদুর বাড়ির মালি তুললো, ” হ্যাঁ অনু বাবু, ড্রাইভার তো অনেক্ষন আগে বেরিয়ে গেছে, ল্যাংচা বাড়ির ওখানে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে|” আমি ঠিক আছে বলে ফোনটা কেটে দিলাম| রুদ্রদা সিগারেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে বললো, “কোথায় তোর দাদুর গাড়ি?” আমি একটা টান দিয়ে বললাম, “মালি কাকা বললো তো ল্যাংচা বাড়ি|”

“কি! ল্যাংচা বাড়ি?”

আমি হাসলাম, “আরে না না, যেটা ভাবছো সেটা না| ওটা একটা মিষ্টির দোকান, আমি চিনি| গত বারেও গাড়ি তো ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল|” আমি এসেছিলাম গত বছর দূর্গা পুজোতে, রুদ্রদার এই প্রথম|

আমরা চা সিগারেট খেয়ে ল্যাংচা বাড়ির কাছে পৌছালাম, দেখলাম দাদুর ড্রাইভার রোমেন দাদা একটা লাল কাপড় দিয়ে সাদা অ্যাম্বাসেডর পরিষ্কার করছে| এই কাদা মাটির রাস্তায় গাড়ির আসল রং বোঝা বড়োই দুস্কর হয়ে উঠেছে|

রোমেনদা আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো, “আসেন, ব্যাগগুলো আমারে দেন|”

ব্যাগ বলতে ওই দুটো ব্যাকপ্যাক, রমেনদা ব্যাকপ্যাক দুটো গাড়ির ডিকক্কিতে  রাখলো| আমাদের গাড়ি স্টার্ট নিলো অমরপুর এর দিকে, গাড়ির পিছনে আমি আর রুদ্রদা বসে| শহরের প্যাচপ্যাচে বৃষ্টির থেকে গ্রামের এই বৃষ্টি অনেক সুন্দর, চারিদিকটা কেমন যেন সবুজের এর চাদরে মুড়ে গেছে| সবুজ ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা একদম বুক চিরে বেরিয়ে গেছে| যদিও এখনো প্রায় একঘন্টার রাস্তা, তাও আমাদের চোখে মুখে ক্লান্তির ভাবটুকু নেই, যদিও খিদে একটু পেয়েছে| রাস্তার দুপাড়ে খাল, জল একদম উথলে পড়ছে| গরমকালে চাষের সময় এই খালের জলই ব্যবহার করা হয়| দেখলাম, রুদ্রদা গাড়ির কাচটা নামিয়ে বাইরের বিশুদ্ধ বাতাস গিলেছে, আর চোখে মুখে ইলশে গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে| আমি আর বিরক্ত করলাম না, আমি ও রাস্তার ডান দিকে তাকিয়ে থাকলাম|

রুদ্রদার একটা কথায় আমার হুশ ফিরলো,”আচ্ছা অনু ,মামার বাড়িতে পুকুর আছে?”

আমি ঘুরে তাকালাম, “ও মা কেনো থাকবে না? দুটো বড়ো বড়ো পুকুর আছে, একটা বাড়ির সামনে আর একটা বাড়ির পিছনে, কেনো বলতো?”

“অনেক দিন সাঁতার কাটা হয়নি পুকুরে|” রুদ্রদা হেসে বললো|

অনেকেই জানেনা, রুদ্রদা সাঁতারে ডিস্ট্রিক্ট চ্যাম্পিয়ন, ফুটবল ছাড়া যে কোনো খেলাই খুব ভালো খেলতে পারে| রুদ্রদার ছোটবেলাতে একটা সিরিয়াস এক্সিডেন্ট হয়েছিলো, পাএর উপর খুব চোট পেয়েছিলো তাই আর ফুটবল খেলার রিস্কটা নেয়না| এইতো গত বছর শীতকালে, আমাদের পাড়ার ক্লাবে একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়েছিলো, সেখানে সেমী ফাইনালে রুদ্রদা ম্যান অফ দা ম্যাচ হয়েছিলো| একটু সময় পেলেই পাড়ার ক্লাবে ক্রিকেট বা ভলিবল খেলতে বেরিয়ে পরে| রুদ্রদার হাইট টা প্রায় ৫.৯ ইঞ্চি, তাই ভলিবল খেলায় খুব ভালো স্পাইক করতে পারে| 

রুদ্রদা বলে যারা খেলাধুলোর সঙ্গে অতোপ্রতো ভাবে জড়িতো তারা খুব মানসিক ভাবে দৃঢ় আর পরিকাঠামো হয়, যারা হেরে যাওয়াটা একদম পছন্দ করে না|

আমি রুদ্রদা কে আঙ্গুল দেখিয়ে বললাম “ওই যে দূরে অশত্থ গাছটা দেখছো আর তার পাশে যে মন্দিরটা ওখান থেকেই অমরপুর শুরু|”

রুদ্রদা একবার মুখ বের করে দেখলো, “আচ্ছা জানিস গ্রামের এন্ট্রি বা এক্সিট পয়েন্টে কেনো বড়ো গাছ বা মন্দির থাকে?”

 আমি হেসে বললাম,”খুব সোজা, গ্র্রামের সীমানা নির্ধারণ করার জন্য|”

“সেটা তো জানি, কিন্তু ইতিহাসটা কি?”

 আমি একটু কাচুমুচু হয়ে বললাম, “আমি তো জিওগ্রাফি এর ছাত্র, ইতিহাসটা ওতো জানি না, তুমিই বলো|”

“বহুবছর আগে জমিদারি জামানায়, যাদের জমিদারি ছিল তারা তাদের কাছের মানুষ বা উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের জমি গিফট করতো, আর সেই সব জায়গার সীমানা নির্ধারণ করা হতো বড়ো গাছ বা মন্দির দিয়ে|” রুদ্রদা একটু থেমে আবার শুরু করলো, “দেখবি, প্রতিটি গ্র্রামে এর নাম এর পিছনেই একটা ইতিহাস আছে, এই ধর মামার বাড়ির গ্র্রামের নাম ‘অমরপুর’ হয়তো এই এলাকায় কোনো জমিদার বা মন্ত্রী ছিলো যার নাম ‘অমর’ দিয়ে কিছু|” এই সব কথাবার্তার মাঝেই আমাদের গাড়ি অশত্থ গাছের নিচে আসলো আর ড্রাইভার স্টিয়ারিংটা বাঁদিকে ঘোরালো|

মূহর্তের মধ্যে আমরা গ্র্রামের ভিতরে ঢুকলাম, রাস্তার দুপাশে এখনোও সেই আগের মতোই কাঁচা পাকা বাড়ি, রাস্তাগুলো যদিও ইটের হয়েছে, তাও এই বৃষ্টিতে একদম দাঁত বেরিয়ে গেছে| রাস্তার দুপাশে গজিয়ে উঠেছে নাম না জানা ফুলের গাছ| আমার মামার বাড়িটা গ্র্রামের একদম শেষপ্রান্তে, এই দাঁতবের করা রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছাতে একটু সময় লাগলো| গাড়ি এসে দাঁড়ালো মামার বাড়ির একদম মেইন গেটে| রুদ্রদা চারি দিকটা ময়না করে বললো, ” এটা তো অট্টালিকা রে!!”

হ্যাঁ, আমার মামারবাড়ি অট্টালিকাই বটে! কিন্তু এতো বড়ো বাড়িতে মাত্র চারটে লোকই থাকে, মামাদাদু, ড্রাইভার, একটা মালি যে অন্যানো  কাজ ও করে আর রান্নার লোক| আমার এক মামা আর  এক মাসি, মামা কাজের সূত্রে থাকে আমেরিকা আর মাসির বিয়ে হয়েছে পুনে তে| ওই বছরে একবারই দেখা হয়, দূর্গা পূজার সময়| আমার মামদাদুর বাবার ছোট খাটো জমিদার ছিলো| আর আমার দাদু হলেন এলাকার নামজাদা উকিল, যদিও বয়সজনিত কারণে প্রাকটিসটা আর আগের মতো করে না, কিন্তু বই এর সাথে সম্পর্কটা এখনো টিকিয়ে রেখেছে| তিন বছরে আগে আমার দিদুন মারা গেছে, তারপর থেকে দাদুর সঙ্গী বলতে ওই লাইব্রেরি আর একটা স্প্যানিয়েল, যেটা দাদুর কাছে সব সময় থাকে| যাইহোক, আমাদের গাড়ি এসে দাঁড়ালো একদম সদর দরওয়াজা সামনে| সময় তখন বিকেল প্রায় তিনটে | আমরা গাড়ি থেকে নেমে সোজা গেলাম দাদুর লাইব্রেরি তে| দাদু তখন তার কুকুর টাকে নিয়ে লাইব্রেরির দরজার সামনে আমাদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে| আমাদের দুজনকে দেখার পরে দাদুর চোখে এক অদ্ভুত খুশি ফুটে উঠলো|

আমরা দুজনে দাদুর লাইব্রেরি তে ঢুকলাম| প্রাথমিক আলাপ, আলোচনার পর দাদু আমাদের লাঞ্চ করে নিতে বললো, কারণ বেশ দেরি হয়ে গেছিলো| দাদু আমাদের বললো রেস্ট নেয়ার পর, সন্ধে বেলায় দাদুর লাইব্রেরিতে আসতে, জমিয়ে গল্প করার জন্য| খিদেটা বেশ জাকিয়ে বসেছিল, তাই একদম সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি স্নান করে নিয়ে লাঞ্চ করতে বসলাম আমি আর  রুদ্র দা| বনমালী কাকা খাবার টেবিলে একের পর এক সুস্বাদু পদ রাখতে শুরু করলো|

“খাসা রান্না করে রে এই বনমালী কাকা” রুদ্রদা মাছের কালিয়া তে কামড় দিয়ে বললো|

আমার তখন মুখে খাসির মাংসের দুটো পিস্ তাই উত্তরটা দিতে পারলাম না| খাওয়াদাওয়ার পর গেলাম দোতলায় ঠিক দাদুর পাশের ঘরটায়, যেটা আমার সব থেকে ফেভরিট| দাদু এটা জানে, তাই ওই ঘরটাই পরিষ্কার করিয়ে রেখেছে আমাদের জন্য| রুমটা আমার এই জন্যেই পছন্দ  কারণ জানালা থেকে বাইরের দৃশ্যটা খুব সুন্দর লাগে| জানালা থেকে দাদুর বাড়ির পেছনের পুকুরটা দেখা যায় তারপর একটা লম্বা পাঁচিল তারপরেই ফাঁকা মাঠ| এই প্রথম দেখলাম রুদ্রদা খাবার পর বই নিয়ে বসলো না| সিগারেটটা শেষ করে একটা হালকা চাদরে গায়ের ওপর জড়িয়ে নিয়ে ভাত ঘুমের জন্য রেডি হলো|

আমার ঘুমটা ভাঙলো দরজায় বার বার ধাক্কা শোনার পর| বনমালী কাকা ডাকছিলো চা এর জন্য| আমি দরজা না খুলে চা রেডি করার জন্য বললাম| রুদ্রদা তখনও ঘুমিয়ে যাচ্ছে, যদিও ওর ঘুম খুব সজাগ কিন্তু সেদিন যে কি হয়েছিলো কে জানে| আমি দু বার ধাক্কা দিয়ে তুললাম আর চা এর কথা বললাম| আমি ফ্রেশ হয়ে চা এর এর টেবিলে বসলাম, রুদ্রদা কিচ্ছুক্ষন পর আসলো| চেয়ার টা টেনে নিয়ে বললো,”আজ আর বোধয় বৃষ্টি থামবে না রে!!” আমি বাইরের দিকে তাকালাম যদিও অন্ধকারে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না, শুধু বৃষ্টির অঝোর ধারা শোনা যাচ্ছে| আমরা চা শেষ করে ঠিক করলাম দাদুর লাইব্রেরি যাবো কারণ দাদু বেশিরভাগ সময় ওখানেই থাকে|

দাদুর লাইব্রেরিতে ঢুকতে যাবো, দেখলাম “ব্রাঊন” গেট এর সামনে গুটিশুটি মেরে বসে আছে| আমাদের দেখার পর একটু সজাগ হয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেলো| দাদু খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিলো| আমাদের দেখার পর বললো, ” কিরে ঘুম ভাঙলো তোদের?” রুদ্রদা চেয়ার টা নিয়ে বললো, ” দুপুরের খাওয়া দাও টা খুব ভালো হয়েছে, তাই আর কি!!”

দাদুর লাইব্রেরি রুমটার তেমন কিছু পরিবর্তন হয়নি, শুধু টেবিলের ওপর একটা প্রাচীন মূর্তি দেখলাম| ঘরের চারিদিকে শুধু ঠাসা বই| আইনের বই ছাড়াও আরো অন্য বই ও আছে| দাদু বলে খুব ভালো আইনজীবী হবার জন্য সব রকম এর বই পড়তে হয়|

দাদু নিজের চশমাটা সেট করে রুদ্রদাকে বললো’ “এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্ট্রির কোন পার্ট টা বেশি ভালোলাগে?”

রুদ্রদা একটু ভেবে বললো, “ভেদিক সিভিলাইজেশন”|

রুদ্রদা আমাকে এই জিনিসটা খুব ভালো করে শিখিয়েছে কোনো প্রশ্নের উত্তর খুব ভেবে দিতে, কারণ ওই একই টপিক এর ওপর আবার প্রশ্ন আসতে পারে| এটা যে ব্যক্তি প্রশ্ন করে তার বেসিক ইনস্টিংক্ট, এটা জানার জন্য যে উল্টো দিকের মানুষটার সত্যিই ওই ব্যাপারে নলেজ আছে কিনা| দাদু একটু ভুরু কুঁচকে বললো, “ও আচ্ছা”| তোমার মনে আছে ওই সময় এর সব থেকে বড়ো এপিক কি?”

রুদ্রদা আবার একটু ভাবলো, “হুম মনে আছে, রামায়ণ আর মহাভারত”|

দাদু বেশ খুশিই হলো| দাদুকে রুদ্রদার বুদ্ধির ব্যাপারে বললাম আর আসার সময় ওই ট্রেন এর ব্যাপারেও বললাম| দাদু শুনে বললো,”বাহ্ খুব ভালো| তো কার গল্প ভালোলাগে? দেশি নাকি বিদেশী?”

আমি উত্তরটা জানতাম তাই আমিই বলে দিলাম, “ফেলুদা’|

দাদু হেসে বললো, “আচ্ছা বলো রুদ্রবাবু, আমার মধ্যে কি কি রিসেন্ট চেঞ্জ হয়েছে?”

 রুদ্রদা দাদুর চারিপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে দেখলো| আমি তো কিছু চেঞ্জ লক্ষ্য করলাম না, মনে হলো দাদু এমনি  জিজ্ঞেস করছে|

রুদ্রদা দাদুর দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনি আপনার চশমাটা বদলেছেন রিসেন্টলি” আমার তো মনটা খারাপ হয়ে গেলো| এইসব কি বলছে রুদ্রদা!! দাদু তো সেই পুরোনো চশমাটাই পরে আছে আর আমি এটা ভালো করে চিনি|

দাদু বললো, “এটা আমার দুবছরের পুরোনো চশমা|”

রুদ্রদা বললো, “হ্যাঁ এটা ঠিক যে এটা আপনার পুরোনো চশমা, কিন্তু টেবিলের ওপর যে চশমার বাক্সটা পরে আছে ওটা একদম নতুন|”

“তাহলে আমি তো নতুন চশমা টাই পরবো | পুরোনোটা কেনো পরবো?”

রুদ্রদা হেসে বললো, “এখনও আপনি আপনার নতুন চশমার সাথে অভস্ত হয়ে উঠতে পারেননি, নতুন আর পুরোনোটা পাল্টে পাল্টে পড়েন|”

দাদু গলার জোরটা একটু বাড়িয়ে বললো, “ব্রাভো রুদ্র, ব্রাভো!!”

আমি তো হাঁ করে রুদ্রদার দিকে তাকিয়ে আছি! দাদু নতুন চশমার বাক্স টা খুলে দেখালো, “এটা তিন দিন আগেই দিয়ে গেছে, পাওয়ারটা বেড়েছে তাই!”

রুদ্রদা চেয়ার থেকে উঠে রুম এর ডান দিকে রাখা আলমারি টার কাছে গেলো| সেখানে রাখা ‘হুস বডি?’ বইটা নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে শুরু করলো|

দাদু, রুদ্রদার দিকে তাকিয়ে বললো, “চাই নাকি বই টা?” ডরোথি শ্রেয়ারস এর বই পড়া আছে?”

রুদ্রদা বইটা আগের জায়গায় রেখে বললো, ” না পড়া নেই | পেলে পড়তাম”

দাদু বলতে শুরু করলো, ” এই মহিলাটি বিংশ শতাব্দির খুব বড়ো ডিটেক্টিভ রাইটার| এই ডরোথি   অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রথম মহিলা ছাত্রী, যে গ্রাজুয়েট হয় মিডিয়াভেল লিটারেচারে|”

আমি জানতাম না যে মিডিয়াভেল লিটারেচারটা কী | তাই দাদুকে প্রশ্ন করলাম|

কিন্তু উত্তরটা দিলো রুদ্রদা, “মিডিয়াভেল লিটারেচার হলো মদ্ধ যুগের লেখালেখি বা সাহিত্যের ওপর পড়াশোনা, বেসিক্যালি ইউরোপ সাহিত্তের ইতিহাস বলতে পারিস| ওই আমাদের বাংলা সাহিত্তের ইতিহাসের মতো আর কি|

দাদু যোগ করলো, “এই মিডিয়াভেল লিটারেচার প্রায় ৯০০ বছরের ইতিহাস|” আমি তো শুনে থ!! ভাষার ও কত ইতিহাস!

রুদ্রদা চেয়ারে এসে আবার বসলো, “আমি কি বইটা নিতে পারি?”

দাদু একটু গম্ভীর হয়ে বললো, “আমার কাছে ডরোথির দুটো বই আছে, আমি দুটোই দিতে পারি কিন্তু একটা শর্তে|” আমরা দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলাম “কি শর্ত?”

  দাদু ডায়েরির পাতাটা ছিঁড়ে নিয়ে বললো, ” একটা ধাঁধার সমাধান করে দিতে হবে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে| করতে পারলে দুটো বই আর হাজার টাকা নগদ|” রুদ্রদা এক কোথায় রাজি হয়ে গেলো| যতই হোক এটা রুদ্রদার অফিসিয়ালি ফার্স্ট কেস|

দাদু পেনদানি থেকে একটা লাল কালির পেন তুলে নিয়ে বললো, “এখন তোমরা যাও, আমার একটু কাজ আছে, ধাঁধাটা রাতে খাবার এর সময় দেব|”

আমরা দাদুর লাইব্রেরি থেকে উঠে আমাদের খাবার ঘরে আসলাম| রুদ্রদা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বালালো, ” ভিতরে ভিতরে একটা উত্তেজনা অনুভব করছি রে অনু|”

আমি রুদ্রদার দিকে তাকিয়ে বললাম, “এটা তোমার ফার্স্ট কেস| হেরে গেলে হবে না কিন্তু!!|

রুদ্রদা সিগারেটটা শেষ করার পর ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে নিয়ে বিছানার ওপরে বসলো| তার বর্তমান ইন্টারেস্ট হলো “কন্সপিরেসি থিওরি”| তাই মার্ক ফেনসের এই কন্সপিরেসি থিওরি নামক বইটাই এখন ধ্যান জ্ঞান| রুদ্রদা একদিন বলছিলো এই “কন্সপিরেসি থিওরি” ব্যাপারটা সমাজ এর, বা যে কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে| এই কন্সপিরেসি থিওরি হলো কোনো একটা বড়ো ঘটনা বা দুর্ঘটনার পিছনে, একটা খুব বড়ো চক্রান্ত থাকে যেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ এর মনে হয় একটা  ঘটনা| কিন্তু আদতে ব্যাপারটা তা নয়| ওই ঘটনা বা দুর্ঘটনাটা অনেক আগে থেকেই ঠিক করা থাকে যেটা সাধারণ মানুষের বোঝার ক্ষমতার বাইরে|

রুদ্রদা বই পড়া শুরু করলো, আর আমি ভাবতে শুরু করলাম রুদ্রদার ভাগ্যে কি ধাঁধা অপেক্ষা করছে, এই সবের মধ্যেই বনমালী কাকা দরজায় করা নাড়লো, ঘড়িতে দেখলাম দশটা বাজে, বুজলাম রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে| আমি আর রুদ্রদা ডিনার টেবিলে বসলাম, বনমালী কাকা জানালো, দাদু একটু পরেই আসবে| কিছুক্ষন পরে দাদু তার নতুন চশমাটা পরে আসলো|

দাদু আমার পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বললো, “ধাঁধা ও রেডি খাবার ও রেডি|” রুদ্রদা ধাঁধাটা শুনতে চাইলো দাদু বললো ডিনার শেষ করে| রাতের খাবারে আছে গরম গরম লুচি, আলুরদম আর মিষ্টি|

আমাদের খাও দাও শেষ হলো, দাদু পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে রুদ্রদাকে দিয়ে বললো, “ঘরে গিয়ে খুলে দেখো, তোমার কাছে চব্বিশ ঘন্টা আছে| এখন গুড নাইট আর বেস্ট অফ লাক”

আমার তো আর ধৈর্য ধরছিল না| তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে রুদ্রদা কে দেখতে বললাম|

রুদ্রদা পকেট থেকে একটা চিরকুট বার করলো যাতে লেখা আছে, “হাটতে হাটতে তুমি তার পাবে দেখা, বামহস্তে মজার বাজার, ডানহস্তে লুকিয়ে রাখা|”

রুদ্রদা কিছুক্ষন ভেবে আমায় জিগেশ করলো, ” কিছু বুঝলি?” আমি রুদ্রদার থেকে চিরকুট টা নিয়ে বললাম, ” না! তুমি কিছু বুঝলে?”

রুদ্রদা চোখ বন্ধ করে সিগারেটে টান দিয়ে বললো,” জিনিসটা বাড়ির ভিতরেই আছে কিন্তু এতো বড়ো বাড়িতে কোথায় আছে সেটাই প্রশ্ন!” 

আমি বললাম, “কি করে বুঝলে বাড়ির ভেতরে?”

“দেখলি না, যখন দাদুর লাইব্রেরি তে ছিলাম তখন দাদু ডায়েরির একটা পাতা ছিড়েছিলো আর লাল কালির পেন নিয়েছিল| চিরকুটটা সেই ডিয়ারির পাতা আর  লাল কালিতেই লেখা|”

“সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু বাড়ির ভেতরে কি করে?”

রুদ্রদা সিগারেটটা নিভিয়ে বললো, “দাদু যে এটা আমাকে সল্ভ করতে দেবে সেটা আগে থেকে ঠিক ছিল না| চিরকুটটা লেখার পর,  জিনিসটা বাড়ির ভেতরে লোকানো হয়েছে| আমরা যখন দাদুর লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে ঘরে আসলাম তখনই! আর  এতো বৃষ্টির মধ্যে কেউ বাইরে গিয়ে জিনিস টা রেখে আসবে না সেটা  নিশ্চিত|”

আমার রুদ্রদার কথাটা বিশ্বাস হলো কিন্তু এতো বড়ো বাড়িতে খোজটাও তো মুশকিলের ব্যাপার!! রুদ্রদা আমায় কিছুটা নিশ্চিত করেই বললো, “এখন ঘুম, সকালে উঠে বাড়িটা একটু ভালো করে দেখতে হবে|”

আমি “ঠিক আছে” বলে বালিশ এ মাথা দিলাম| রুদ্রদা হাতে রাখা বইটা আবার পড়তে শুরু করলো|

সকাল প্রায় নটা হবে, আমার ঘুম ভাঙলো| দেখলাম রুদ্রদা বেডে নেই! টি-শার্ট টা পরে নিয়ে ঘরের বাইরে বেরোলাম, দেখলাম রুদ্রদা পেপার পড়ছে| আমি গিয়ে চেয়ারে বসলাম|

রুদ্রদা মুখের কাছ থেকে পেপারটা সরিয়ে নিয়ে বললো, ” যা ফ্রেশ হয়ে নে| জলখাবারের পর বাড়িটা ঘুরে দেখতে হবে|”

আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম| চা বিসকুট খাবার পর, অমলেট আর ব্রেড দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে দাদুর লাইব্রেরিতে গেলাম| দাদু আমাদের দেখেই বললো, ” কি রুদ্র? সমাধান হলো কিছু?”

রুদ্রদা বললো, “না এখনো না| আমি একটু বাড়ি টা ঘুরে দেখতে চাই|”

দাদু বললো, “নিশ্চিন্তে দেখো|” আমরা দাদুর ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম|

রুদ্রদা আর  আমি সিঁড়ি দিয়ে নেমে একদম বাড়ির মেইন্ গেট এর দিকে পৌছালাম| সেখান থেকে আবার বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম| রুদ্রদা আমাকে একটা নোটবুক আর পেন্সিল নিতে বলেছিলো যাতে বাড়ির পাশে কি কি আছে সেটার ম্যাপ বানাতে পারি| সামনেই লম্বা বারান্দা, মেঝেটা পুরোনো দিনের লাল রং, বাঁ দিকে লম্বা লম্বা দুটো পিলার| তার বাঁ দিকে বারান্দার সাথে বেশ বড়ো বাগান| দেখলাম বাগানের মালি গাছের গোড়া তে মাটি দিচ্ছে| গতকাল বৃষ্টি হওয়ার কারণে গাছের গোড়া গুলোতে মাটি হালকা হয়ে গেছে|

নিচে বারান্দার ডান দিকে মোট চারটে ঘর| প্রথম ঘরটা কিচেন, দেখলাম বনমালী কাকা লাঞ্চ বানানোর তোড়জোড় করছে| কিচেন এর ভেতরে যে কিছু থাকবে না সেটা রুদ্রদা ভালো জানতো তাই ওখানে বেশি সময় নষ্ট করলো না| কিচেনের পাশের ঘর টাই হলো মালি, ড্রাইভার আর বনমালী কাকার থাকার জায়গা| ওদের তিন জনের অন্য জেলায় বাড়ি তাই মামারবাড়িতে থাকে ওরা| ঘরটার ভেতরে ঢুকলাম, ড্রাইভার কাকা তার টিনের বাক্সটা গোচ্ছাচ্ছে|

রুদ্রদা জিজ্ঞেস করলো, ” বাড়ি যাওয়া হবে নাকি?”

ড্রাইভার কাকা বললো, ” হ্যাঁ, আমার ছোট ছেলেটার খুব জ্বর| আজ বৃষ্টি হচ্ছেনা, তাই বেরোবো| আর আপনাদের কলকাতা যাওয়ার আগেই ফিরে আসবো|

রুদ্রদা  হাসলো আর ঘরে  রাখা  পুরানো  দিনের  কাঠের  আলমারিটা খুললো, ভিতরে  তেমন  কিছু  ছিলোনা শুধু  একটা  হারমোনিয়াম|

জানতে  পারলাম , মালি না  কি  মাঝে মাঝে  বাজায়| ঘরে  চোখে  পড়ার  মতো  আর  তেমন  কিছু  ছিলো না , তিনটে  বিছানা আর  এইদিক  ওইদিক  করে  রাখা  চার-পাঁচটা  পোটলা  আর  পুরানো টিনের  বাক্স |

আমরা  রুম থেকে  বের  হলাম , ডান দিকে  আছে  পুরানো  দিনের  একটা  লম্বা  ঘড়ি , আর  তার  মাথার  উপর আছে  আমার  মামাদাদুর  বাবার  ছবি| বেশ  গম্ভীর  লোক ছিলেন , পাকানো  গোঁফ, লম্বা চওড়া  চেহারা  ছিলো , শুনেছি  শিকার করতে  খুব  পছন্দ  করতেন | বাঁ দিকে  যে  পিলার  গুলো  আছে সেই  গুলোর  তিন-চারটে  পিলারে দাদুর  বাবার  শিকার  করা  কিছু  পশুর  মুখ  লাগানো  আছে  |

যে  খানে ঘড়িটা  রাখা  আছে , তার পাশের  ঘরটা  আমার   মামার,  যে এখন  আমেরিকায়  থাকে, বছরে  একবার  আসে  যখন  দাদুর  বাড়ি তে  দূর্গা  পুজো হয় | মামা  না  থাকলেও  রুমটা  খোলাই  থাকে আর  আমার  মামা  বাড়িতে  সব  ঘরই  খোলা  থাকে  পরিষ্কার  করার  জন্য | ঘরটা  বেশ  সাজানো  গোছানো , কেও  দেখে  বলবে  না যে  কেও  এখানে  থাকে  না | আমার  মামার  আবার  ছবি  কালেকশনের সখ   তাই  দেয়াল এর  চারি  দিকে  অনেক  রকম  ছবি  লাগানো | দুটো  আলমারি  আছে  ঠিকই  কিন্তু  চাবি  দেওয়া , খোলার  উপায়  নেই |

রুদ্রদাকে বললাম ,”আর  কিছু  দেখবে”|

রুদ্রদা  জানালার  পর্দাটা  সরিয়ে বললো , “তোর  দাদু  কি  নিচে  নামে ?”

আমি বললাম, “না খুব কম, ওই  বিকালের  দিকে  বাগানে পাচারি  করতে গেলে নামে,|”

রুদ্রদা  একটু  ভেবে  নিয়ে  বললো , “নিচে  কিছু  দেখার  নেই  বুঝলি , তোর  দাদু  ওই  জিনিসটা  লোকানোর  জন্য  নিচে  নামবেনা |”

আমি  মামার  খাটে  বসে  বললাম , “দাদু  হয়তো  নামবে  না , কিন্তু  মালি , ড্রাইভার  কাকা , বা  বনমালীদা কে দিয়েতো  লুকিয়ে  রাখতে  পারে |”

রুদ্রদা  পর্দাটা  আবার  আগের  মতো  করে দিয়ে  বললো , “সেটার  চান্স  কম, কারণ  দাদুকে   দেখে  মনে  হয় নিজের  কাজ  নিজে  করতেই  ভালোবাসে |”

আমি  বেড  থেকে  উঠলাম , “হুম, ঠিক  আছে  তাহলে  উপর এর  ঘরগুলো  আর  ছাদের  ঘরটা  দেখি |” মামার  রুমের  পাশে  একটা   বাথরুম , বাথরুমের   পাশে আর  একটা  রুম  যেটা  আপাততো স্টোর রুম | তার  পাস  দিয়ে উপরে  ওঠার  সিঁড়ি  যার  রেলিংটা  কাঠের , আমরা  বেশি  সময়  নষ্ট  না  করে  সিঁড়ি  দিয়ে  উপরে  উঠলাম |”

সিঁড়ি  দিয়ে  উঠে  প্রথমেই  বাঁ দিকে  বাথরুম , তার  পাশেই  একটা  রুম  যেই  রুম টায়  আমার  পিসি  আর মা  থাকতো  বিয়ের  আগে | এখন  রুমটা  পুরানো  আসবাবে  ঠাসা , পুরানো  টেবিল  আলমারি , কাঠের  কারুকার্য  করা  অনেক  রকম  মূর্তি , এই  ঘরটাতে   দাদুর  বাবার  দুটো  বন্ধুক দেয়ালে  টাঙানো  আছে  যে  গুলো  দিয়ে  শিকার  করতো |

ঘরের   ডান কোনে একটা  আরামকেদারা  রাখা , রুদ্রদা  চেয়ারটায় বসে  বললো , “কিছু  থাকার  হলে  এই  ঘরটাতেই থাকবে |”

আমি  রুদ্রদার কাছে  গিয়ে বললাম , “তাহলে চাবিগুলো  কি  নিয়ে  আসবো দাদুর  কাছ  থেকে |”

রুদ্রদা  ভেবে  বললো , “নারে , আমি  সব  রুম গুলো  দেখছি  একটা  মোটামুটি  ধারণা  তৈরী  করার  জন্য , আসল  উত্তরটা  চিরকুটেই  লুকানো |”

“তাহলে  কি  বের  হবে |” আমি  বললাম |

 আমরা রুম থেকে বের হলাম, চার -পাঁচ পা  এগিয়ে  যাওয়ার পর  বাঁদিকে  একটা  টেবিলে, টেবিলের  উপর  রাখা  আছে  গত  প্রায়  একমাসের  খবরের  কাগজ , কিছু  ম্যাগাজিন  আর  একটা  ওয়াটার  ফিল্টার | টেবিলের উল্টোদিকে  একটা একুরিয়াম  , রুদ্রদা  একুরিয়াম  এর  কাছে  গিয়ে  মাছ  গুলোকে  দেখতে  গেলো| আমি  দাদুর  লাইব্রেরি রুমের  দরজার  পর্দাটা  সরিয়ে  দেখলাম , আরাম-কেদাইরায়া  বসে  সিগারেট  খাচ্ছে , আমি দরজায়  টোকা  দিলাম | দাদু  আমাদের  ভিতরে  আস্তে  বললো |

“কি রুদ্রবাবু, ঘর দেখা হলো, কিছু পেলে?”

 রুদ্রদা হেসে বললো “না, এখনো না |”

“এখন বুঝি আমার লাইব্রেরিতে তল্লাশি চালাবে |”

 “ওই আর কি?” আমি মাথা চুলকে বললাম |

দাদুর  লাইব্রেরিটা বই  দিয়ে  সাজানো , মাঝখানে  দাদুর  স্টাডি টেবিলে | দাদু  এখন  ওই  হাল  ফ্যাশন এর  একটা  রোলিং  চেয়ারে  বসে , দাদুর  চেয়ারে  উলটো   দিকে  দুটো  কাঠের  চেয়ার , যেখানে  যারা  দাদুর  সঙ্গে  দেখা  করতে  আসে তারা বসে| টেবিলের  উপর  কটা ডায়েরি , দু  একটা  পুরানো মূর্তি , একটা  পেপারওয়েট  আর পেনদানি | দেওয়ালে  দাদুর  কিছু  ছবি , দাদু  একটা  দুটো  কেসে  সুপ্রিম  কোর্টও  গিয়েছিলো  তার  ছবিও  আছে |

রুদ্রদা  একটা  বুকশেলফের  কাছে  চোখ  বন্ধ  করে  কিছু  একটা  ভাবছে  , আমার  দিকে  ঘুরে  বললো , “চো একটু  রেস্ট  নিই ” আমি  চেয়ার  থেকে  উঠলাম | আমি  আর রুদ্রদা  দাদুর  লাইব্রেরি   রুম  থেকে  বের  হলাম , রুদ্রদা  দাদুর  শোবার  ঘরে  না   ঢুকে  আমাদের  থাকার  ঘর  এর  দিকে  পা  বাড়ালো | আমিও  পিছু  নিলাম |

রুদ্রদা  বিছানার  উপর  বসে  চিরকুটা  বের  করলো , আমি  বললাম , “দাদুর  ঘর  আর  চিলেকোঠা  দেখবে  না?|”

রুদ্রদা সিগারেট জ্বালিয়ে বললো,” যা দেখার দেখে নিয়েছি |”

আমি  উত্তেজিত  হয়ে  বললাম , “তার  মানে  জেনে  গেছো দাদু  জিনিসটা  কোথায় রেখেছে ?”

রুদ্রদা  আমায়  হতাশ  করে  বললো , “নারে , এই  চিরকুটটা  নিয়ে  একটু  ভাবতে  হবে | সব  কিছু  এই  ‘মজার’ মধ্যেই  লুকিয়ে  আছে | আচ্ছা  একটা  কথা  বল ?”

আমি বিছানায়  ধপ  করে  বসে  বললাম , “বোলো ”

“তোর  মামার  বাড়িতে  এমন  কোনো  জায়গা  আছে  যেখানে  তোরা  খুব  মজা  করিস |?”

 আমি  একটু  ভেবে  বললাম , “না  তেমন  তো  কিছু  নেই , মামার  বাড়িতো  পুরোটাই মজা … তবে …”

রুদ্রদা আমায়  থামালো  “তবে  কি ?”

“নিচে  যে  স্টোররুমটা  আছে  সেখানে  আগে  ক্যারাম খেলা  হতো , মামারবাড়ি  আসলেই  ওখানে  ক্যারাম  খেলতাম  পুজোর  সময় |” 

রুদ্রদা  ঘাড় নেড়ে  বললো , “নারে  হিসাব  মিলছে  না , আমি  এখন  একটু  ভাবতে  দে |” রুদ্রদা  চোখ  বন্ধ  করে  ভাবতে  শুরু  করলো , আমি  ঘর  থেকে  বেরিয়ে  আসলাম|

দুপুরে লাঞ্চ  করে  শোয়ার পর  আমি  আর  রুদ্রদাকে  কিছু  জিজ্ঞাসা  করলাম না , আমি  জানি  রুদ্রদা  সমাধানটা    খুঁজে  পেলে  আমায়  ঠিক  জানাবে | আজ  সারাদিন  বৃষ্টি  হয়নি , তাই  ঠিক  করলাম  বিকেলে  একটু   ঘুরে  আসবো | আমাদের  প্ল্যান  অনুযায়ী  ঘুম  থেকে  উঠে  চা  খেয়ে  আমরা  বের  হলাম | মামার  বাড়ির  পাশে  একটা  “শিবতলা”  বলে  জায়গা  আছে  যেখানে  একটা  খেলার মাঠ  আছে ,একটা  দূর্গামন্দির  আর  একটা  শিবমন্দির | আমরা  দুজনে  মিলে শিবমন্দিরে  বসলাম | দেখলাম  জনা  আটেক ছোটো ছোটো  ছেলে  এই  কাদা  মাখা  মাঠে  ফুটবল  খেলছে |

আমি রুদ্রদাকে   জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কখনো কাদা মাঠে ফুটবল খেলেছো?” 

রুদ্রদা বললো, “নারে কখনো খেলা হয়নি, আর  তুই ?”

“আমি  অনেকবার  খেলেছি , কখনোও  ময়দান  কখনো  লেকের  মাঠে ,  প্রচুর  আনন্দ  হয় ?”

রুদ্রদা আমার দিকে একবার  তাকালো , “কি  বললি ?”

“মানে  কাদা  মাঠে  ফুটবল  খেলতে  খুব  মজা  হয় , না  খেললে  বুজবে  না |”

রুদ্রদা  আমার   হাত  ধরলো ,  “এখনই  চল   দাদুর  কাছে |” রুদ্রদা  কাদামাটি  তোয়াক্কা  না  করে আমায় টানতে  লাগলো |

আমি তো  বুজেই  উঠতে  পারলাম  না , পাঁচ মিনিট এর  মধ্যে  আমরা  মামারবাড়ি  এসে  পৌছালাম , ওই  কাদা  পা   নিয়েই  আমরা  দাদুর  ঘরে  ঢুকলাম|

 দাদু আমাদের দেখে কিছুটা অবাক হলো, “তোরা এই অবস্থায়?”

রুদ্রদা বসলো না,   দাঁড়িয়ে  দাঁড়িয়ে বললো , “আমি   ধাঁধার  সমাধান  করতে  পেরেছি|”

আমি তো থো, কি করে? কখন? সমাধান হলো বুজলাম না |

দাদু  হাতে  রাখা  সেই  দিনের  খবরের  কাগজটা  বিছানায়  রেখে  বললো , “তাই না  কি ? তাহলে বলো কোথায়  রাখা  আছে  জিনিসটা |”

রুদ্রদা  বলতে  লাগলো , “একুরিয়ামটা  যে  টেবিলে  রাখা  আছে  সেই  টেবিলে  একটা  ড্রয়ার আছে , সেই  ড্রয়ার  এর  মধ্যেই  জিনিসটা  রাখা  আছে , তবে  জানিনা  জিনিসটা  কি |”

দাদু বললো, “কি ভাবে  বুঝলে ?”

রুদ্রদা  চিরকুটটা  বের  করে একবার  পড়লো , “আপনি  ‘মজার-বাজার’  বলতে  আনন্দবাজার   পেপারের  কথা  বলেছেন  যেটা  আপনি  পড়েন | সিঁড়ি  দিয়ে  উঠে  বাম  দিকে  আনন্দবাজার  পেপার  রাখা  থাকে, তার উল্টো  দিকে,  মানে  ডান  দিকে  ওই  একুরিয়াম  আছে , আমি  সকালে  লক্ষ্য  করেছিলাম  ওটাকে   আর  ওই  টেবিলে যে  একটা  ড্রয়ার  আছে  সেটাও দেখছি | আজ  যখন  বিকালে  আমি  আর অনু  খেলা  দেখতে  গিয়েছিলাম | তখন  ও   “আনন্দ ” এই  শব্দটা  ব্যবহার  করেছিল |  মজা  আর  আনন্দ  দুটোর  মানে  একই   হয় , তখনই বুজলাম  আপনি  আদতে  আনন্দবাজার  পেপার  এর  কথাই   বলেছেন  ওই  চিরকুটে |”

দাদু  হাসলো , “ব্রাভো  রুদ্র, অনু  যাওতো  গিয়ে  নিয়ে আসো|”

আমি  দৌড়ে  গেলাম, ড্রয়ারটা  খুলে  দেখি  একটা  সাদা  খাম  সীল  করা  আছে , আমি   খামটা  নিয়ে  দাদুর  হাতে  দিলাম , দাদু  বললো , “ওটা  রুদ্রর  প্রাপ্প  ওর  হাতে  দাও|”

 রুদ্রদার মুখ  দিয়ে  তখন  খুশির  ঝলখানি বের  হচ্ছে , রুদ্রদা  খামটা  খুললো , খামএর  ভিতরে  আছে, দুটো  পাঁচশো  টাকার  নোট | রুদ্রদা তার   প্রথম  কেস   খুব  সহজ  ভাবেই  সমাধান  করলো , যাকে  বলে  পারফেক্ট  হাতে  খড়ি | !!!

বিষয় মৌলিকত্ব
0
ভাষা সাবলীলতা
0
কৌতূহল উদ্দীপক ঘটনা প্রবাহ
0
শক্তিশালী চরিত্র চিত্রণ
0
অডিও/ভিডিও রূপান্তর যোগ্য
0
Average
 yasr-loader

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ক্রসফায়ার | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | অভীক দাস | Bengali Detective Story | 9F10
Next post অতৃপ্ত প্রেম | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | সুস্মিতা হালদার | Bengali Thriller Story | 9F10