সাদা কালো ডাইরী| বাংলা গোয়েন্দা প্রিমিয়ার লীগ | গৌরব চন্দ্র| Bengali Detective Story
0 (0)

সকাল ৬টা।

শোভাবাজার স্ট্রীট।

এই সকালের নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করে বেজে উঠল শনি মন্দিরের ঘন্টাটা।

সবজিওয়ালা ও মাছওয়ালারা বসে পড়েছে ফুটপাতের ওপর তাদের দোকান নিয়ে। আরও অনেক লোক যাচ্ছে তাদের যার যার দোকান খুলতে, কেউ বা যাচ্ছে কোনও কাজে।

এখন রাস্তায় একটু ভীড় কম আর একটু পরেই ক্রমশ বেড়ে উঠবে লোকজনের সমাগম।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং

হঠাৎ বেজে উঠল টেলিফোনটা।

হ্যালো স্যার, আমি লালবাজার থানার ওসি বলছিলাম।”

– “হ্যাঁ, বলুন প্রিয়তোষ বাবু।”

– “স্যার, আজ সকালে একটা খুন হয়েছে। এবার তার তদন্তের ভার আপনাকে দেওয়া হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি পাঠাচ্ছি আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসুন।”

– “হ্যাঁ, ঠিক আছে।” আমি আসছি বলেই ফোনটা রেখে দিলেন।

– “রুখমিনী, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। আমাদের বেরোতে হবে।”

– “ঠিক আছে, আমি আসছি রেডি হয়ে।”

– “রঘু।”

– “হ্যাঁ বাবু, বলুন।”

– “তাড়াতাড়ি এক কাপ চা বানিয়ে দে তো।”

– “কোথায় যাবেন বাবু এত সকালে।”

– “একটা কাজে যাব।” কথাটা বললেন অমরেশ ব্যানার্জী।

– “একটু পরেই কলিং বেল বেজে উঠল।”

– “রঘু। গিয়ে দেখতো কে এসেছে।”

দরজা খুলেই দেখা গেল সাদা পুলিশ পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছেন এক ইন্সপেক্টর।

– “স্যার, চলুন।”

– “হ্যাঁ চলো রমেশ। রুখমিনী চলে আয়।”

শোভাবাজার স্ট্রিট এর নিস্তব্ধতাকে ভগ্ন করে দ্রুত গতিতে চলে গেল একটা পুলিশ গাড়ি।

– “কী বুঝলে খুনটা আন্দাজ ক’টার সময় হয়েছে রমেশ?”

– “আন্দাজ দু’টো থেকে তিনটের মধ্যে।” কথাটা বললেন, গাড়ির সামনের সিটে বসা পুলিশ ইন্সপেক্টর।

– “প্রথমে কে দেখেছে?”

– “ওদের বাড়িতে।”

কথাটা বলতে বলতেই ওদের গাড়িটা থামল নিমতলা শ্মশানের কাছে একটি পুরনো আমলের বাড়ির সামনে।

এই অমরেশ ব্যানার্জী হচ্ছেন কলকাতা শহরের সেরা ডিটেক্টিভ। তিনি লালবাজার থানার অনেক কেস সলভ করেছেন। এছাড়াও তিনি দেশ বিদেশের অনেক কেসের তদন্ত করেছেন আর রুখমিনী হলেন ওঁর নিজের ভাইয়ের মেয়ে কলকাতা থেকে পড়াশোনা করে। সেও তার জেঠুমনি এর সাথে অনেক কেস সলভ করে। রুখমিনী তার জেঠুমনিকে সবার সামনে ‘স্যার’ বলে ডাকে।

রমেশ বলল, “স্যার ভেতরে চলুন।”

বাড়িতে প্রবেশ করতেই পুরনো বাড়ির এক গন্ধ পাওয়া গেল, কিন্তু সেটাকে সরিয়ে জায়গা নিয়েছে রক্তের গন্ধ।

দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই একজন বলে উঠল, “স্যার ভেতরে আসুন, ইনি হচ্ছেন লালবাজার থানার ওসি প্রিয়তোষ মুখার্জী।”

রুখমিনী বলল,  “খুব নৃশংসভাবে খুন করেছে।”

“তাই এতটা রক্তের গন্ধ।” কথাটা বলেই সে নাকে রুমাল চাপা দিল।

– “কে প্রথম দেখেছে?” কথাটা বললেন, অমরেশ ব্যানার্জী।

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “এদের বাড়ির কাজের চাকর, স্যার।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “তার বয়ান থেকে কিছু জানা গেছে?”

“নাঃ স্যার। সে এখনও খুব ভয় পেয়ে আছে। এখনও কিছু বলেনি।” এই কথাটা বলেই প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “রমেশ তুমি এঁদের পাশের ঘরে নিয়ে যাও।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “রুখমিনী যাও বয়ানটা নিয়ে নাও।”

– “হ্যাঁ স্যার যাচ্ছি।” রুখমিনী রমেশের সাথে পাশের ঘরে চলে গেল।”

একটা চেয়ারে বসে আছে মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা।

রমেশ আর রুখমিনী ভেতরে প্রবেশ করতেই ভদ্রমহিলা চমকে উঠল।

এবার রুখমিনী বলল, “আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করব। তার ঠিক ঠিক উত্তর দেবেন কিন্তু।”

– “শ্যামা, ভয় না পেয়ে সব ঠিক ঠিক উত্তর দাও।” কথাটা বলল রমেশ।

এবার রুখমিনী বলে উঠল, “আপনি কত বছর এই বাড়িতে কাজ করছেন?”

– “দিদিভাই সে বছর দশেক হবে।” ভয় ভয় মুখে বলল শ্যামা।

– “আপনি আজ কাজ করতে কখন এসেছিলেন? এসে কী দেখলেন? বাড়ির ভেতরে আর কাউকে দেখেছেন?”

একটু চুপ করে থাকার পর শ্যামা বলল, “আমি বাবুদের বাড়ি প্রত্যেকদিন ভোর পাঁচটায় কাজে আসতাম।”

– “এত সকালে?” হঠাৎ রুখমিনী  কথাটা বলল।

-”হ্যাঁ, দিদিভাই। ওরা সকালে কাজে যায় তো, আর ছোটোবাবু স্কুলে যায়।”

– “ আজ আমি আসতেই দেখি, দরজা হাট করে খোলা। আমি বৌদিকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকতেই এই সব দেখি। আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম সঙ্গে সঙ্গে থানায় ফোন করি।”

– “ভেতরে আর কাউকে দেখেছ শ্যামা?”

– “না দিদিভাই, ভেতরে আর কাউকে দেখিনি।” হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে শ্যামা বলল।

– “বাবুরা খুব ভালো লোক ছিলেন। তাঁরা কোনওদিনও কারোর ক্ষতি করেননি। কিন্তু এইসব কে করল তাদের সঙ্গে? আমার ছোটবাবুকেও ছাড়ল না।” কথাটা বলেই আবার কেঁদে উঠল শ্যামা।

– “ঠিক আছে। কেঁদো না আমরা ঠিক খুঁজে বার করব কে করেছে এইসব। আজ তুমি বাড়ি যাও। দরকার লাগলে আমরা তোমায় ডেকে নেব।” কথাটা বলে রুখমিনী। রমেশকে বলল, “শ্যামার বাড়ির ঠিকানা আর ফোন নাম্বারটা নিয়ে নাও।”

– “ঠিক আছে আমি সব নিয়ে নিচ্ছি।”

– “অমরেশ স্যার, চাকরের বয়ান নেওয়া কমপ্লিট। সেরকম কিছু পেলাম না। শুধু একটাই কথা জানা গেল এঁরা খুব ভালো লোক ছিলেন।”

– “ওওও। এরা কি কাজ করে, কোনও আত্মীয়স্বজন আছে কিনা খোঁজ নাও প্রিয়তোষ।” কথাটা বলেই অমরেশ ব্যানার্জী লাশ আর ঘরের চারদিকে ঘুরে কিছু পরীক্ষা করতে লাগলেন আর তখন রুখমিনী কে বললেন, “বল তো, এটা খুন নাকি সুইসাইড?”

– “এটা খুন। সুইসাইড হলে কেউ রক্ত দিয়ে দেওয়ালে লিখে রাখতো না, দেওয়ালে লেখা আছে, ‘আমায় একদিন শেষ করেছিলে আজ তোমার পুরো ফ্যামিলকে শেষ করে দিলাম।’ প্রিয়তোষ স্যার, দেওয়ালে যে রক্ত আছে তার স্যাম্পল ল্যাবে পাঠান।”

– “কিন্তু একটা কথা বোঝা যাচ্ছে, অমরেশ স্যার।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “কী?”

খুব নৃশংস ভাবে খুন করেছে। লোকটির হাতটা কেটে দিয়ে মাটিতে ফেলে রেখে দিয়েছে, কিন্তু বাচ্চা ছেলে আর মহিলাটার হাতটা কাটেনি। মহিলাটা আর লোকটাকে কিছু একটা দিয়ে খুব আঘাত করেছে, দিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে সিলিং এ ঝুলিয়ে দিয়েছে। তার মানে কেউ প্রতিশোধ নিয়েছে এটাই মনে হচ্ছে। ঠিক বললাম তো, অমরেশ স্যার?”

– “হ্যাঁ ঠিক বলেছিস, কিন্তু এই ছোট বাচ্চাটার সাথে কিসের শত্রুতা?”

– “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবার খোঁজ নাও কে কী কাজ করতো, কিরকম লোক ছিলেন এঁরা।”

অমরেশবাবু কথাটা বলতে বলতেই দরজা দিয়ে ঢুকলেন প্রিয়তোষ।

– “স্যার, এই লোকটির নাম গৌরব ব্যানার্জী, আর মহিলাটার নাম পায়েল ব্যানার্জী।”

কথাটা শেষ হতে না হতেই রুখমিনী বলে উঠল, “ওই ছোট্ট বাচ্চাটার নাম কী? এদের আত্মীয়স্বজন বলে কেউ নেই?”

প্রিয়তোষ বাবু বললেন – “বুবুন ব্যানার্জী, এঁদের নিজস্ব গার্মেন্টস কোম্পানি আছে নাম ‘বুবুন গার্মেন্টস লিমিটেড’, আর কোম্পানিটা শ্যামবাজারের ওখানে।”

রুখমিনী বলল, “ওঁরা ছেলেকে খুব ভালোবাসতেন, তাই ওর নামে এ কোম্পানির নাম রেখেছিলেন।”

“অমরেশবাবু, খুনটা কিন্তু কিছু চুরি করার জন্য করা হয়নি। রুখমিনী চল। এখন আমরা আসছি।”

তৎক্ষণাৎ প্রিয়তোষ বাবু বলে উঠল, “রমেশ ওদের গাড়ি করে বাড়ি দিয়ে এসো।”

বাইরে বেরোতেই দেখা গেল প্রচুর লোকের ভিড় বেড়েছে তার মধ্যেই কিছুজন বলছেন, “এত ভালো লোকগুলোকে কে বা কারা মারলো? ওরা তো সবার বিপদে পাশে থাকত!”

ঘড়ির কাঁটা তখন সবে ছয়টার ঘরে পৌঁছেছে।

হঠাৎ ঘরে ঢুকে রঘু বলল, “বাবু কী খাবেন?”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “আজ আবার বাঙালির প্রিয় খাবারটা খেলে হয় কিন্তু।”

– “কী খাবার?” বলল রুখমিনী।

– “ভুলে গেছিস? মুড়ি, তেলেভাজা আর সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা। আহ্‌হ্‌হ্‌হ্‌। যাও রঘু তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো” বলল অমরেশ।

– “কী বুঝলি রুখমিনী কে খুনটা করতে পারে?”

– “দেখো, খুন এর মোটিভ চুরি ছিল না সেটা বোঝাই গেল। কিন্তু আর একটা কথা যে খুনটা করেছে তার টার্গেট ছিল গৌরব। আর বাদবাকি দু’জনও যদি কিছু বলে দেয়, তাই তাদেরও রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছে।”

অমরেশ বললেন, “ঠিক বলেছিস। এক কাজ করা যাক কাল সকালে প্রথমে কোম্পানিতে যাওয়া যাক। হয়তো ওখান থেকে কোনও ক্লু পাওয়া যায় যাবে।”

সকাল ৮ টা।

এর মধ্যেই অমরেশ প্রিয়তোষকে ফোন করে গাড়ি পাঠাতে, আর ওঁকে কোম্পানিতে চলে আসতে বললেন।

এর মধ্যেই অমরেশ রুখমিনীকে রেডি হতে বলে দিয়েছে।

কিছুক্ষণ পরেই ওরা দু’জন বেরিয়ে পড়ল গাড়িতে উঠে।

একটা দু’তলা বিশিষ্ট কোম্পানি, সামনেই বসে আছে সিকিউরিটি গার্ড। আজ অফিস ছুটি থাকা সত্ত্বেও সবাই কে অফিসে ডাকা হয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল অনেক লোকের ভিড় আর সামনেই তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তোষবাবু ও রমেশবাবু আর কিছু কনস্টেবল।

তাদের দেখে প্রিয়তোষ এগিয়ে গেল  “স্যার আসুন, এখানে কোম্পানির সবাই উপস্থিত হয়েছে।”

আস্তে আস্তে সবারই বয়ান নেওয়া হয়ে গেল।  “সবার বয়ানে এটাই বোঝা যাচ্ছে গৌরব আর পায়েল সবার খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়াতেন, কারোর টাকার প্রয়োজন হলে টাকা দিতেন, কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন না।” কথাটা বলল রুখমিনী।

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “তাহলে এখান থেকে কিছু খোঁজ পাওয়া গেল না।”

রমেশ বলল, “তাহলে খুনটা কে করেছে স্যার?”

– “হতে পারে অন্য কোম্পানির কোনও লোক অথবা অন্য কেউ।”

– “প্রিয়তোষ বাবু, আপনি গত এক বছরে এই কোম্পানির সাথে যে ক’টা কোম্পানির ডিলিং হয়েছে, পারলে তাদের লিস্ট বানান আর গৌরব ব্যানার্জী এর পি এ কে ডাকুন। তার বয়ান নিতে হবে তো।” কথাটা বলেই অমরেশবাবু কি যেন একটা ভাবতে লাগলেন।

প্রিয়তোষ বাবু বললেন, “সে আর নেই।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “মানে একি বলছেন প্রিয়তোষ বাবু। সেকি পালিয়েছে নাকি?”

– “নাহ স্যার, গৌরব ব্যানার্জীর পি এ ছিলেন ওঁর বউ পায়েল ব্যানার্জী।”

“যাঃ, তাহলে যে অল্প আলো দেখতে পেলাম সেটাও নিভে গেল। শুধু বাকি আছে ওই কোম্পানীগুলো।” কথাটা বলল রুখমিনী।

অমরেশবাবু বললেন “চল রুখমিনী। আর প্রিয়তোষবাবু আপনি কালকের মধ্যেই কোম্পানির লিস্টটা পাঠিয়ে দেবেন।”

“ঠিক আছে স্যার।” কথাটা বলে প্রিয়তোষবাবু তাদের দরজার সামনে পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলেন।

বাইরে বেরিয়ে অমরেশ ব্যানার্জী একটা সিগারেট ধরিয়ে টান দিতে দিতে রুখমিনীকে বলল, “কী বুঝছিস, খুনটা কে করতে পারে?”

“দেখো।” রুখমিনী কথাটা বলতে যাবে তখনই পেছন থেকে ডাক এল, “অমরেশ স্যার। ও স্যার আপনাকে ভেতরে ডাকছে।”

অমরেশ ব্যানার্জী পেছনে ঘুরে বললেন, “তুমি চলো আমরা আসছি।”

সিগারেটটা শেষ করে দু’জন ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রিয়তোষ বাবু বললেন, “স্যার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আর ডিএনএ রিপোর্ট চলে এসেছে। দেওয়ালে যে রক্তটা লেগেছিল সেটা ওই ফ্যামিলির কারোর নয়, ওটা কোনও মহিলার রক্ত আর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এ জানা গেছে খুনটা হয়েছে রাত দু’টো থেকে তিনটে নাগাদ। আর শরীরে যেটা দিয়ে আঘাত করেছে সেটা ভোঁতা কোনও ছুরি দিয়ে। খুনি গ্লাভস আর পায়ে প্লাস্টিক ব্যাগ পরে এসেছিল তাই কোনও ফিঙ্গার প্রিন্ট বা ফুট প্রিন্ট পাওয়া যায়নি।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “আপনি ওদের কাজের মেয়েটার ডিএনএ টেস্ট করান যদি দেওয়ালে লেগে থাকা রক্তটা কাজের মেয়েটার হয়। ঠিক আছে এখন আসছি।”

পরের দিন।

ঘড়িতে তখন সাড়ে ছটা বেজেছে।

কলিং বেলটা বেজে উঠল।

– “রঘু দেখ তো কে এসেছে।”

দরজা খুলতেই ভেতরে প্রবেশ করলেন প্রিয়তোষবাবু।

– “কী বেরোলো ডি এন এ রিপোর্টে?” কথাটা বলল রুখমিনী।

– “রক্তটা কাজের মেয়েটার নয়, অন্য কারোর ছিল।”

প্রিয়তোষবাবুকে থামিয়ে অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “এমন তো হতে পারে রক্তটা মেয়ের কিন্ত খুনটা করেছে কোনও ছেলে।”

রুখমিনী বলল, “হ্যাঁ ঠিক বলেছ, কারণ একটা মেয়ের ক্ষেত্রে খুনগুলো করা খুবই অসম্ভব। একটা মেয়ে এতটা নৃশংস কী করে হতে পারে?” কথাটা বলেই রুখমিনী রঘুকে তিন কাপ চা করতে বলল।

প্রিয়তোষ বাবু বললেন, “এ কোন প্রেম ট্রেম এর ব্যাপার নয় তো?”

রুখমিনী বলল, “আমি এইসব ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি, এসব কিছুই না। গৌরব ব্যানার্জী মারা যাওয়ার পর তিনি একজনকেই ভালোবাসতেন – সেটা হচ্ছে ওঁর স্ত্রী পায়েল ব্যানার্জি।”

এই কথার মাঝেই রঘু চা দিয়ে চলে গেছে।

প্রিয়তোষবাবু চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, “স্যার আপনার অ্যাসিস্টেন্ট তো দারুণ কাজ করছে।”

রুখমিনী একটু মুচকি হেসে বলল, “কার অ্যাসিস্টেন্ট দেখতে হবে তো?”

অমরেশবাবু চায়ে একটা চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে কয়েকটা টান দিতে দিতে বললেন, “কাল সাড়ে আটটার মধ্যে গাড়ি পাঠিয়ে দেবেন। সবকটা কোম্পানিতে গিয়ে কথা বলতে হবে। আপনি সবকটা কোম্পানিতে বলে দিয়েছেন তো?”

প্রিয়তোষ বাবু বলল, “হ্যাঁ, জানিয়ে দিয়েছি আর কাল গাড়ি পাঠিয়ে দেবো। কাল আপনাদের সাথে রমেশ যাবে। আমার একটু কাল থানায় কাজ আছে। আজ উঠি তাহলে। কাল আর দেখা হচ্ছে না।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “আপনি পারলে কাল কিছুক্ষণ এর জন্য যেখানে খুন হয়েছে সেই পাড়ার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এই ফ্যামিলির ব্যাপার জিজ্ঞাসাবাদ করবেন একটু।”

– “ওকে স্যার, আজ আসি।” কথাটা বলেই প্রিয়তোষবাবু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

সকাল ৮টা

হঠাৎ করে টেলিফোন এর রিংটা বেজে উঠল।

“হ্যালো, কে বলছেন?”

“আমি প্রিয়তোষ বলছি।”

“হ্যাঁ স্যার, বলুন।”

“আজ আবার একটা খুন হয়েছে শ্যামবাজারের পাঁচ মাথা মোড়ের কাছেই একটা পুরোনো বাড়িতে।”

“আগের খুনটা এবং এই খুনটা মনে হয় কোনও একজনই করেছে। আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসুন। আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি।”

“ওকে স্যার, আমরা আসছি।”

টেলিফোনটা রেখেই রুখমিনী বলল,  “জেঠুমনি আবার একটা খুন হয়েছে। গাড়ি আসছে আমাদের নিয়ে যেতে।”

“ঠিক আছে রুখমিনী, তুই কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বল আমি এদিকটা দেখছি।”

রুখমিনী রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল।

শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের কাছে গাড়িটা এসে থামল। অমরেশ ব্যানার্জী গাড়ি থেকে নামতে নামতে দেখলেন পাড়ার অনেক লোক ভিড় করেছে সেই ভিড় সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ কনস্টেবলরা।

ভেতরের ঘরে দাঁড়িয়ে আছেন প্রিয়তোষবাবু। অমরেশ ব্যানার্জী ঘরে ঢুকতেই তাকে এক এক করে সব খুলে বললেন।

“স্যার, প্রতিবেশীদের কাছে জানা গেল ওঁর স্ত্রী বাপের বাড়ি গেছেন নিজের অসুস্থ মাকে দেখতে। ওঁদের থেকেই নম্বর নিয়েই ওঁকে ফোন করেই খুব শীঘ্রই বাড়িতে চলে আসতে বলেছি।”

অমরেশ ব্যানার্জী অনেক্ষণ পুরো ঘর ঘুরে দেখে বললেন, “আগের খুনি আর এই খুনের খুনি একজনই কারণ একইরকম ভাবে খুন করেছে। গায়ে আঘাতের দাগ তারপর গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া। শুধু গৌরব এর মত এর হাতটা কেটে দেয়নি। আর একটা জিনিস একটু অন্যরকম আছে।”

প্রিয়তোষবাবু বললেন, “কী স্যার?”

আগেরবার দেওয়ালে লেখা ছিল, “আমায় একদিন শেষ করেছিলে আজ তোমার পুরো ফ্যামিলিকে শেষ করে দিলাম”। আর এই বার দেওয়ালে লেখা আছে, ‘আমায় একদিন শেষ করেছিলে আজ তোমায় শেষ করে দিলাম গল্পের সব অধ্যায় শেষ’। কথাটা বললেন অমরেশবাবু।

প্রিয়তোষবাবু বললেন, “স্যার দেওয়ালে লেগে থাকা রক্তটা কী ডিএনএ টেস্ট এর জন্য পাঠাব?”

“হ্যাঁ পাঠাবে, আর একটা কথা বোঝা গেছে এই লেখাটা পড়ে ‘গল্পের সব অধ্যায় শেষ’ মানে এর পর খুনি আর কোনও খুন করবে না সেটাই মনে হচ্ছে।”

প্রিয়তবাবু বললেন, “আমারও তাই মনে হচ্ছে স্যার।”

কিছুক্ষণ পরে দু’জনেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ঘর থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে টান দিতে দিতে কী যেন ভাবছিলেন।

তক্ষুণি প্রিয়তোষ বাবু বললেন, “ওই তো মনে হয় ওঁর স্ত্রী চলে এসেছেন।”

অমরেশবাবু বললেন, “আপনি ওঁকে ভিতরের ঘরে নিয়ে যান, আমি আসছি ওঁর বয়ানটা নিতে।”

– “ম্যাডাম, আপনি কী রতন দাস এর স্ত্রী প্রিয়া দাস?”

প্রিয়া দাস বললেন, “হ্যাঁ আমিই ওঁর স্ত্রী। ওঁর কি হয়েছে? আর এখানে এত পুলিশ কেন এসেছে? স্যার বলুন না, কী হয়েছে?”

প্রিয়তোষবাবু একটা লেডি কনস্টেবলকে ডেকে প্রিয়া দাসকে ভেতরে নিয়ে যেতে বললেন।

অমরেশবাবু প্রিয়তোষবাবকে জিজ্ঞেস করলেন, “কে প্রথম লাশটা দেখেছে?”

প্রিয়তোষ বাবু বললেন, এঁদের বাড়ির দুধওয়ালা সে দেখেই থানায় খবর দেয়, আমরা কিছুক্ষণ এর মধ্যেই এখানে চলে আসি। আমরা এসে দেখি দুধওয়ালা লোকটি সেন্সলেস হয়ে মেঝেতে পড়ে, মাটিতে অনেকটা দুধও পড়ে ছিল। তক্ষুণি একটা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে লোকটিকে হসপিটালে পাঠাই, হসপিটাল থেকে জানা গেছে তার নাকি নার্ভের রোগ আছে তাই এরকম ভয়ানক জিনিস দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।”

অমরেশ ব্যানার্জী আধ খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বললেন, “আগে ভেতরে চলুন। প্রিয়া দাসের সাথে কথা বলে আমরা দুধওয়ালা এর বয়ানটা নিতে হসপিটালে যাব।

ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

প্রিয়তোষবাবু বললেন, “মনে হয় প্রিয়া দাস কাঁদছেন।”

অমরেশবাবু ঘরে ঢুকতেই দেখেন প্রিয়া দাসকে একটা চেয়ারে বসানো হয়েছে আর পাশে দাড়িয়ে আছে লেডি কনস্টেবলটা।  

– “আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই, প্লিজ ঠিক ঠিক করে উত্তর দেবেন।”

প্রিয়তোষবাবু বললেন, “আমরা জানি আপনার মনের অবস্থা এখন খারাপ তাও আপনার বয়ানটা তো নিতে হবে।”

অমরেশবাবু প্রশ্ন করলেন  “আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? ”

কাঁদো কাঁদো স্বরে প্রিয়া দাস বললেন, “আমি আমার বাপের বাড়ি গিয়েছিলাম গতকাল সকালে। কিছুদিন হল আমার মা অসুস্থ। তাই মাকে মাঝে মাঝে দেখতে যাই।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “আপনার স্বামী কী কাজ করতেন? আপনি কী কাউকে সন্দেহ করেন?”

প্রিয়া দাস বললেন, “উনি একটা বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতেন। এক বছর হল রিটায়ার করেছেন।”

একটু চুপ করে থেকে আবার বললেন, “আমার তো সেরকম কাউকে সন্দেহ হয় না কারণ আমাদের সেরকম আত্মীয়স্বজন নেই। একজনই আছেন, তিনি হচ্ছেন আমার মা আর তিনি অনেকদিন হল অসুস্থ।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “উনি কোন কোম্পানিতে কাজ করতেন?”

প্রিয়া দাস বললেন, “বুবুন গার্মেন্টস লিমিটেড’ নামক একটা কোম্পানিতে।”

“মানে?” হঠাৎ কথাটা বলে উঠলেন প্রিয়তোষ ব্যানার্জী।

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “কোম্পানিটা কোন জায়গায় আপনি কি কিছু জানেন?”

প্রিয়া দাস বললেন, “শ্যামবাজারে।”

“কোম্পানির মালিক কি গৌরব ব্যানার্জী?” কথাটা বললেন, অমরেশবাবু।

প্রিয়া দাস বললেন, “হ্যাঁ, আপনারা কী করে জানলেন?”

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “গত তিন চার দিন আগে ওঁদের ফুল ফ্যামিলিকে খুন করা হয়েছে।”

প্রিয়া দাস বললেন, “কী-ই-ই-ই!” কথাটা বলেই আবার কাঁদতে শুরু করে দিলেন।

অমরেশ বললেন, “চলো প্রিয়তোষ, আর তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেওয়ালে লেগে থাকা রক্তের ডিএনএ টেস্ট করতে পাঠাও। আর বডিটা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এর জন্য পাঠাও।”

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “আজ আসি ম্যাডাম। কোনও দরকার পড়লে আপনাকে ফোন করে নেওয়া হবে।”

কাঁদো কাঁদো স্বরে প্রিয়া দাস বললেন, “হ্যাঁ স্যার।”

প্রিয়তোষ বাবু বললেন, “কনস্টেবল গাড়ি বার করো। এবার আমরা বেরোব, চলুন অমরেশ স্যার।”

গাড়িতে উঠে অমরেশবাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে তাতে টান দিতে দিতে বললেন, “এই দু’টো কেসের মধ্যে কোনও না কোনও সম্বন্ধ আছে হয়তো, কারণ দু’জনেই একই কোম্পানির।”

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “আজ রুখমিনী কোথায় গেছে?”

“রুখমিনী আজ সব কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলতে গেছে।”

পুলিশ এর গাড়িটা এসে থামল আর. জি. কর হসপিটাল এর সামনে। হসপিটাল এর বাইরে দু’টো পুলিশ কনস্টেবল।

অমরেশ ব্যানার্জী আর প্রিয়তোষ মুখার্জিকে দেখে স্যালুট করলো কনস্টেবলগুলো।

প্রিয়তোষবাবু বললেন, “চলুন ভেতরে এই রুমেই আছে।”

রুমের বাইরে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর দাঁড়িয়ে আছে।

প্রিয়তোষবাবু ভেতরে প্রবেশ করে বেড এ শুয়ে থাকা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন আছ রামু?”

“ভালো আছি স্যার।” কথাটা বলেই রামু উঠে বসতে যাচ্ছিল।

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “তোমায় উঠতে হবে না তুমি শুয়েই থাকো। শুধু এই স্যার যা যা প্রশ্ন করছে তার ঠিক করে উত্তর দাও।”

রামু বলল, “ঠিক আছে স্যার।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “রামু তুমি আজ সকালে দুধ দিতে গিয়ে যা যা দেখেছ তা পুরোটা আমায় খুলে বলো।”

“স্যার, প্রত্যেক দিনের মতো আজকেও আমি দুধ দিতে গিয়ে বাবুকে অনেকবার ডাকি। কিন্তু কেউ আসছিল না। তখন নজর পড়ল দরজাটা অল্প একটু খোলা আছে তাই আমি ভেতরে ঢুকলাম বাবুকে ডাকতে ডাকতে। আর ভেতরে ঢুকে দেখি বাবু গলায় দড়ি দিয়েছেন, তারপরেই থানায় ফোন করি আমি। বাবু খুব ভালো লোক ছিলেন কেন এরকম করলেন কে জানে।”

অমরেশবাবু বললেন, “তুমি ভেতরে আর কাউকে দেখেছ রামু?”

“না স্যার ভেতরে কেউ ছিল না।” কথাটা বলেই রামু খাওয়ার জল চাইল।

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “স্যার আমাদের কাছে ফোন আসতেই আমরা কিছুক্ষণ এর মধ্যেই স্পট এ পৌঁছে যাই। গিয়ে দেখি রামু অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।”

– “স্যার আমার মিরগি রোগ আছে চিন্তা করলে বা রক্ত বা এইসব দেখলে স্যার আমি সেন্সলেস হয়ে যাই।”

অমরেশবাবু বললেন, “ঠিক আছে রামু তুমি এখন রেস্ট নাও, দরকার পড়লে আমরা তোমায় ডেকে নেব।”

কথাটা বলার পরেই দু’জনে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

গাড়ি আবার চলতে লাগল রাস্তার সব কিছুকে পেছনে ফেলে।

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “চলুন, আমার বাড়িতে এক কাপ চা খেয়ে যাবেন, এতক্ষণে মনে হয় রুখমিনী কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলে বাড়ি ফিরে এসেছে।”

– “চলুন স্যার।” কথাটা বলে প্রিয়তোষ মুখার্জী কাকে একটা ফোন করে বলল আমার আজ থানায় আসতে একটু দেরি হবে।”

সন্ধে ৬টা।

ঘরের নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করে বেজে উঠল শঙ্খের আওয়াজ।

প্রিয়তোষ বাবু বললেন, “কে শঙ্খ বাজাচ্ছে স্যার?”

অমরেশবাবু বললেন, “সকাল সন্ধে দু বেলাই রুখমিনী ঠাকুর পুজো করে। সেই বাজাচ্ছে। রঘু তিন কাপ চা নিয়ে এসো।”

রঘু রান্নাঘর থেকে বলল, “ঠিক আছে বাবু।”

একটু পরেই রুখমিনী এসে বসল, তক্ষুণি রঘু চা টেবিলে রাখতেই, অমরেশবাবু বললেন, “রঘু তুমি তেলেভাজা বানাও আর সঙ্গে মুড়ি, লঙ্কা নিয়ে আসবে।”

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “এসবের আবার কী দরকার ছিল স্যার।”

রুখমিনী তার উত্তর এ বলল, “সকাল থেকে সেরকম কিছুই খাওয়া হয়নি তাছাড়াও খেতে খেতে কেসটার ব্যাপারেও কথা বলা হয়ে যাবে।”

অমরেশবাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে তাতে টান দেওয়ার পর আবার এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, “প্রিয়তোষবাবু আপনি আপনি দেখবেন কোনও ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায় কিনা।”

প্রিয়তোষ বাবু বলল, “হা স্যার আমি সেটা দেখছি।”

অমরেশ ব্যানার্জী হঠাৎ বললেন, “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে!”

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “কি বললেন, স্যার ঠিক বুঝলাম না? ”

অমরেশবাবু বললেন, “খুনি যখন খুন করেছে সে ঠিকই ধরা পড়বে।”

“রুখমিনী বলল, “কীভাবে খুনটা করা হয়েছে? ”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, আগের খুনগুলোর মতোই খুনটা করা হয়েছে আর দেওয়ালে লেখা ছিল “আমায় একদিন শেষ করেছিলে আজ তোমায় শেষ করে দিলাম গল্পের সব অধ্যায় শেষ”।

রুখমিনী বলল, “মানে খুনির এটাই লাস্ট টার্গেট ছিল আর কাউকে সে খুন করবে না। তাহলে কী কোম্পানিরই কোনও লোক খুনটা করেছে – না কি … ?”

অমরেশ ব্যানার্জী টেবিলে এ রাখা মুড়ি আর তেলেভাজা খেতে খেতে বললেন, “হতেও পারে।”

– “কাল আমি আর রুখমিনী গৌরব ব্যানার্জীর কোম্পানিতে যাব।”

থালায় পড়ে থাকা মুড়িটা খেতে খেতে প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “ঠিক আছে স্যার, আপনাদের জন্য আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবো।”

রুখমিনী বলল, “আজ কোম্পানিগুলোর থেকে একটাই কথা শুনলাম সেটা হচ্ছে, ‘বুবুন গার্মেন্টস লিমিটেড’ কোম্পানির মালিক খুবই ভালো লোক ছিলেন। আমাদের সাথে কোনদিনও খারাপ ব্যবহার করেননি। আর সেরকম কিছুই পেলাম না।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “তার মানে এটাই বোঝা গেল বাইরের কোনও কোম্পানির সাথে তাদের কোনই ঝামেলা নেই। তার মানে কি – ”।

কথাটা থামিয়ে প্রিয়তোষ বাবু বললেন, “তাহলে তার নিজের কোম্পানির লোক খুন করেনি তো?”

রুখমিনী বলল, “সেরকম তো কেউ নেই। কোম্পানির সবাই তাদের মালিকের পরিবারকে খুব ভালোবাসতেন। কেই বা খুনটা করবে?”

অমরেশবাবু বললেন, “কাল কোম্পানিতে গেলে যদি কোনও ক্লু পাওয়া যায়।”

প্রিয়তোষ মুখার্জী চেয়ার থেকে উঠে বললেন, “আজ আসি স্যার। কাল কোম্পানিতে দেখা হচ্ছে”

সকাল নয়টার মধ্যে অমরেশ ব্যানার্জী আর রুখমিনী অফিসে পৌঁছে গেছে।

অমরেশবাবু বললেন, “প্রিয়তোষবাবু আপনি কোম্পানির সবাইকে এখানে ডাকুন।”

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “ঠিক আছে স্যার।”

রুখমিনী বলল, “আপনাদের সবার জন্য একটা দুঃখের খবর আছে। আপনাদের রিটায়ার্ড স্টাফ রতন দাসকে খুন করা হয়েছে।”

সবার মধ্যেই হঠাৎ হতাশার ছায়া দেখা গেল। তারা নিজেদের মধ্যেই বলছে – “প্রথমে আমাদের কোম্পানির মালিকদের, তারপর আবার রতনদা! রতনদা খুব ভালো লোক ছিলেন।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “তোমাদের মধ্যে কার কাছে কোম্পানি স্টাফের লিস্ট আছে?”

হঠাৎ সবার মধ্যে থেকে একটি লোক বলে উঠলেন, “স্যার, আমার কাছে আছে।”

অমরেশবাবু বললেন, “চলো, লিস্টটার একটা কপি দেবে আমায়।”

প্রিন্ট হওয়ার পর অমরেশ ব্যানার্জীর কাছে লোকটি সব কাগজগুলো দিল।

অমরেশবাবু কাগজগুলো দেখতে দেখতে বললেন, “এ তো মাত্র এক বছরের স্টাফ লিস্ট। এর আগের স্টাফ লিস্ট কোথায়?”

লোকটি বলল, “স্যার এক থেকে দেড় বছর আগে কেউ কম্পিউটার থেকে সব স্টাফ লিস্ট ডিলিট করে দিয়েছিল। আমাদের মালিক অনেক খোঁজার চেষ্টা করেও, কে এসব করেছে তাকে খুঁজে পাননি।”

অমরেশবাবু বললেন, “আপনাদের কম্পিউটার ছাড়া আর কোথাও এর কপি থাকে না?”

লোকটি বলল, “না স্যার, আমাদের সব কিছু ডিটেইলস কম্পিউটারেই থাকে।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “এখানে কোম্পানির সবাই উপস্থিত আছে তো? কেউ বাকি নেই তো?”

লোকটি একটু দেখে বলল, “না স্যার, এখানে কোম্পানির সবাই আছে।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “ঠিক আছে তোমাদের দরকার পড়লে আমি ফোন করে নেব আর এই কেস সলভ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন না কোথাও যায়। এখন আসি।”

প্রিয়তোষ মুখার্জী বলল, “চলুন স্যার।”

বাইরে বেরিয়ে অমরেশবাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে টান দিতে দিতে কী যেন বলতে যাচ্ছিলেন, তক্ষুনি পেছন থেকে কে যেন “স্যার, স্যার।” বলে ডাক দিয়ে উঠল।”

“এ তো সেই ভিতরের লোকটা, যে আমাদের লিস্টটা বার করে দিল। আবার কী হল কে জানে!” কথাটা বলল রুখমিনী।

লোকটি এসেই বলল, “স্যার একটা কথা ছিল।”

প্রিয়তোষবাবু বললেন, “হ্যাঁ বলো কী কথা।”

লোকটি বললেন, “স্যার আপনি আমাদের মালিক গৌরব স্যার এর বাড়িতে দেখতে পারেন কোম্পানি স্টাফ এর লিস্ট আছে কিনা।”

অমরেশ ব্যানার্জী বলল, “এই তো তুমি ভেতরে বললে কম্পিউটার ছাড়া এর কোথাও আর কপি নেই।”

লোকটি বলল, “ আমাদের গৌরব স্যার সব সময় নিজের সঙ্গে দু’টো ডাইরী নিয়ে ঘুরতেন তিনি কখনও সেটা হাত ছাড়া করতেন না। হতে পারে আপনারা ডাইরী থেকে কিছু পেতে পারেন স্যার। রতনদা স্যার এর খুব প্রিয় লোক ছিলেন, স্যারের সাথেই সবসময় থাকতেন।”

রুখমিনী বলল, “তুমি যে বললে গৌরব ব্যানার্জী কোম্পানির সবাইকে খুব ভালোবাসতেন তাহলে?”

লোকটি বলল, “হ্যাঁ সে তো ভালোবাসতেন। রতনদাকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন।”

অমরেশবাবু বললেন, “ঠিক আছে এবার তুমি আসতে পারো।”

রুখমিনী বলল, “চলুন প্রিয়তোষ বাবু এক্ষুনি আমাদের একবার গৌরব ব্যানার্জীর বাড়ী সার্চ করতে যেতে হবে।”

প্রিয়তোষ বাবু বলল, “চলুন এবার গাড়িতে উঠুন আপনারা।”

ওদের সেই দুটো ডাইরী বেশিক্ষণ খুঁজতে হয়নি কারণ এটা একটা রুম এর ড্রয়ারেই রাখা ছিল।

রুখমিনী বলল, “সবাই এদিকে আসুন পেয়ে গেছি দু’টো সাদাকালো ডাইরী।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “প্রিয়তোষবাবু আমি কিন্তু এই দুটো ডাইরীকে বাড়ি নিয়ে যাব। রুখমিনী আর একটু খোঁজ, যদি আরো কিছু পাওয়া যায়।”

প্রিয়তোষ মুখার্জী বললেন, “ঠিক আছে স্যার, আমি খুনের জায়গা আবার দেখছি। রুখমিনী তুমি পাশের ঘরটা দেখো।”

অনেক খোঁজার পর একটা ছবি পাওয়া গেল।

রুখমিনী দু’জন কে ডেকে বলল, “এই দেখুন, এখান থেকে একটা ছবি পাওয়া গেছে। এর ওপর গৌরব ব্যানার্জীর কোম্পানির লোগো আর এই ফটোটা দু’হাজার পনেরো সালে তোলা, ডেটটাও লেখা আছে।”

অমরেশ ব্যানার্জী বলল, “এটা নিয়ে নাও। মনে হচ্ছে এটা কোম্পানির কোনও অনুষ্ঠানের ফটো।”

প্রিয়তোষ বাবু বললেন, “আপনি এটাও পারলে নিয়ে যান।”

সন্ধে ৬টা ৩০।

রুখমিনী বলল, “জেঠুমনি চা টা ঠান্ডা হয়ে গেল তো, কী এত ভাবছ।”

অমরেশ ব্যানার্জী সিগারেটে টান দিতে দিতে বললেন, “এই ফটোটার মধ্যে টোটাল পাঁচ জন উপস্থিত ছিল। তার মধ্যে চারজন খুন হয়েছে কিন্তু এই ছেলেটা কে?”

রুখমিনী ডাইরীটা দেখতে দেখতে বলল, “আর শোনো এই ডাইরীটার মধ্যে কোম্পানির সব স্টাফ লিস্ট আছে, ফোন নাম্বার ও বাড়ির ঠিকানা লেখা আছে, আর আর একটিতে গৌরব ব্যানার্জী এর জীবনের কিছু কিছু কথা লেখা আছে। মনে হচ্ছে তিনি খুব ডাইরী লিখতে ভালোবাসতেন।”

ওই ডাইরীটা থেকে আর একটা কথা জানা গেল যে ওঁর বাবা মা সাত বছর আগে মারা গেছেন গাড়ি দুর্ঘটনায়। তার পাঁচ বছর পর বিয়ে, তারপর সন্তান। তারপরেই সন্তানের নাম দিয়ে এই কোম্পানিটা খোলেন।”

অমরেশবাবু বললেন, “কোম্পানির লিস্টের সাথে ডায়রির লিস্টটা মেলা, দেখ একটা অজানা কোনও নাম পাবি রুখমিনী।

রুখমিনী বলল, “পেয়ে গেছি আর একটা নাম হচ্ছে অজয় দাশগুপ্ত। বাড়ি কুমারটুলি পার্কের কাছেই, ফোন নাম্বার 9903……… ”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “এই নাম্বার এ ফোন কর’ত দেখি।”

কিছুক্ষণ পর।

রুখমিনী বলল, “জেঠুমনি দু’তিন বার ফোন করলাম ফোন সুইচ অফ বলছে।”

অমরেশবাবু বললেন, “কিছু বুঝলি?”

রুখমিনী বলল, “তাহলে কী এই লোকটাই খুনটা করেছে?”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “প্রথমে কোম্পানির কম্পিউটার থেকে সব ডেটা ডিলিট। তারপর সব লোক অর্থাৎ কোম্পানির পাঁচ বছর থেকে কাজ করছে কেউই ছেড়ে যায়নি, শুধু ষাট বছর হওয়াতে রতন দাস রিটায়ার করেছেন। কিন্তু এই লোকটি হঠাৎ কোথায় গেল।

রুখমিনী বলল, “আর একটা কথা, অজয় দাসগুপ্তকে কোনও একটা খারাপ কাজের জন্য তাকে কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং।

টেলিফোনের ঘন্টাটা বেজে উঠল।

রুখমিনী সব শুনে কথা শেষ করে ফোনটা রেখে দিয়ে বলল, “রতন দাসের এর খুনে বডিতে যে আঘাতগুলো ছিল সেটা একটা ছুরি দিয়ে করা হয়েছিল। আর এবারে দেওয়ালে যে রক্তটা লেগে ছিল সেটা আগের খুনে দেওয়ালে লেগে থাকা রক্তের ডিএনএর সাথে ম্যাচ হয়ে গেছে।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “কাল একবার ওই লোকটার বাড়ি যেতে হবে। আর এই নাম্বারটায় একবার ফোন কর তো।”

রুখমিনী বলল, “এটা কার নাম্বার জেঠুমনি?”

অমরেশবাবু বললেন, “এটা কোম্পানির সেই লোকটার নম্বর যার সাথে বাইরে আমাদের কথা হল। লোকটার নাম সায়ন দাস।”

– “হ্যালো, আমি রুখমিনী বলছি, আপনি সায়ন দাস বলছেন?”

– “হ্যাঁ ম্যাডাম বলুন?”

– “আপনি কী অজয় দাশগুপ্ত বলে কাউকে চেনেন?”

– “হ্যাঁ ম্যাডাম, এক বছর আগে অজয় দাশগুপ্তকে কোনও এক খারাপ কাজের জন্য অফিস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কী কারণ সেটা জানি না।”

রুখমিনী বলল, “লোকটি বললেন, অজয় দাশগুপ্ত খুব একটা মিশুকে লোক ছিলেন না। তিনি কোম্পানিতে নিজের কাজ ছাড়া কাউকে সেরকম কিছু পাত্তা দিতেন না। আর এক বছর আগে তাকে কোনও কারণে অফিস থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “কী কারণ?”

রুখমিনী বলল, “সেটা কি কারণ কেউ জানে না।”

কিছুক্ষণ পর অমরেশ ব্যানার্জী প্রিয়তোষ মুখার্জীকে ফোন করলেন।

– “হ্যালো প্রিয়তোষবাবু।”

– “হ্যাঁ স্যার বলুন।”

“আজ রাত দশটায় আপনি কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে সিভিল ড্রেসে আমার বাড়িতে চলে আসবেন।”

ওপার দিয়ে প্রিয়তোষ বললেন, “হ্যাঁ স্যার, ঠিক আছে। বলে ফোনটা কেটে দিলেন।”

রুখমিনী বলল, “জেঠুমনি আজ রাতে কোথায় যাব আমরা?”

অমরেশ ব্যানার্জী জ্বালানো সিগারেটে টান দিয়ে বললেন, “অপেক্ষা কর সব জানতে পারবি।”

রাত ১০টা।

প্রিয়তোষ মুখার্জী কিছু কনস্টেবলকে নিয়ে ইতিমধ্যেই উপস্থিত হয়েছেন।

প্রিয়তোষবাবু বললেন, “চলুন স্যার।”

অমরেশবাবু বললেন, “রুখমিনী চলে আয়।”

অমরেশবাবু কী একটা যেন প্রিয়তোষবাবুকে বললেন, কথাটা শুনেই প্রিয়তোষবাবু কনস্টেবলদের কিছু একটা বলে দিলেন।

সবাই গন্তব্যের পথে রওয়ানা হল। বড় রাস্তায় আসার পর যে যার মত একা একা হাঁটতে লাগল।

রাস্তায় কোনও জনমানব নেই, আছে শুধু কয়েকটা কুকুর। এই রাতে যে যার রাজ্য পাহারা দিচ্ছে।

একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে শুধু রুখমিনী, অমরেশ ব্যানার্জী ও প্রিয়তোষ মুখার্জী।

কিছুক্ষণ পর।

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “আমরা এসে গেছি। আপনি ওয়াকি টকিতে সবাইকে বলুন বাড়িটিকে চারদিক দিয়ে এমনভাবে ঘিরে দাঁড়াতে, যাতে কেউ দেখতে না পায়। রুখমিনী আর আপনি একটা কোনও দিকে লুকিয়ে যান।”

এবার অমরেশ ব্যানার্জী দরজার সামনে গিয়ে বেল বাজালেন। দু’ তিন বার বেল বাজানোর পর দরজা খুলে এক কমবয়সী ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন, রাস্তার আলোটা তার মুখে পড়েছে। মুখটা দেখে মনে হচ্ছে অমরেশ ব্যানার্জীকে তিনি চেনেন, তার মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখা দিয়েছে।

অমরেশ ব্যানার্জী কিছু একটা বলতে যাবেন ঠিক সেই মুহূর্তেই লোকটি একটা ছুরি পকেট থেকে বের করে তার দিকে তাক করে তাকে আঘাত করার চেষ্টা করলেন।

কিন্তু লোকটার চেষ্টা বৃথা গেল। অমরেশ ব্যানার্জী সরে গিয়েই তার মুখে এক ঘুসি মারলেন। লোকটা নিজের ভার না সামলাতে পেরে একটু পিছিয়ে গেল। তারপর আবার নিজেকে সামলে নিয়ে আঘাত করতে এল। এবারের চেষ্টাও বৃথা। অমরেশ তাকে এক ধাক্কায় মাটিতে ফেলে দিলেন।

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “অজয় দাশগুপ্ত, তোমার খেলা শেষ।”

প্রিয়তোষবাবু অমরেশ ব্যানার্জীকে বাচাতে যাচ্ছিলেন, রুখমিনী বলল, “আপনাকে যেতে হবে না। এখানে দাঁড়িয়ে ওদের মারপিট দেখুন, কারণ অমরেশ স্যারই জিতবেন। উনি ক্যারাটেতে ব্ল্যাক বেল্ট চ্যাম্পিয়ন।”

ততক্ষনে অজয় দাসগুপ্ত মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে তার শরীরে উঠে দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা নেই।

অমরেশবাবু বললেন, “প্রিয়তোষ একে থানায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করুন।”

ততক্ষনে প্রিয়তোষবাবু থানায় ফোন করে পুলিশ ভ্যান ডেকে নিয়েছেন।

চেয়ারে অজয় দাশগুপ্ত বসে। তার মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে।

অমরেশ ব্যানার্জী দু’টো থাপ্পড় মেরে আবারও জিজ্ঞেস করলেন, “বল এতগুলো খুন কেন করেছিস? আর ওই বাচ্চা ছেলেটা তোর কী ক্ষতি করেছিল যে তুই ওই বাচ্চাটাকেও মেরে দিলি?”

এবার ভাঙা ভাঙা গলায় অজয় দাশগুপ্ত বলতে থাকেন, “এক বছর আগে গৌরব, পায়েল আর রতন আমায় চাকরি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “কী কারণে তোকে তাড়িয়ে দিয়েছিল সেটা বল।”

অজয় দাসগুপ্ত বললেন, “আমার মাইনে ছিল পনেরো হাজার টাকা। প্রথমে আমি খুব খুশি ছিলাম কিন্তু দেড় বছর আগে আমার মায়ের সেকেন্ড স্টেজ ক্যান্সার ধরা পরে। মাকে ডাক্তার দেখাতে আর ওষুধেই মাইনের পুরো টাকাটাই চলে যেত। সেই কারণে আমি কোম্পানি থেকে টাকা সরাতে থাকি। এক বছর আগে গৌরব, পায়েল আর রতন আমার ব্যাপারে সব জেনে যায় এবং খুব অপমান করে আমায় চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেয়।”

– “জানেন আমি গৌরবের হাত কেটেছি কেন? কারণ আমায় চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার দিন আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “কিন্তু তুই বাচ্চাটাকে কেন খুন করলি? আর দেওয়ালের রক্তটা কার ছিল?”

অজয় দাসগুপ্ত বললেন, “বাচ্চাটা তার বাবা মাকে বাচাতে এসেছিল। সেই জন্যই তাকেও পথ থেকে সরিয়ে দিলাম।”

প্রিয়তোষবাবু বললেন, “তুমি কোম্পানি থেকে কিভাবে টাকা সরাতে?”

অজয় দাসগুপ্ত বললেন, “আমি কোম্পানির অ্যাকান্টটেন্ট ছিলাম তাই আমার এই কাজ করতে বেশি অসুবিধা হয়নি। আমি আমার মায়ের প্রতিশোধ নিলাম।”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “অজয় দাসগুপ্ত তুমি কোম্পানির স্টাফ লিস্টটা ডিলিট করে ভুল করেছিলে। আর এতদিন কোম্পানি থেকে কাউকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি তাও তোমায় তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই তোমার ওপর সন্দেহ হয়।”

পরের দিন।

সকাল ৯ টা।

অমরেশ ব্যানার্জী সিগারেটে টান দিতে দিতে বললেন, “একটা কথা বুঝলি রুখমিনী।”

রুখমিনী বলল, “কী জেঠুমনি?”

অমরেশ ব্যানার্জী বললেন, “মেনে নেওয়া আর মনে নেওয়া এই দু’য়ের তফাৎ আছে।” রুখমিনী বলল, “তার মানে অজয় দাসগুপ্ত কথাগুলো না মেনে নিয়ে মনে নিয়ে নিয়েছিলেন।”

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post তন্ময়| বাংলা গোয়েন্দা প্রিমিয়ার লীগ | ফরহিন ইসরাত মেহেরীন| Bengali Detective Story
Next post যে ভিলেন সেই হিরো| বাংলা গোয়েন্দা প্রিমিয়ার লীগ | প্রতিম ভট্টাচার্য| Bengali Detective Story