আদু | প্রেমে পড়া বারণ | মুকুলিকা দাস| Bengali Love Story
0 (0)

আদুর মন বলছিল সায়ন আসবে না অথচ ওর দরকার আজ সবচেয়ে বেশি মা বাবা এসেছে, শ্বশুরমশাই এসেছে, শুধু সায়ন আসলো না বাবাই বাড়িতে মায়ের জন্য অস্থির হয়ে উঠল বুঝি, শাশুড়িমা সামলাতে পারবে তো?

– আসুন, ডক্টর ইজ রেডি

ভেতরে একটা ভয় কাজ করছে আদুর, প্রথম কেমোথেরাপি আজ কেমো নেওয়ার পরে নাকি ভীষণ কষ্ট হয়, গা গুলিয়ে ওঠে, ভীষণ দুর্বল লাগে, উত্তাপে শরীরে জ্বালা শুরু হয়, আশপাশের সবকিছু অসহ্য মনে হয়!

আচ্ছা, সায়নের কি একবারও মনে পড়েনি আদুর কত কষ্ট হবে? ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়বার পর থেকেই সায়ন কেমন বদলে গিয়েছে, অপারেশনের পর আরও আদুর দিকে তাকাতেও যেন সায়নের কষ্ট হয় আচ্ছা, আদুর অপারেশনের জন্যই কি সায়নের এই পরিবর্তন? ওর স্তন-বিহীন, রুগ্ন শরীরকে সায়নের এত ঘেন্না! গত দশ বছরের ভালোবাসা আর সাত বছরের বিয়ের জীবনের পরও শরীরটা এত গুরুত্বপূর্ণ?

হঠাৎ প্রচণ্ড কান্নায় ভেঙে পড়ে আদু, এত অসহায় আগে কখনও মনে হয়নি নিজেকে কেমোথেরাপির উত্তাপেও খাক হয় না তার ভেতরটা, মন তো তার পুড়ছে অবহেলা আর অভিমানের উত্তাপেই!

প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে আদু চারদিন এখানেই থাকতে হবে নিজের ভাঙা চেহারা আয়নায় দেখতে ইচ্ছে হয় না, মাথা হাতড়ে বোঝে তার মেঘবরণ চুলে ভাটা নেমেছে বাবাইয়ের কথা মনে পড়তে থাকে অপারেশনের পর থেকে ছেলেটাকে একটু আদরও করতে পারেনি, আচ্ছা বাবাই ওর বুকে মাথা রাখবে তো? যদি বুক হাতড়ে মায়ের সমতল বুকে স্তনের গরমটা খোঁজে, যদি নাক-মুখ ডুবিয়ে দেওয়ার গভীর খাঁজটা পেতে চায়, যদি মা মা সেই গন্ধটা খোঁজে তখন! বাবাইও কি ওর বাবার মতনমতন মুখ ফিরিয়ে নেবে? বলবে “মাম্মাম তোমার কাছে শোবো না, ভালো লাগে না!”

“এত কি ভাবা হচ্ছে? ব্রেকফাস্ট পড়ে আছে কেন? খাচ্ছেন না যে?”

হঠাৎ একজনের ডাকে সম্বিত ফেরে ইনি কে? আদু তো চেনে না?

“ওহ্ আমাকে তো চেনেনই না আমি এখানকার সাইকিয়াট্রিস্ট এখানকার রোগীদের কাউন্সেলিং করাটাই আমার পেশা

“কিন্তু আপনাকে তো আমি বা আমার ফ্যামিলির কেউ…”

“হুম, জানি আমি নিজ থেকেই এসেছি, এখানকার ক্যান্সার পেশেন্টদের কেমো সেশনের স্টেপে স্টেপে আমি মেন্টাল সাপোর্ট দিয়ে থাকি, বলতে পারেন নিজ উৎসাহেই মানসিক সাপোর্টটা একজন ক্যান্সার পেশেন্টের জন্য ভেরি ইম্পরট্যান্ট

গায়ে পড়া লোক আদুর ভালো লাগে না কোথায় একটু একলা থাকবে তা না…

“ব্রেকফাস্টটা করে নিন, এখানকার ডক্টর কিন্তু খুব কড়া আমি পর্যন্ত বকা খাই আর আপনাকে কিন্তু আমি লক্ষ্য করছি, ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না

হাসি পেল আদুর, এমন আজব ডাক্তার আগে দেখেনি সে ডাক্তার কম, বন্ধু বেশি, বয়সও আন্দাজ সায়নের মতোই

হাতে বিচ্ছিরি জুসের গ্লাসটা তুলেই নিল আদু

বিকেলে কথা হল বাবাইয়ের সাথে, সায়নের সাথে অভিযোগ জানানোর সুযোগটুকুও পেল না, জরুরি মিটিং আছে এটার ওপর সায়নের নাকি প্রমোশন নির্ভর করছে মা ছিল, শাশুড়িমা রাতে এসে নিয়ে গেল এখন আদু একা একাকীত্ব একটা অসুখ, শরীর-মন দুটোই ভেঙে দেয় দুর্বল শরীর নিয়ে আদু জানালার কাছে বসে, বুকে হাত দিয়ে কিছু অনুভব করার চেষ্টা করে অপারেশনের পর থেকে ওর ওই স্বভাব আচ্ছা, আদু কি আর শাড়ি পরতে পারবে? ব্রেস্ট ট্রাসপ্লান্টও তো করা যায়! তাহলে কি সায়ন আগের মতো জড়িয়ে ধরবে ওকে, চুমু খাবে গলায়, পিঠে আদরের দাগ বসাবে?

হঠাৎ রুমে একটা ফোনের আওয়াজে চমকে ওঠে ফোনটা তো নার্স, ডক্টরদের এমারজেন্সিতে ডাকার জন্য, এখন বাজছে কেন? ফোনটা তুলে নেয় আদু

“আদৃতা, ঘুমাননি এখনও?”

কতদিন পর আদৃতা বলে কেউ ডাকল

“আপনার ইনসোমনিয়া আছে নাকি!”

“আপনি কি করে জানলেন?”

“ঘাস খেয়ে কি আর সাইকিয়াট্রিস্ট হয়েছি? অন্য কেউ হলে ফাস্ট কেমো নিয়েই ঘুম আর ঘুম, আর আপনি মহানতা নিয়ে জেগে আছেন!”

“আপনি কে বলুন তো? আমি চিনি না আপনাকে অথচ মনে হচ্ছে কতদিনের চেনা!”

“চেনা হতে ক্ষতি আছে কি!”

আদুর কেমন অদ্ভুত লাগে! কে এই লোকটা, কেন তার খোঁজ নিচ্ছে, মন ভালো করার চেষ্টা করছে!

“একটা কথা বলুন, লেখালেখিটা ছাড়লেন কেন?

চমকে ওঠে আদু! লোকটা জাদু জানে নাকি?”

“আপনার একটা গল্পই পড়েছিলাম, ‘রূপাইয়ের স্বপ্ন’ ভেবেছিলাম আপনি অনেকদূর যাবেন পরে জানতে পারলাম দিব্যি ছেলে-স্বামী নিয়ে ঘর করছেন তা ঘর করলেই বুঝি কলম ছাড়তে হয়!

আদুর হাত-পা কাঁপতে থাকে, এত সব কি করে জানলেন ইনি!”

“দেখুন বেশি ভয় পাবেন না, আপনার সম্বন্ধে আমি সবটা জানি কারণ সায়ন সরকার মানে আপনার কর্তা আমার বাল্যকালের বন্ধু আমি কোলকাতা এসেছি বছর সাতেক হল, আগে ছিলাম আমেরিকা ওখানে সাইকোলজির ওপর বিশেষ কোর্স শেষ করে এখানে আসলাম, আপনাদের বিয়েতেও গিয়েছিলাম তখন আপনাকে দেখে রীতিমতো ঈর্ষান্বিত হয়েছিলাম, সায়নের কপালে এত সুন্দর বউ! আমাকে মনে না থাকাই স্বাভাবিক কারণ পঙ্গপালের মতনমতন সায়নের বন্ধু সংখ্যা সায়নের কাছ থেকে সব শুনলাম আপনার ব্যাপারে মাঝে মাঝেই আমাদের কথা হয় আপনার অতো সুন্দর মুখটা মনে পড়ল, ভাবলাম একবার দেখা করে আসি আর তাছাড়াও ওই হসপিটালে আমার স্পেশাল ভিজিট থাকে তাই সক্কাল সক্কাল আপনাকে বেশ ধমকে দিয়ে এলাম

“সুন্দর মুখ না ছাই!”

এতক্ষণ পর মুখ খুলল আদু

“বিশ্বাস করুন, আপনার চোখটা কিন্তু একই আছে কি গভীর, শান্ত, বেশিক্ষণ তাকিয়ে রইলে…”

“কি তাকিয়ে রইলে…”

“কিছু না রাত অনেক হয়েছে – ঘুমোন এবার

“আপনারও কি ইনসোমনিয়া?”

“আগে ছিল না, এখন হবে!”

ফোনটা কেটে যায় ওপাশ থেকে ওর নাম আদু, আদৃতা রায় এই নামটা আজ মনে পড়ে সাত বছর হল বিয়ে হয়েছে শুধু মিসেস সরকার আর বাবাইয়ের মা নামটাই থেকে গিয়েছে আদৃতা বেডে এসে আস্তে আস্তে শুয়ে পড়ে কানে আসে করতালির আওয়াজ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের গোল্ড মেডেলিস্ট আদৃতা রায় যার মাথায় হাত রেখেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বলেছিলেন কলম থামাবে না সেই মেয়ে বিশ্বভারতী থেকে পি.এইচ.ডি ছেড়ে দিল সংসার করবে বলে!

চোখে জল নিয়েই ঘুমোতে যায় আদু, একলা মেয়েরা রোজ রাতে বুঝি তাই করে!

দু’দিন পর আদু ঘরে ফেরে আজ সায়ন নিতে এসেছিল ইচ্ছে করে ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছিলো আদু, অভিমান ভাঙাক এবার সায়ন কাজ আর কাজ, আদু কি কিছুই না! কিন্তু কই, সায়ন তো ঠিক করে কথাও বলল না ওলাতে যত্ন করে বসিয়ে দিল আদুকে, তারপর থেকে সেই ছাতার ফোনে একটানা কথা বলেই যাচ্ছে মন খারাপটা আরও গাঢ় হয়! চোখ বন্ধ করে বাবাইয়ের কথা ভাবে চারদিন পর বাবাইকে কোলে নেবে, বাবাই একদম আদুর মতনমতন দেখতে চোখদুটো বিশেষ করে… হঠাৎ মনে পড়ে সেই সাইকিয়াট্রিস্টের কথা কি যেন নাম! নামটাই তো জানে না, সায়নকে বলবে কী করে?

“সায়ন, এই শোনো না…”

“হুম বলো

“আচ্ছা আমার চোখটা কি সুন্দর?”

কেমন একটা বাঁকা হাসি হেসে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সায়ন একবার ঘুরে এটাও দেখে না আদুর গাল বেয়ে কতটা অভিমান জল হয়ে নামলো, এত তাচ্ছিল্য!

বাড়ি পৌঁছেই একটা ভয় করতে থাকে আদুর, বাবাই ওকে জড়িয়ে ধরবে তো! শাশুড়িমা বা…

“মাম্মাম…”

“বাবাই আস্তে, মাম্মাম ব্যথা পাবে

আদরে বাবাইকে জড়িয়ে ধরে আদুও, বাবাইও মায়ের গালে গাল ঘষছে মনের সুখে

“জানো মাম্মাম, আমি কত্তো মিস করেছি তোমাকে এই এত্তো!”

“তাই, আমিও খুব মিস করেছি সোনা

“মাম্মাম, আমি অনেক স্কেচ করেছি তোমার জন্য

-”বাবাই, রুমে যাও মা রেস্ট নেবে

“মা, ভালো আছ! শাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে আদু

এক তীব্র দৃষ্টিতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে নেন উনি, তারপর মুখ ফিরিয়ে বলে ওঠেন—

“ভালো থাকার উপায় থাকলে তো থাকব! যাও ঘরে যাও

আবার আদুর শূন্য বুকে ব্যথা জমাট বাঁধে মাথা নিচু করে রুমে যায়

রাতে শুতে যাওয়ার সময় ড্রেসটা চেঞ্জ করে আদু, ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তাকিয়ে নাইটিটা পড়তে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ায় উপরের ফিতে খুলে সেলাইয়ের জায়গাটা ভালো করে দেখে সমতল বুকে গভীর সেলাইয়ের দাগ তার ছোটবেলা থেকে কিশোরী, আর কিশোরী থেকে যুবতী হয়ে ওঠার স্মৃতিচিহ্ন আজ নেই সায়নের কত আদরের দাগ, বাবাইয়ের সদ্য ওঠা দাঁতে কামড়ের দাগ সবই তো নিশ্চিহ্ন! কেউ কি তাকে নারী বলবে? সত্যি, স্তন-যুগল ছাড়া কি কদাকার এ নারী শরীর – ঘেন্নার, লজ্জার, অপমানের – এর চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো ছিল অপারেশন না করলে টিউমারটা যে…

“ওহ, নাইটিটা পড়ে নাও

“সায়ন, একবার তাকাও তুমি তো আগে এভাবেই দেখতে ভালোবাসতে বলো আমি তোমার সেই আদু, আদরের আদু, তাকাও

“আদু, প্লিজ, এসব ভালো লাগছে না কাল আমাকে সকালে বেরোতে হবে, ঘুম পেয়েছে

“এ কদিন তো তুমি খোঁজ নিতেও আসোনি বলো মা বাবা ছিলেন বলেই না, আর আমি তো…”

“আমার কাজ ছিল আদু, কতবার বোঝাবো তোমাকে?”

“কিন্তু আমার কোনও দাম নেই! কত ভয় পেয়েছিলাম জানো…”

“দাম আছে কিন্তু চাকরিটা বাঁচাতে হলে আমায় সেই কাজের গুরুত্ব বেশি দিতে হবে কোনও আইডিয়া আছে, তোমার অপারেশন আর কেমোতে কত খরচ হয়েছে? এসব আসবে কোথা থেকে? তোমার বাবা দেবে?”

“সায়ন!”

“প্লিজ আমার মাথা গরম করিও না আই এম টায়ার্ড

আদু হঠাৎ পাগলের মতন হয়ে যায় অর্ধনগ্ন অবস্থাতেই ছুটে যায় সায়নের দিকে, প্রবল শব্দে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে ওকে

“তোমাকে আর কাজ করতে হবে না গো আমি আর কেমো নেবো না, যা হওয়ার হবে তুমি শুধু আমায় আগের মতনমতন ভালোবাসো না গো! একবার চুমু খাও, আমি আর কিছু চাই না

“মাঝরাতে কি হচ্ছে এসব, ছাড়ো…”

“না, আগে আমায় ভালোবাসো, একটু আদর করো…

একটু…”

“আদু…”

আদুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সায়ন, বিছানায় আছড়ে পরে আদু ওর পুরো শরীর কাঁপছে, এ কি দুঃস্বপ্ন!

“নাইটিটা পড়ে নাও যা শুরু করেছো, আর এক বিছানায় থাকা সম্ভব নয় অসহ্য!”

বাথরুমে চলে যায় সায়ন শকুন্তলার কথা মনে পড়ে আদুর রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে চিনতে পারেনি দুর্বাশা মুনির শাপে – কিন্তু দুষ্মন্তের দেওয়া আংটি দেখে পরে রাজার সব মনে পড়ে ও শকুন্তলাকে মেনে নেয় সায়নকে ও কি দেখাবে যাতে সায়ন ওর আদরের আদুকে চিনতে পারে, তাকে আবার গ্রহণ করে!

সায়নের ফোন বেজে ওঠে আদু নাইটি জড়িয়ে ফোনটা হাতে তুলে নেয়, “দিশা ডার্লিং”! স্ক্রিনে ছবিটা দেখে বুঝতে পারে এ সায়নের অফিসে নতুন জয়েন করা সেই মেয়েটি যার বার্থডে পার্টিতে সায়ন ওকে নিয়ে যায়নি, ও অসুস্থ ছিল বলে

ফোনটা কেটে যায় আদু থম মেরে শুয়ে পড়ে খাটের এককোণে তার বছর পাঁচেকের বাবাইয়ের আঁকা স্কেচ দেখতে থাকে বাবাই কি জানে ওর এই মা-টা মরে গিয়েছে, আর সুন্দর নেই? পোড়া কাঠকয়লার মতো শরীরটা আদুর বোঝা সায়ন এখন অন্য কারো শরীরে সুখ খোঁজে হয়তো, ভরা যৌবন, নিটোল সুগঠিত স্তনে মজে থাকে সায়ন বিয়ের রাতে বলেছিল আদুর স্তন নাকি শঙ্খের মতনমতন, দীর্ঘ আর শুভ্র! এই বুকের ওমেই নাকি ওর আজন্মের বেঁচে থাকা

শরীরহীন ভালোবাসা সবাই বাসতে পারে না, সায়নও পারেনি তাই তীব্র বিষাদে নুয়ে থাকা আদুকে তার চোখে পড়ে না, সে ফোন নিয়ে চলে যায় অন্য ঘরে

সায়ন এটা বুঝল না যে স্তন নামক মাংসপিণ্ডের পরেও থাকে একটাই হৃদয় সেই হৃদয়ের ব্যথা, যন্ত্রণা কান পাতলেই শোনা যায় যদি আদুর দাগ হয়ে যাওয়া বুকে একবার মাথা রাখতো সায়ন, তবে জানত হাহাকারের বাদ্যিতে তা মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে দেবতার যে আসনে সায়ন অধিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই মন্দির ভেঙে চুরে দিয়েছে কালাপানির মতনমতন পরকীয়ার অভিশাপ! মিথ্যে, অসততার আর অপমানের এক একটা আঘাতে তাসের ঘরের মতনমতন তার দশ বছরের ভালোবাসা ভেঙে পড়ে!

একমাস হয়ে গেল সায়ন আর আদু আলাদা ঘুমোয় কেউ কারো সাথে ঠিক করে কথা বলে না বাবাইকে নিয়ে আদু সময় কাটায়, দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টা করে অভিনয়ে তুখোড় হয়ে ওঠা আদু রাতের পর রাত সায়নের ঘরে না ফেরা নিয়ে কিচ্ছু বলে না শাশুড়ির ফিরিস্তিতে হাঁপিয়ে উঠলেও সামলে নেয় শাশুড়ির হা-হুতাশ আর ছেলের জীবন বরবাদের গল্প তার প্রায় মুখস্থ এখন মা-বাবার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু হয় না পুরনো ফোনটা নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই, কে কিনে দেবে? ওষুধ শেষ হলেও সায়নকে আনতে বলে না আর মনে থাকলে আনে, না হলে আনে না বারান্দায় ক্যাকটাস বাদে বাকি গাছগুলো মরতে বসেছে আদু ভাবে ক্যাকটাসের কি শক্ত প্রাণ! জল দেয় না তবুও মরে না, ঠিক আদুর মতনমতন ভালোবাসা ছাড়াও কত মানুষ পাথরের মতনমতন বেঁচে থাকে!

আজ বিকেলে আদুর একটু আনন্দ হয় মা-বাবা দুজনেই এসেছে, দিদির বাড়ি যাবে দিল্লিতে আদু চাইলেও বাবা-মা কে থাকতে বলতে পারবে না সেটা তারাও বোঝেন, তাই কিছু বলেন না বাবা যাওয়ার আগে একটা স্মার্ট-ফোন কিনে দিয়ে গেলেন, আগের স্মার্ট-ফোনের চেয়েও দামী মডেল আদু এতেও মানা করেনি, আজকাল আদু আর আহ্লাদ করে না, রাগ, অভিমান, ঝগড়া কিছুই করে না, শুধু কষ্ট পায় আর বুক ভারী হয়

রাতে ঘুম আসে না আবার আবার একটা গোল থালার মতনমতন পূর্ণিমার চাঁদ “আপনার ইনসোমনিয়া আছে?”

হঠাৎ মনে পড়ে যায় সেই লোকটার কথা, নামটা…

মোবাইলটা বেজে ওঠে এত রাত্রে কে ফোন করল?

“হ্যালো!”

“আদৃতা, আবার ঘুমোননি তো!”

“আপনি!”

“আপনি নিজেও ঘুমোবেন না, আমাকেও ঘুমোতে দেবেন না

“কেন?”

“সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ পড়ছিলাম, আপনার কথা মনে পড়ে গেল

“কেন?”

“আপনিও তো কথা দিয়েছিলেন নিজেকে, কলম থামাবেন না কথা রেখেছেন?”

“কথা তো কেউই রাখে না!”

“আপনি কি তাদের দলে! আপনি কি আলাদা নন?

আদু চুপ হয়ে যায় লোকটার এক একটা কথা এত দাগ কাটে কেন মনে?

“আদৃতা, আপনি লিখবেন আবার রূপাই নামের মেয়েটির হয়ে? আচ্ছা, রূপাই থাকুক, আপনার গল্পটা লিখবেন না? আপনার এই যুদ্ধের প্রতিটা পদক্ষেপের সাক্ষী কি সমাজ থাকবে না?”

“যদি হেরে যাই? হেরে যাওয়া মানুষের গল্প মানুষ কেন শুনবে?”

“ভুল জানেন আপনি, যারা নিজেদের হারিয়ে দেয় তাদের গল্প মানুষ শোনে না যারা যুদ্ধে টিকে থাকে তাদের জেতা হারার চেয়েও লড়াইটাই প্রধান, মানুষকে সেটাই সাহস যোগায়

“কি লাভ বলুন! আমার তো সবই শেষ

“যদি শেষ হওয়ারই হত তবে ফার্স্ট স্টেজে নাও ধরা পড়তে পারতো আপনার ক্যান্সার, আপনি অপারেশন টেবিলেও মারা যেতে পারতেন! ভাগ্য আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছে মানে, আপনার জীবনে আরও কিছু করার আছে, আর সেটা মিথ্যে হতে পারে না!”

“আচ্ছা, আপনি আমাকে নিয়ে এত ভাবছেন কেন? কে আমি আপনার?”

“যদি বলি, আমার বনলতা সেন!”

চুপ হয়ে যায় আদু শরীর জুড়ে এক অসম্ভব ভালোলাগা বয়ে যায় যেন গুমোট ঘরে এক দমকা ঠাণ্ডা বাতাস ছুঁয়ে গেল!

“আপনি তো ডাক্তারের চেয়েও কবি বেশি!”

“তোমার জন্যই হয়তো, ঐ চোখদুটো যে ভুলতে পারি না

আদু কেমন সিক্ত হতে থাকে লজ্জায়, যেন এক কিশোরী সে ফোনটা কেটে দেয়

অনেকদিন পর আদু হাসে, ঠোঁট কামড়ে বালিশ আঁকড়ে ঘুমোতে যায়

আজও তার নাম জানা হয় না!

পরদিন আদু আস্তে আস্তে খুলে বসে তার পুরনোপুরনো উপন্যাস নিয়ে হলদে হয়ে যাওয়া ডায়েরির পাতাগুলো ওলটায় পুরনো সব বইগুলো ছাদের বারান্দায় শুকোতে দেয় বহুদিন পর এত আলো গা ছুঁয়ে যায় আদুর অন্যান্য ফ্ল্যাটের লোকেরা তাকে নিরীক্ষণ করে করুণার নজরে, তারা একে অপরের মুখের দিকে তাকাতে থাকে কিছুতেই আর আজ মন খারাপ হয় না আদুর

সেদিন থেকে আদুর কলম আবার চলতে শুরু করে প্রায় সাত-আট বছর পর অনেক কাটাকুটির পর আদু ভাবে সেই লোকটার কথা, হ্যাঁ তার নিজের জীবনের গল্পই লিখবে আদু, অনেক কথা তার বলার আছে!

এভাবেই কেটে যায় দু-সপ্তাহ

আজ আদুর একটু নার্ভাস লাগছে, লোকটির সাথে দেখা করবে সে গল্পটা যতদূর এগিয়েছে ততোটাই শুনতে চায় ও আদুর মানা শোনেনি কিছুতেই কি পরবে ও? লাল সালোয়ারটা নাকি কমলাটা হঠাৎ তার মনে পড়ে “তুমি কিন্তু শাড়ি পড়ে এসো?”

আদি ক্যাফেতে বসে আছে আদু, অদ্ভুত লাগছে নিজেকে, সমতল বুকের সাথে কি শাড়ি মানায়?

“অনেকক্ষণ বসে?”

“না এই আর কি? আমি কফি অর্ডার করেছি, তুমি নেবে না?”

“না আমি কফি খাই না একটা কথা বলব?”

“কি?”

“অপূর্ব লাগছে তোমায়! টিপটা আরেকটু বড়ো পরলে না কেন? কাজলটা আরেকটু গাঢ় পরলেই তো পারতে…চুলটা খোলো না!”

“পাগল নাকি, আমার চুল তো আর বিদিশার নিশা নয়

“তার চাইতেও বেশি, এই বলে সে চুল খুলে দেয় আদুর

দুরু দুরু বুকে আদু মাথা নিচু করে থাকে ও জানে এসব অন্যায়, ও হয়তো প্রেমে পড়েছে লোকটির বা পড়েনি, শুধু সুখের খোঁজে এভাবে লুকিয়ে দেখা করছে এটা কি অন্যায়?

“কি ভাবছ?”

“কিছু না

“আচ্ছা, তুমি কি আমায় ভালোবাসো?

চুপ হয়ে যায় আদু ও তো নিজেও জানে না!”

“আমি বাসি, আজন্ম ভালোবাসতে পারি তোমায় কিন্তু তোমার থেকে চাইব না ভালোবাসা চেয়ে নিতে নেই, জোরও করতে নেই আচ্ছা, বাদ দাও তোমার উপন্যাসের কতটা এগোল দেখাও এখন

বাড়ি ফিরে আদু অন্যরকম হয়ে যায় অনেকদিন পর বাবাইকে ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে শোনায়, শাশুড়িকে গীতা পাঠ করে শোনায়, মন দিয়ে রান্না করে তারপর বিকেলে বসে যায় উপন্যাস নিয়ে ওর নাম জেনেছে আদু, রুদ্র! ডায়েরির প্রথম পাতায় লেখে – রুদ্রর জন্য

সোশ্যাল মিডিয়ার কোথাও রুদ্র নেই! বারবার বলা সত্ত্বেও ওসবের ধার ঘেঁষে না, ওসব নাকি সম্পর্ক আরও খারাপ করে দেয় তাই ফোনই ভরসা, রোজ রাত একটায় ফোন করে রুদ্র চুপিচুপি কথা বলে আদু, কথায় কথায় রাত বাড়ে, দুটো মানুষ আরও কাছে আসে দু’সপ্তাহ পর একবার করে দেখা হয়

আজকাল সায়নের দিকে তাকানোরও সময় নেই বাবাই আর রুদ্রই ওর জীবনের সব হয়ে উঠছে রোজ ফোনে আদু চোখ বন্ধ করে রুদ্রর ঠোঁটে চুমু আঁকে, গলায় ঘাড়ে রুদ্রর গরম নিশ্বাস অনুভব করে, গলা বেয়ে বুকে পেটে রুদ্রর দামাল-পনা রুদ্র ফোনের ওপারে অস্থির হয়ে ওঠে, উষ্ণ হয় আদুও আজকাল ঠিক ভুলের হিসেব আর কষে না আদু, ও শুধু ভালো থাকতে চায়, ভালোবাসায় থাকতে চায়, আর রুদ্রই সেখানে ওর ভরসা তাই পরকীয়াও আজ আদুর কাছে খুব বৈধ! এভাবেই এক অপার্থিব নেশায় আদু মাতাল হয় দিনের পর দিন

অবশেষে আদৃতা রায়ের উপন্যাস বাজারে আসে এবং একজন ক্যান্সার সারভাইভালের গল্প মুহূর্তে বাজার মাতিয়ে তোলে আদুর কলেজের এক বন্ধু বিখ্যাত প্রকাশক, তার হাত ধরেই আদৃতা রায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সায়ন জানতে পারে অনেক পরে, অনেকদিন পর কথা হয় দু’জনের…

“এত কিছু একা হাতে করলে, আমাকে একবার জানাতে পারতে

“এখন তোমাকে কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করি না

“আচ্ছা, তোমার সেকেন্ড কেমোর দিন তো চলে এল, তখন তো জানাতেই হবে

“না, মিঃ সরকার, এতটা দিন তোমার থেকে আলাদা থাকতে থাকতে এত দূরে চলে গিয়েছি যে কোনও কিছুতেই মনে পড়ে না তোমায় আমি লোন নিয়ে নিজের চিকিৎসা করাবো, একটা স্কুলে চাকরির কথাও এগিয়েছে অনেকটা – আশা করি খুব বেশিদিন আমার মুখও তোমায় দেখতে হবে না

“মানে, ঘর ছেড়ে চলে যাবে নাকি?”

“হুম যাব, যাতে তোমায় কষ্ট করে দিশার সাথে নষ্টামি করতে না হয়

“আদু, মুখ সামলে কথা বলো!”

“নাটক করছ? তোমার মোবাইলে দিশার অসংখ্য নেকেড ছবি, ভিডিও, অডিও ক্লিপ, মেসেজ আমি দেখেছি মেয়েটার জীবন আর নষ্ট কোরো না, আমি সরে যাব তোমার জীবন থেকে, আমার সাথে বাবাইও যাবে

“বাবাই যাবে মানে?”

“তোমার সাথে থাকলে ও নোংরামি শিখবে শুধু যাই হোক তোমার সাথে কথা বলার মতন রুচি আমার নেই এখন যাও, আমাকে একটা গল্প নিয়ে বসতে হবে আর সেকেন্ড কেমোর পর আমি ডিভোর্স নিয়ে কথা বলব!”

“কার জন্য এত সাহস? ফোনে যার সাথে কথা বলো, কিছুদিন পর পর সেজেগুজে বেরোয় তার জন্য?”

“তুমি যখন রাতের পর রাত ফেরো না, আমি কিছু জিজ্ঞেস করি? সো প্লিজ, আমার ব্যাপারে নাক গলিও না – যাও

আজ আদুর অনেক হাল্কা মনে হয় নিজেকে

বেশ ক’দিন পর বেস্টসেলার আদৃতা রায়ের জন্য একটা সভার আয়োজন করা হয়, আজ রুদ্র আসবে, অপেক্ষায় আছে আদু আদুকে নিয়ে মহা সমারোহ, বাবাইকে সবার কি আদর! কিন্তু রুদ্র কোথায়?

“কিরে পাগলি, এত ভালো আয়োজন হল তাও গাল ফুলিয়ে আছিস?”

“যার জন্য আমি এতদূর এলাম দেবাশীষ, সেই যদি আমার সাফল্যটা না দেখতে পায় কেমন লাগে বল?”

“কে?”

“রুদ্র…”

ওর প্রকাশক বন্ধু দেবাশীষকে সব জানায় আদু, প্রথম থেকে শেষ অবধি

“তো ফোন কর!”

“নাম্বারটা পাচ্ছি না তো!”

“কি বলিস, রোজ যার সাথে কথা বলিস তাকে মোবাইলে পাচ্ছিস না!”

দেবাশীষ কল লিস্ট ভালোভাবে চেক করে, রোজ রাত একটায় আদুর কাছে কোনও কল আসেই না!

“তুই কোনোদিন  কল করতিস না!”

“না

“তুই বাবাইকে নিয়ে ঘরে যা আমি দেখছি!”

বাড়ি ফিরে বাবাইকে ঘুম পাড়ায় আদু এক অসম্ভব চিন্তায় আদুর ভেতরটা তোলপাড় হতে থাকে কোথায় গেল রুদ্র?

হঠাৎ দিদির ফোন এল, অনেকদিন পর

“এসব কি শুনছি আদু, রুদ্র কে?”

দিদিকে সব খুলে বলে

“আদু, কালই মা বাবাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি মনে হয় তোর ছোটবেলার রোগটা…”

“কোন রোগ দি?”

“কিছু না

“বল না

“বললে তো বিশ্বাস করবি না ছোটবেলায় আমি যখন শিলিগুড়ি ছেড়ে কার্শিয়ং গেলাম পড়তে তুই ভীষণ একা হয়ে পড়লি, আমার জন্য কাঁদতিস, ঘুমোতিস না রাতের পর রাত তারপর…”

“দিদি, আমি রাখি এখন, পরে কথা বলছি

দেবাশীষের কল আসে

“আদু, আমি তোর কথায় হসপিটালে খোঁজ নিয়েছি, রুদ্র বোস নামে কোনও সাইকিয়াট্রিস্ট সেখানে ভিজিটে আসে না এমন কি তোর বেডের পাশে যে ফোন ছিল তাতে শুধু হসপিটালের কানেকশন নেওয়া, অন্য কোথাও থেকে ফোন আসা পসিবলই না গুগোলেও এমন কোন ডাক্তারের খোঁজ নেই তোর বরকে কিছু না জানিয়েই জিজ্ঞাসা করেছি এ ব্যাপারে, রুদ্র নামে ওর কোনও ছোটবেলার বন্ধু নেই ইভেন যে কফিশপে তোরা দেখা করতিস সেখানকার সিসিটিভিতে তুই একা কফি খাচ্ছিস…হ্যালো আদু রিপ্লাই দিচ্ছিস না কেন?”

“দেবাশীষ, আমি মজা করছিলাম রে তোরা এত সিরিয়াসলি নিবি বুঝিনি, সরি

“পাজি মেয়ে, তুই…”

“পরে বকিস আমি টায়ার্ড – এখন রাখি

আদু চোখ বুজে থাকে ছোটবেলায় ফিরে যায় আদু ওই আবছা চোখে কাকে যেন দেখছে হুম একটা ছেলে ওর বয়সী, কটা চোখ, কোঁকড়া চুলো, লম্বা ছেলেটা ছিল তার খেলার সঙ্গী একদিন ছেলেটার সাথে বৈকুণ্ঠ ফরেস্টে হারিয়ে গিয়েছিল আদু অনেক খুঁজে বাবা-মা তাকে উদ্ধার করে তারপর অনেক ট্রিটমেন্ট হয়েছিল ওর, ছেলেটাকে আর খুঁজে পায়নি আদু অথচ তার রাজা-রানি খেলা, কানামাছি, ছোঁয়াছুঁয়ি সব ওর সাথে ছেলেটা ওকে ঘুড়ি ওড়ানো শিখিয়েছিল, দাবা খেলা শিখিয়েছিল, হঠাৎ মিলিয়ে গেল! ডাক্তাররা বলেছিল “স্কিটজোফ্রেনিয়া” ডিজিজ, এক একটা অদ্ভুত মানুষ নিজের মনের মতো কাল্পনিক চরিত্রকে বাস্তব জীবনে দেখতে পায় সেই ছেলেটাকে নিয়েই লিখেছিল ‘রূপাইয়ের স্বপ্ন’ গল্পটা আজ বুঝতে পারে কেন রুদ্রকে তার এত চেনা মনে হত, সেই কটা চোখ, সেই কোঁকড়া-চুলো লম্বা ছেলেটা আদুর সাথেই বড়ো হয়ে গিয়েছে

আদু রুদ্রকে আর হারাতে চায় না, এই জীবনটাকে হারাতে চায় না কাল্পনিক চরিত্রকেই সঁপে দিতে চায় বাকি জীবন, কেউ জানবে না, বুঝবে না রুদ্র শুধু আদুর হয়েই থাকবে, শুধু আদুর

হঠাৎ মোবাইল বেজে ওঠে, আদু আজ বুঝতে পারে ওটা অ্যালার্মের আওয়াজ, তবু ফোনটা ধরে

“হ্যালো…আদৃতা আমি রুদ্র…”

“হুম, বলো

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post সেই রাতে| প্রেমে পড়া বারণ | দেবলীনা দে| Bengali Love Story
Next post যারা ভালো বাসেনি | প্রেমে পড়া বারণ | পিনাকী চক্রবর্তী| Bengali Love Story