Getting your Trinity Audio player ready...
|
অতনু রায় পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। সে এখন বিদেশের একজন নামি ইঞ্জিনিয়ার। তার ঠিকানা এখন সবচেয়ে বিলাসবহুল জায়গায়। সে তার মেয়ে মুরীকে অভিশপ্ত ভেবে সেই যে চলে গিয়েছিল আর ফেরেনি। অতনুর বিশ্বাস মুরীর জন্য সুমনা তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। সে শুধু বাবা হওয়ার দায়িত্বটুকু পালন করা ছাড়া মেয়ের কোনও ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয় না। অতনুর একমাত্র বোন রুমিই মুরীর দেখাশোনা করে এবং তাকে বড় করে তুলেছে। মুরীর এখন বয়স সাত বছর। অতনু তাকে শেষ যখন দেখেছিল তখন মুরী ঠিক মতন দাঁড়াতেও পারত না। কিন্তু এখন সে পিসির সাথে হাঁটে এবং মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। স্কুল থেকে এসে পিসির কাছে গল্প শোনে। কিন্তু তার শিশুমনে একটা প্রশ্নচিহ্ন তাকে কুড়ে কুড়ে খেতে শুরু করল। সকল বন্ধুদের বাবা আছে মা আছে, ওর নেই কেন? তারা কোথায়, তারা কি ওকে ভালোবাসে না? মুরীর মনের প্রশ্নের উত্তর হয়ত একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই দিতে পারবেন। রুমি পিসি তাকে গল্প শুনিয়ে ভোলানোর শত চেষ্টা করলেও তার ছোট্ট মনে এখনও সেই খোঁজ চলেছে কোথায় তার বাবা আর কোথায় বা তার মা! অতনু যাকে ভালবেসেছিল তাকেই বিয়ে করেছিল। সুমনা অতনুর শুধুমাত্র প্রেমিকা ছিল না, সে অতনুর সবকিছু ছিল। অতনুও সুমনাকে ভীষণ ভালবাসত। অতনু যখন জীবনের কঠিন পরীক্ষায় হেরে গিয়ে সুইসাইড করার জন্য মনস্থির করে নিয়েছিল ঠিক সেই সময় তার জীবনে সুমনা একজন পরী হয়ে উদয় হয়ে তার জীবনকে আলোকিত করে তুলেছিল। সুমনার কিছু হলে সে পাগল হয়ে যেত। সুমনা ছিল অনাথ কিন্তু সে অতনুর জীবনকে অনাথ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে তাকে ভালোবাসার সুখে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। আজও অতনু তাকে ভুলতে পারিনি। সুমনা অতনুর জীবন থেকে চলে গেছে আজ প্রায় সাত বছর হতে চলল।
[ফ্ল্যাশব্যাক]
সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল সারাদিন। আবহাওয়া খারাপ থাকায় রাস্তায় গাড়ি পাওয়াটা খুবই দুষ্কর হয়ে উঠেছিল। সুমনা মা হতে চলেছে। অতনুর জীবনে আরও এক নতুন পর্যায় শুরু হতে চলেছে। সে বাবা হওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। সুমনার ননদ রুমি তার বৌদিকে খুবই ভালোবাসতো। সে দাদাকে বৌদির শরীর-স্বাস্থ্যের খবরাখবর পাঠাত। অতনু ছুটি নিয়ে কলকাতায় আসছে। সে ট্রেনে বসে ভিডিও চ্যাট করছে নিজের প্রেমিকা কাম স্ত্রী কাম পরী – সুমনার সাথে “শোন একদম ভয় পেও না আমি আসছি আর ঘন্টাখানেকের মধ্যে। তোমার কাছে চলে আসব, লাভ ইউ আর নিজের খেয়াল রেখো, রুমি আছে তো পাশে, আমি আসছি”। রুমি বৌদির যন্ত্রণাটা উপলব্ধি করতে পারছিল। সে একটি ক্যাব বুকও করে দিয়েছে। ফোন করেছিল ড্রাইভার, জানিয়েছে রাস্তায় জল জমে ওয়াটারলগড হয়ে গেছে। এদিকে সুমনার প্রসব ব্যথা বেড়ে গেছে। রুমি একা বাইরে বেরিয়ে পড়ে গাড়ির ব্যবস্থা করতে। প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। রুমির ছাতা ভেঙে উড়িয়ে নিয়ে যায় আর সে ভিজে কাক হয়ে এদিক সেদিক দেখতে থাকে কোনও ট্যাক্সি কিংবা ক্যাব পাওয়া যায় কি না। তার চোখে যেমন বৌদির জন্য দুশ্চিন্তা তেমন দাদার জন্য ও তার ভাবনা ফুটে উঠেছে। অনেক ঘুরে শেষে একটি এ্যাম্বুলেন্সকে তার দিকে আসতে দেখে। রুমি এ্যাম্বুলেন্সের কাছে যায় এবং বেপরোয়া ভাবে সে তাদেরকে তাকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করে “দাদা, আমার বৌদি প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, দয়া করে একটি নার্সিংহোম অবধি পৌঁছে দেবেন খুব উপকার হয়, প্লিজ।” এ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া সঠিকভাবে রুমির জানা ছিল না তাই পাঁচ হাজার টাকা দিতেও সে রাজি হয়ে গেল। এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সে বাড়ি পৌঁছল। বাড়ির ভিতর ঢুকে বৌদির ঘরে যেতেই রুমির হৃৎপিণ্ড ভয় আর চাপা টেনশনে ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তার বৌদি মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। কোনও হুঁস নেই তার। রুমি চিৎকার করতেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এ্যাম্বুলেন্সের ভিতর বসে থাকা লোকজন রুমির কাছে ছুটে যায়। বৌদির দেহকে স্ট্রেচারে তোলা হয়। অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়। বৌদির হাতে ধরে থাকা মোবাইলে রুমির দাদার কল ঢোকে। রুমি কলটা ধরল, “হ্যাঁ দাদা বল, না এই তো বৌদিকে নিয়ে এবার বেরোচ্ছি, তুই সোজা নার্সিংহোমে চলে আয় আমরা ওখানেই যাচ্ছি, না রে বৌদি কথা বলার অবস্থায় নেই, শোন আমি রাখছি। তুই নেমে গেছিস হাওড়া স্টেশনে, আচ্ছা আচ্ছা চলে আয়, না না চিন্তা করার কোনও দরকার নেই, আমি আছি তো।” রুমি ফোনটা কেটে দেয়। কিন্তু অতনুর মনের গভীরে একটা অদৃশ্য আশঙ্কা উঁকি দিতে শুরু করল। এ্যাম্বুলেন্স জমাট জল পেরিয়ে ছুটে চলেছে নার্সিংহোমের দিকে। রুমি বৌদির হাতের তালুতে নিজের তালুর ঘর্ষণে উত্তাপ দিয়ে চলেছে। অনেক ঘুরে ঘুরে যেতে তাদের আধঘণ্টার রাস্তা পৌঁছতে লেগে গেল প্রায় দেড় ঘণ্টার কাছাকাছি। কারণ রাস্তায় রাস্তায় জল আর গাছ পড়ে থাকায় এ্যাম্বুলেন্স অসুবিধায় পড়ে। যাই হোক নার্সিংহোমে ঢুকে এমারজেন্সিতে নিয়ে যেতেই উপস্থিত ডাক্তাররা সুমনার কন্ডিশন বুঝে তাকে অপারাশেন থিয়েটারে নিয়ে গেল। অপারেশন থিয়েটারের লাল আলো জ্বলতেই রুমি মনে মনে হালকা আঁতকে উঠল। অতনু একটি ক্যাব করে নার্সিংহোম পৌঁছে গেল। সে রুমির সাথে যোগাযোগ করে তার কাছে গেল। রুমির মুখে টেনশন আর ভয় দেখে অতনুও একটু ভয় পেল। দুজনে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষা করল। ঘন্টাখানেক পর লাল লাইটটা অফ হল। একজন ডাক্তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন। অতনু ডাক্তারকে দেখেই ছুটে তার কাছে গেল। ডাক্তার অতনুকে দেখে তার অবস্থা বুঝে তাকে প্রথমে খুশির খবরটা দিলেন। কিন্তু অতনুর মনে যে আশঙ্কারা বৃহৎ আকার নিয়ে তার মনের ওপর প্রভাব করতে শুরু করেছিল তারা অন্য কিছু ইঙ্গিত করল। ডাক্তার নিরাশ হয়ে অতনুর থেকে দু’পা বাড়াতেই “প্লিজ এটা তো বলুন সুমনা কি রকম আছে, ও কি সুস্থ আছে না কি কোন কমপ্লিকেশন?” ডাক্তার তার নিরাশ চোখে অতনুর দিকে তাকাল “সরি মিঃ জানা, আপনার স্ত্রীকে অনেক চেষ্টা করেও…” ডাক্তার কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারল না তার আগেই অতনু ভেঙে পড়ল। রুমি চোখে জল নিয়ে দাদার কাছে গেল। অতনু টের পেল তার আশঙ্কারা আনন্দ করছে তার মনের গভীরে। ডাক্তার সেখান থেকে চলে গেল। সুমনার নিথর দেহ স্ট্রেচারে করে আনা হল। অন্য এক লেডি ডাক্তার অতনুকে দেখে জানাল “প্রচণ্ড ব্লিডিং হওয়ায় হার্ট ফেল করে, সরি আমাদের কিছু করার ছিল না।” আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড ইওর লস বাট ডেস্টিনি-কে কে বদলাতে পারে বলুন। নিজেকে সামলান কারণ সুমনার কন্যা সন্তান তো সুমনারই আর এক রূপ, ও তো আপনার কাছেই ফিরে এসেছে তাই না।” ডাক্তার রুমিকে ইশারা করে সামলানোর কথা বলে চলে যান। অতনু সুমনার নিথর ঠাণ্ডা দেহের পাশে দাঁড়িয়ে লাল হয়ে আসা চোখে তাকে দেখে যাচ্ছে। একজন নার্স সুমনার বডিকে নিয়ে চলে যায়। অতনুর বুকে জমে থাকা চাপা কান্নার গুঞ্জনে গোটা নার্সিংহোম কেঁপে ওঠে। সমস্ত অফিশিয়াল ফরম্যালিটি সম্পূর্ণ করে অতনু সুমনাকে নিয়ে বাড়ি ফিরল, তার সাথে সুমনার ছায়া ছোট্ট কন্যা রুমির কোলে বাড়ি এল। সুমনার দেহকে সুন্দর করে সাজিয়ে বৌয়ের বেশে শ্মশানে নিয়ে আসা হল। অতনু কিছুতেই মানতে রাজি হতে পারল না যে সুমনা আর নেই। আর তার সেই হাসি মুখ অতনুকে সব দুশ্চিন্তা ও মানসিক অবসাদ থেকে ভুলিয়ে রাখতে পারবে না। ও এখন শান্তিতে ঘুমিয়ে রয়েছে। অতনু সুমনাকে চিতায় তোলার আগে শেষ বার মন ভরে তাকে দেখল। রুমি ছোট্ট মুরীকে নিয়ে দাদার পাশে দাঁড়িয়ে বৌদিকে চিরকালের জন্য শেষ বিদায় জানাল। আগুন ধরানো হল। সুমনার নশ্বর দেহ পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ে গেল আকাশ সীমায়। অতনু স্থির চোখে তাকিয়ে থাকল আকাশপানে যেখানে তার মনের মণিহার মিশে যাচ্ছে মেঘের সাথে। অতনু সুমনার স্মৃতিকে বুকে নিয়ে আর ফিরবে না, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রুমির কাছে নিজের মেয়ের দায়িত্ব চাপিয়ে উড়ে গেল বিদেশে।
[বর্তমান]
মুরীর মনের অবস্থা দেখে রুমি একদিন তাকে সত্যি ঘটনাটা জানিয়ে দিল। মুরী পিসির কথায় এটা বিশ্বাস করে নিল যে তার মা মুরীর জন্যই আজ অনেক দূরে চলে গেছে। এবং তার বাবা তাকে এই কারণে ঘৃণা করে। তাকে ভালোবাসে না। রুমির বলা সত্যিটা মুরীর শিশুমনে দারুণ প্রভাব ফেলল। স্কুল থেকে আজকাল মুরীকে নিয়ে দিদিমণিরা লাগাতার কমপ্লেন পাঠানো শুরু করল। রুমি জানতে পারে মুরী ক্লাসের মধ্যে খুব অমনোযোগী। একদিন তো একজন টিচার তাকে ডেকে জানাল, “দেখুন মুরী একদমই মনোযোগ দিচ্ছে না, সারাক্ষণ জানালার বাইরে তাকিয়ে কী সব বিড় বিড় করতে থাকে, আপনি কোনও ভাল সাইকিয়াট্রিস্টকে দেখান।” রুমি দাদার মেয়ের হাবভাব স্বভাব চিঠিতে লিখে দাদাকে পাঠাল, কিন্তু চিঠির কোন উত্তর রুমি পেল না। রুমি লক্ষ্য করল মুরী দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। তার মনের ভিতর যেন কিসের একটা খোঁজ চলছে। রুমি সিদ্ধান্ত নিল যে এ বিষয়ে সে মুরীর সাথে কথা বলবে। পিপির কাছে গল্প শুনতে সে ছোট থেকেই ভালবাসে। একদিন রাতে মুরীকে রুমি একটি গল্প শোনাল, একজন বাঁশিওয়ালার। যিনি তার বাঁশির সুরে আচ্ছন্ন করে শহর থেকে দুষ্টু ইঁদুরদের উপদ্রবকে শান্ত করে তাদেরকে মোহিত করে ভুলিয়ে শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে গোটা শহরবাসীকে একদিন সেই শয়তান ইঁদুরদের কবল থেকে বাঁচিয়েছিল। গল্প শুনতে শুনতে মুরীর শিশুমনে সেই রকমই এক বাঁশিওয়ালার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠল। যিনি মুরীর মুশকিল আসান। সে ধীরে ধীরে মানুষিক দিক থেকে এটাই কল্পনা করে নিল যে অন্যান্য সুপার হিউম্যানদের মতনই সেই বাঁশিওয়ালাই পারবে তার সাথে তার বাবার মিল করিয়ে দিতে। এবং সেই ভাবনার বংশ বিস্তার এত প্রচণ্ড ভাবে বাড়ল যে মুরী hallucination-র ম্যাজিকে জড়িয়ে পড়ল। কল্পনার মধ্যে সে তার মা আর বাবাকে আবার মিলিয়ে দেওয়ার ছবি আঁকতে শুরু করল এবং মনে মনে আনন্দ উপলব্ধি করাও শুরু করল। এদিকে প্রায়শই সে অসুস্থ হতে থাকল। রুমি তার দাদাকে অনেকবার সে সব কথা জানালেও কোনও লাভ হয়নি। স্কুলের মধ্যে খেলতে খেলতে সে সেন্সলেস হতে থাকে এবং ক্লাস টিচাররা সেটা নোটিশ করে সে কথা রুমিকে জানায়। মুরীকে নিয়ে রুমির দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেল। সে একজন ভাল সাইকিয়াট্রিস্ট- এর সাথে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করল মুরীকে দেখানোর জন্য। সাইকিয়াট্রিস্ট রুমিকে কিছু সাজেশন দিল এবং কিছু ঔষধ দিল। মুরীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘড়ির কাঁটার মত ছুটে চলল। একদিন শরীর খারাপের জন্য সে স্কুল থেকে তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে আসল। রুমি মুরীকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে রুমির কথার উত্তর না দিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে যায় এবং রাতের বেলায় পিপির কাছে শুয়ে সে তার মায়ের কথা শোনার জন্য বায়না ধরল। পিপি বাধ্য হয়ে তার বৌদির কথা বলতে শুরু করে। এবং মুরী গল্প শুনতে শুনতে কাঁদতে শুরু করল। কাঁদতে কাঁদতে সে পিপির কোলের কাছে মাথা গুঁজে শুয়ে পড়ল। মাঝরাতে তার প্রচণ্ড জ্বর আসল। রুমি সারারাত মুরীর সেবা করে গেল। জ্বরের ঘোরে রুমি শুনল মুরীর মনের কথা। সে স্কুল থেকে ফেরার সময় রোজ সেই বাঁশিওয়ালাকে খুঁজত। একদিন নাকি তার দেখাও সে পেয়েছিল, কিন্তু মুরীর সাথে হ্যান্ডশেক করেনি তাতে মুরীর রাগও হয়। আরও একদিন সেই বাঁশিওয়ালার সাথে তার দেখা হয় এবং মুরী তাকে তার দুখের কথা শোনায়। মুরীর দুখের কথা শুনে বাঁশিওয়ালা মুরীর ওপর হাসতে শুরু করল। মুরী তার কাছে যেতেই, সে মুরীর সামনে থেকে মিলিয়ে গেল। সারারাত ধরে সে মনের মধ্যে জমে থাকা কথা বিড়বিড় করল। পরেরদিন সকালবেলায় মুরীকে একজন ডাক্তার দেখতে এল। ডাক্তার মুরীর শারীরিক অবস্থা ঠিক নেই জানিয়ে কয়েকটি মেডিসিন দিয়ে নজরে নজরে থাকার পরামর্শ দিয়ে চলে গেল। রুমি সঙ্গে সঙ্গে অতনুকে খুব শীঘ্রই আসার জন্য চিঠি লিখে পাঠাল। সেই দিন রাতে ফের জ্বর এল। এবং মুরী সেন্সলেস হয়ে পড়ল। রুমি সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারে না। সারাক্ষণ মুরীর মাথার পাশে জেগে থাকল। এবং সকাল হতেই রুমি ডাক্তারকে ফোন করল। ডাক্তার আবার এল। ডাক্তার মুরীর নাড়ি চেক করে রুমিকে জানাল, “ওর আপনি ছাড়া আর আপনজন বলতে কে আছে? এক্ষুণি ডেকে পাঠান। পেশেন্টের অবস্থা খুব ক্রিটিকাল আজ রাত অবধি টে…” ডাক্তার কথা শেষ করতে পারল না, রুমি ডাক্তারের হাত পা জড়িয়ে ধরল “প্লিজ ডাক্তারবাবু আমার মুরীকে বাঁচিয়ে দিন, প্লিজ ও ছাড়া আর কেউ নেই আমার, একটু দেখুন প্লিজজজ।” ডাক্তার নিরুপায় হয়ে মুরীকে নার্সিংহোমে অ্যাডমিট করার উপদেশ দিয়ে চলে গেলেন। অতনু রুমির শেষ চিঠি পেল। মুরী যে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সেটা জেনে সে তার কুসংস্কার ও অবিশ্বাস মনকে দোষারোপ করল। এবং নিজের ভুল বুঝতে পেরে মেয়েকে দেখার জন্য দেশে পাড়ি দিল। রুমি মুরীকে নিয়ে সেই নার্সিংহোমে ছুটে গেল। মুরীকে এমারজেন্সিতে নিয়ে ডাক্তাররা চেকআপ করা শুরু করল। মুরীর পাল্স রেট খুব ধীরে ধীরে চলছে। রুমি বাইরে পাগলের মতন অবস্থায় এদিক ওদিক করছে। সে দাদার প্রতি তার ঘৃণার ভাবনাকে আরও বেশি করে সজীব করল। রুমি অতনুকে এর জন্য চিরকাল ক্ষমা না করার সিদ্ধান্ত নিল। এসব ভুলভাল ভাবনা চিন্তার মাঝে অতনুর কল ঢোকে রুমির ফোনে “রুমি তুই চিন্তা করিস না আমার মেয়ের কিচ্ছু হবে না আমি চলে আসব আজ বিকেলের মধ্যে, তুই ঘাবড়াস না আমি আসছি।” রুমি অতনুকে শুধু বলল “তাড়াতাড়ি আয় দাদা, না হলে তোর আসার আগেই মুরী বৌদির কাছে পৌঁছে যাবে।” অতনু নিজের প্রাইভেট জেটের মধ্যে সিটে বসে কাঁদতে থাকল। মুরীর মুখে অক্সিজেনের নল টিউব। সে ঘুমের মধ্যে সেই বাঁশি-ওয়ালার হাত ধরে ফেলেছে। বাঁশি-ওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে অজানা সীমান্তে। চারিদিক ধু ধু করছে একরাশ ধূসরতা। মুরীর মুখে হাসি। সে তার মা কে দেখতে পেয়েছে। বাঁশি-ওয়ালা নিয়ে এসেছে তার মা কে তার কাছে। মুরী তার বাবাকে খুঁজছে। কই কোথায়, কোথায় তার বাবা, না বাবা আসেনি তাকে নিয়ে যেতে। বাঁশি-ওয়ালা নিজের বাঁশির সুর তুলল। মুরী ধীরে ধীরে বাঁশি-ওয়ালার সাথে এগিয়ে চলেছে। ডাক্তাররা মুরীকে সেন্সে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে চলেছে। ছায়াঘেরা কুয়াশায় মুরী, বাঁশি-ওয়ালা আর তার মা মিলিয়ে যেতে লাগল। দু’জনে এগিয়ে গেল এক চিরন্তন শূন্যের অভিমুখে।।