Getting your Trinity Audio player ready...
|
আমার বয়স সতেরো। এবার উচ্চ মাধ্যমিক দেব। একটি ছেলেকে আমার ভীষণ ভাল লাগে। কিছুদিন আগে জানতে পারলাম, আমার এক বান্ধবীরও ওই ছেলেটিকেই ভাল লাগে। ছেলেটিকে আমার বান্ধবী এখনও মনের কথা জানায়নি। আমি কি আমার মনের কথা বান্ধবীকে জানাব? নাকি সোজাসুজি ছেলেটিকে প্রপোজ করব? এতে কি আমার সঙ্গে বান্ধবীটির সম্পর্কের অবনতি ঘটবে?
— সায়ন্তিকা ঘোষ, দমদম ক্যান্টনমেন্ট।
বান্ধবীটির সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ? ঘনিষ্ঠ না হলে সরাসরি ছেলেটিকে প্রপোজ করো। আর বান্ধবীটি তোমার একান্ত প্রিয় বন্ধু হলে ওকে সব জানাও। তারপর দু’জনে মিলেই কথায় কথায় জানতে চেষ্টা করো ছেলেটি তোমাদের মধ্যে কাকে পছন্দ করছে? তোমরা দু’জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলে সম্পর্কের অবনতির কোনও প্রশ্ন ওঠে না।
আমার বয়স পঁচিশ বছর। গত চার বছর ধরে একটি ছেলের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এখন আমাকে বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। ছেলেটির কথা বাড়িতে জানালে প্রথমে বকাবকি করলেও পরে রাজি হয় এবং ছেলেটির সঙ্গে কথা বলতে চায়। কিন্তু ছেলেটি আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করছে। অথচ বলছে আমাকে ভীষণই ভালবাসে। তাই আমাকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে বারণ করছে। এদিকে বাড়ি থেকে খুব জলদি বিয়ে দিতে চাইছে। দিদি, দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করুন
— নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক, ঝাড়গ্রাম
ভালবাসার সঙ্গে বিয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। আধুনিক সমাজ বিয়ে না করলেও ভালবাসাকে মেনে নিচ্ছে। তোমরা লিভ টুগেদার করতে পারো। তাছাড়া সারাজীবন প্রেম করেও যেতে পারো এবং তুমি চাইলে বিয়ে না করে সন্তানধারণও করতে পারো। এখন সন্তানের জন্য পিতৃপরিচয় বাধ্যতামূলক নয় আগেকার মতো। প্রেমিককে যদি সত্যিই ভালোবাসো, বাড়ির লোকের কথা শুনে দুম করে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলে একসঙ্গে তিনটে জীবন নষ্ট হবে। তোমার জীবন, তোমার প্রেমিকের জীবন আর তোমার স্বামীর জীবন।
বাবা–মা কোনও সমবয়সী মেয়ের সঙ্গে মিশতে দেয় না। লুকিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখলে অকারণে সন্দেহ করে। বকাবকি করে। আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। বাবা-মায়ের এই শাসন অসহ্য বলে মনে হয়। ওঁরা কি সঠিক মনোভাব প্রকাশ করছেন?
— শওকত খান, সল্টলেক।
ভাই শওকত, বুঝতেই পারছ, তোমার বাবা-মা একটু প্রাচীনপন্থী এবং একটু গোঁড়া প্রকৃতির। বর্তমান সমাজে ছেলেমেয়ের মেলামেশাটা কোনও অপরাধ নয়। এমনকী সন্দেহজনকও নয়। তোমার চিঠি পড়ে তোমার বাবা-মা সম্পর্কে আমার যেটুকু ধারণা হয়েছে, তাতে তুমি সরাসরি ওঁদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা না বললেই ভাল। তুমি বরং তোমার আত্মীয়, প্রতিবেশী বা বাবা-মায়ের বন্ধুদের মধ্যে এমন একজনকে বেছে নাও, যে বাস্তবপন্থী এবং মোটামুটি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তাঁকে সব খুলে বলে তাঁর মাধ্যমে বাবা-মা কে তোমার সমস্যাটা জানাও। তিনি ঠিকঠাক বোঝাতে পারলে নিশ্চয়ই তোমার বাবা-মায়ের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে।
লেখাটা থামাল রিমা। গত তিন বছর ধরে ও “দৈনিক স্বপ্ন নিয়ে’-র ব্যক্তিগত বিভাগের দায়িত্বে আছে। প্রতি শনিবার ওর বিভাগের চিঠি আর উত্তরগুলো ওই নিউজ-পেপারটায় বের হয়। রিমা বুধবার রাতে সাধারণত তিন-চারটে চিঠি বেছে নেয়। তারপর ভেবে চিন্তে সমস্যাগুলোর সমাধান লেখে। শুক্রবার অফিসে লেখাটা জমা দেয়। বৃহস্পতিবারটা হাতে রাখে, যদি কোনও সমাধান নতুন করে লিখতে ইচ্ছে করে। আজ বুধবার। আজকের কাজও শেষ। লাইট নিভিয়ে দিয়ে সাদা বেডশিটের মধ্যে শরীরটাকে এলিয়ে দিল রিমা। নরম পাশবালিশটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইল। ধীরে-ধীরে এলোমেলো চিন্তাগুলো মিলিয়ে যেতে থাকল। দু’চোখের পাতায় নেমে এল ঘুম।
দুই
“ইয়েস, মিস চৌধুরী স্পিকিং।”
“না, না… আপনি…”
“না, না, মিঃ রক্ষিত, আপনি ভুল লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আপনি কাইন্ডলি… জাস্ট এ মিনিট, রিতা, রিতা… ওহ্ ও তো আসেনি, এই বৈশাখীদি… নিউজ ডেস্কের এক্সটেনশন নম্বরটা কত যেন?”
“হ্যালো, মিঃ রক্ষিত! আপনি এক্সটেনশন নম্বর ১৯৩-এ করুন, রিতাকে ওখানেই পাবেন।”
“না, না, এতে বিরক্ত হওয়ার কী আছে!” রিসিভারটা আস্তে করে নামিয়ে রাখল রিমা।
“এই! রিমা!” বৈশাখীদি ডাকছে। বৈশাখীদির গলায় মাখা-মাখা ভাবটা রিমা কয়েকটা বিশেষ সময়ে লক্ষ করেছে। তার মানে নিশ্চয়ই… “রিমা! আজ মিঃ বাসু তো তোমাকে আবার ডেকেছেন।” “তো!” “কিছু না! এমনই! মানে উনি তো আবার তোমাকে একটু…” “বৈশাখীদি! উনি আমার জেঠুর বয়সী।” মিঃ বাসু ‘দৈনিক স্বপ্ন নিয়ে’-র মালিক। পাকা বিজনেসম্যান। লোহার এক্সপোর্টের ব্যবসায়। মোটামুটি ভালই টাকা কামিয়েছেন। তারপর যা হয়। সম্মানের দিকটি, মানে ‘স্টেটাস’ নিয়ে। চিন্তা করতে শুরু করলেন তিনি। সুতরাং জন্ম নিল ‘দৈনিক স্বপ্ন নিয়ে। এখন মিঃ বাসুর লোহার কোম্পানি নিয়ে মাঝে-মাঝেই টুকিটাকি খবর-এতে বের হয়। তবে ভদ্রলোককে বুদ্ধিমান বলতে আপত্তি নেই রিমার। কখনওই দৃষ্টিকটু বা হাস্যকর কোনও পদ্ধতিতে তিনি আত্মপ্রচার করেননি। মানে যেরকম খবর পড়লে পাবলিক বলবে, “আরে পেপারের মালিক তো … মনের সুখে নিজের ঢাক পেটাচ্ছে।” কিন্তু একটাই সমস্যা মিঃ বাসুকে নিয়ে। কিছুদিন ধরে রিমার উপর তিনি একটু বেশিই দুর্বলতা দেখাচ্ছেন। গত সপ্তাহে ছুটির পর তাঁর গাড়িতে লিফ্ট অফার করেছিলেন। রাজি হয়নি রিমা। “একটু কাজ আছে” বলে এড়িয়ে গিয়েছিল ও। আসলে মিঃ বাসু বয়সের দিক থেকে রিমার চেয়ে প্রায় কুড়ি বছরের বড় হলেও এখনও দুর্দান্ত ফিজিক ভদ্রলোকের। চুল একটু পাতলা হয়ে এসেছে যদিও কিন্তু ভুঁড়ি-টুড়ি নেই। আর এটা তো স্বীকৃত বাস্তব যে, পুরুষের অল্প টাক চওড়া কপাল বলে বর্ণিত হয়, যদি সে হ্যান্ডসাম হয়। সব মিলিয়ে মিঃ বাসুকে এখনও ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের (ওঁর আসল বয়সের চেয়ে দশ পনেরো বছর কম) বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। তাই মিঃ বাসুর দুর্বলতা প্রকাশ করার ইচ্ছেটাকে রিমা আরও আসকারা দিতেই পারত। কিন্তু দেয় না। কারণ…
“এক্সকিউজ মি ম্যাম! দিবা স্বপ্ন?” “এ কী শতদ্রু! তুই কখন এলি?” “আমি তোকে আগেই বলেছিলাম, একদিন টুক করে তোর অফিসে চলে আসব। আর এখন তো তোর ছুটির সময়!”
“না, এখনও সাত মিনিট বাকি।”
“কোনও কাজ তো করছিলি না! চল, নীচে বাইক রেখে এসেছি, লক করিনি।”
“তু তো স্টুপিড কা স্টুপিড হি রহে গয়া!
বৈশাখীদি! আমার বন্ধু শতদ্রু।”
তিন
“এই টপটা পরলে তোকে রিয়েলি হট লাগবে।” “তা হলে তো এটা পরে তোর সঙ্গে বেরনোই যাবে না। বাই দ্য ওয়ে, শত, এটা কিন্তু তুই ঠিক করলি না।”
“কী?”
“আমি পরশুই স্যালারি পেয়েছি। তাই আমিই পে করতে পারতাম।”
“আমি আজকেই পেয়েছি। তাই আমিই…”
রিমা আর শতদ্রু হেঁটে চলেছে পার্ক স্ট্রিটের রাস্তা দিয়ে। দু’পাশে সার দেওয়া দোকান। কিন্তু সেই দোকানটা কই! রিমা এই মূহুর্তেই চায় সেই দোকানটা। ওই তো! “চল শত, তোকে আইসক্রিম খাওয়াই।” “হঠাৎ!” “না, এমনই।” ওরা পায়ে-পায়ে এগিয়ে গেল একটা আইসক্রিম পার্লারের দিকে। দুটো চকোলেট স্কুপের অর্ডার দিল রিমা। আইসক্রিম খেতে খেতে ওরা হাঁটতে লাগল রাস্তার একপাশ দিয়ে। নিমেষে নিজের কোন শেষ করে শতদ্রু বলল, “দে এক কামড় দে!” রিমা আইসক্রিমটা এগিয়ে দিতে শতদ্রু মুখ বাড়াল। রিমা হঠাৎই ওর মুখে খানিকটা চকোলেট ক্রিম লাগিয়ে দিল। দেখার মতো লাগছে শতর মুখটা। শত ভয়ঙ্কর গম্ভীর গলায় রিমাকে কানে-কানে কিছু একটা বলতে চাইল। রিমা কানটা এগিয়ে দিতে শতদ্রু ওর গালে টুক করে একটা চুমু খেল। রিমার গালে মেখে গেল আইস, চকোলেট, ক্রিম।
“ওঃ তুই…! শতদ্রু..একটু সিরিয়াস হ৷”
“হলাম।”
“শোন একটা কোয়েশ্চেন ছিল।” “কর।” “কবে রেজিষ্ট্রি করবি? আমার আর ভাল লাগে না একা একা থাকতে।” “রেজিষ্ট্রি? সে আবার কী? আমি তোকে জড়িয়ে ধরতে পারি। চুমু খেতে পারি। আমি তোকে… করতে পারি। কিন্তু রেজিষ্ট্রি? তুই কী ঠাট্টা করছিস?”
“কী উলটোপালটা বকছিস শতদ্রু!” রিমার গলার নালি উঠে আসা অভিমানকে পিছলে নামাতে পারল না।
“তুই আমায় ভালবাসিস না?”
“হ্যাঁ! অবশ্যই! যে কারও চেয়ে বেশি।”
“তা হলে অসুবিধেটা কী?”
“আমি তো কোনও অসুবিধের কথা বলছি না।”
“তাহলে বোকার মতো রেজিষ্ট্রি কী, রেজিষ্ট্রি কী করছিলি কেন? আমি বিয়ের কথা বলছি, এটাও বুঝছিস না?” “বিয়ে! কার বিয়ে? ও… আমার পিসতুতো দাদার বিয়ের কথা বলছিস বোধ হয়। ওর তো গত মাসেই বিয়ে হয়ে গেছে। সরি, তোকে ইনভাইট করতে পারিনি। ঠিক আছে, ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি।” জনবহুল রাস্তার মাঝে সময়কে চমকে দিয়ে শতদ্রু আরও একটি চকিত চুমু দিল রিমার গালে।
“তুই কিন্তু খালি ইয়ার্কি মারছিস। আমি জিজ্ঞেস করছি, আমাকে কবে বিয়ে করবি?”
“আমি তো তোকে বিয়ে করব না।” প্রচণ্ড সিরিয়াস শোনালো শতদ্রুর গলা। একটু আগের শতদ্রু আর এই শতদ্রুর মধ্যে অনেকটা পার্থক্য আছে।
“কী? তাহলে যে বললি আমাকে ভালবাসিস?”
“তো কী হয়েছে? ভালবাসলেই বিয়ে করতে হবে, এমন বোকা-বোকা বেদবাক্যে আমি বিশ্বাস করি না।” রিমা হাঁটা থামিয়ে দেয়।
“এতে খেপে যাওয়ার কী আছে? বিয়ে না করলেও ইয়ে, মানে প্রেম ঠিকই করব।”
“ছিঃ শতদ্রু! এতটা ইতর তুই! আমি তোকে এতদিন চিনতে পারিনি!” রিমা আর রাগ চাপতে পারল না। “এই, মুখ সামলে কথা বল! আমি তোকে ভালবাসি, তার মানে এই নয়, তুই আমাকে যা খুশি তাই বলে যাবি। আর আমার ভালবাসা মাধ্যমিকের পাশের হারের মতো হু হু করে বাড়বে!” রিমার কানদুটো লাল হয়ে গেছে। আশপাশের দু’চারজন কৌতূহলী পথচারী আড়চোখে দেখে চলে যাচ্ছে। কারই বা অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে ইচ্ছে করে! রিমা হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে শতদ্রুর দিকে। শতদ্রু নির্বিকার। বলল, “চকলেট খাবি? আমুল চকলেট!” রিমার চোখ দিয়ে ক্রোধের আগুন ঠিকরে বেরিয়ে আসে।
“রাগছিস কেন? আগে বললেই হত, তুই খাওয়াবি! আমি কী করে জানব, তুই আগে থেকেই কিনে ফেলেছিস।”
চার
শতদ্রুর বাইকটা পার্ক স্ট্রিটেরই একটা দোকানের সামনে পার্ক করা ছিল। সম্ভবত ওর বন্ধুর বা কোনও আত্মীয়র দোকান। রাগে রি-রি করে জ্বলছিল রিমা। পিছনে পড়ে ছিল শতদ্রু, তার বাইক আর পার্ক স্ট্রিট। সব কিছু ফেলে একটা ট্যাক্সি ধরে ও চলে এসেছে। ব্যাগে শতদ্রুর দেওয়া টপটা রয়ে গেছে। ওটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে রিমার। থাক। পরে পার্সেল করে শতদ্রুর বাড়ি পাঠিয়ে দেবে। ডিনার করল না রিমা। পোশাক পালটে নাইটি পরে বিছানায় উপুড় হয়ে শুলো। টেবিলল্যাম্পটা জ্বালিয়ে অন্য সব আলো নিভিয়ে দিল। কালকে যে চিঠিগুলো নিয়ে কাজ করছিল সেগুলোর ফাইলটা খুলে বসল। হ্যাঁ, এটাই তো… দু’নম্বর চিঠিটা বের করল রিমা। ডায়মন্ড রোলার পেনের ধারালো নিব দিয়ে খচ করে কেটে দিল গতকালের লেখা দু’নম্বর চিঠির সমাধানটা। ‘দৈনিক স্বপ্ন নিয়ে’ পত্রিকার ব্যক্তিগত বিভাগের পরামর্শদাতা রিমা চৌধুরী গতকাল পড়া ঝাড়গ্রাম নিবাসী, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক পাঠিকার সমস্যার সমাধান নতুন করে লিখতে শুরু করল। “সোজা যাও, তোমার প্রেমিকের গালে সপাটে একটা চড় কষাও। আর কোনোদিন ওর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রেখ না।” টুক করে টেবিলল্যাম্পটা নিভিয়ে দিল রিমা। বাড়ির শেষ আলোটাও নিভে গেল। কালো অন্ধকারে ঢেকে গেল গোটা বাড়িটা… ঘরগুলো, রিমার বেডরুম, বিছানা। বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে কতটা সময় কাটল কে জানে! রিমাকে প্রবল অস্বস্তি ছেঁকে ধরেছে। এপাশ-ওপাশ করছে ও। কোথাও একটা বিরক্তিকর পোকা অনেকক্ষণ ধরে একভাবে ডেকে যাচ্ছে। তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল রিমা। টেবিলল্যাম্পটা আবার জ্বালাল। ফাইল খুলে শোয়ার আগে লেখা দু’নম্বর চিঠির সমাধানটা বের করল। পুরো উত্তরটা পড়ল, মূল চিঠিটাও। তারপর আবার নতুন করে ঝাড়গ্রামবাসী, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মেয়েটির সমাধান লিখতে শুরু করল। “নিজেকে প্রশ্ন করো, তোমার প্রেমিককে কতটা ভালবাসো। যদি দ্যাখো, এর পরে আর ভালবাসা যায় না ওকে, তবে সম্পর্ক রেখো না। আর মনে হয়, এর পরেও ভালবাসা কমেনি…” চিঠিটা আর শেষ করল না রিমা। বিছানা থেকে উঠে আলুথালু রাত-পোশাকে ছুটে গিয়ে টেলিফোনটা তুলে নিয়ে ডায়াল করল। “হ্যালো! কে শতদ্রু! একবার আমাদের বাড়ি আয় না প্লিজ!” “হ্যাঁ, হ্যাঁ, এখনই। যেমন করে হোক!”
(উনিশ কুড়ি পত্রিকায় ২০০৪, ৪ আগস্ট প্রথম প্রকাশিত হয়)