১
সুতীর্থ মিত্রর সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল রিয়ার। ছেলে বড় অফিসের ম্যানেজার। তার অনেক টাকা ইনকাম। সে জন্য রমেন দত্ত মেয়ের বিয়ে দিলেন সুতীর্থর সঙ্গে। ছেলের অবশ্য বয়স একটু বেশি। আর মেয়ের কোনও কথাই বাবা মা শুনতে চায়নি। আর শুনেই কী করবে। কারো বাবা মা কি সন্তানের খারাপ চায়। মেয়ের সুখের জন্য একটু বয়স্ক ছেলে হলেই বা কী ক্ষতি। বরং সে সুখে থাকতে পারবে। এই ছিল রিয়ার বাবা মায়ের ভাবনা চিন্তা। অবশ্য এ চিন্তাই তো বয়ে বেড়াচ্ছেন বাবা মায়ের। ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে।
মেয়ের যে ছেলে ঠিক করা আছে নিজে থেকেই সে খবর রমেন বাবু জানতে পারলেন স্কুলের কেরানী বিমলের থেকে। সেদিন অফিস টাইমে বসে যখন রমেন মাস্টার একা আরাম করছিল তখন বিমল এল। আর তার আসাটা যেন একটা দারুণ রকম চমকপ্রদ খবর দেওয়ার জন্যই।
– মাস্টার মশাই একটা কথা বলব আপনাকে?
– বল, কী বলবি।
– বলছি যে আপনার মেয়েকে যে আজকাল রোজ দেখি ও পাড়ার সুজনের ছেলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। হাত ধরে।
– সত্যি বলছিস?
– আজ্ঞে, মাস্টার। মিছা কেন বলব। আমি নিজের চোখে দেখছি।
– আচ্ছা, তুই যা।
মুখে একটা হাসি নিয়ে বিমল বেরিয়ে যায়।
মাথা ঘুরতে থাকে রমেন বাবুর। বেল বাজে। পাঁচ পিরিয়ড শুরু হয়। কোনওরকমে ক্লাস সেরে বাড়ি চলে আসে রমেন বাবু। বাড়িতে এসে স্ত্রীকে কথা শোনান।
– বলি মেয়ে যে ছেলের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় সে খবর রাখো।
– কী সব কথা বলছ এসে। আগে পরিস্কার হয়ে তো আসো।
– পরিস্কার হয়ে লাভ নেই। মেয়ের কুকীর্তির কথা আমাকে শুনতে হবে কেন।
– কী কুকীর্তি।
– কিছু না। তোমার মেয়ে কোথায়?
– ও তো কলেজে গেছে।
– ও আসুক। ওর সঙ্গে আমার বোঝাপড়া আছে।
রমেন বাবু লোকটা কখনই নিজের অপমান সহ্য করতে পারেন না। আর ওই স্কুলের কেরানি কিনা তাকে কথা শুনিয়ে দিলেন।
মাথা গরম হয়ে আছে রমেন বাবুর। স্ত্রী চা এনে দিলেন। চা খেলে মাথা গরম কমে যায় রমেন বাবুর। এমন সময় গেট খোলার আওয়াজ। নিশ্চয় মেয়ে বাড়িতে এল। সেই দিকে খেয়াল রেখে রমলা দেবী স্বামীকে বললেন, দেখ, “তুমি ওকে এখনই ওসব কিছু বলো না। পরে ঠান্ডা মাথায় কথা বলো ঠিক আছে।” রমেন বাবু রাজি হলেন।
রমেন বাবু আর রমলা দেবীর একমাত্র মেয়ে রিয়া। রিয়ার এক দাদা আছে। সে বিয়েথা করে বাইরে চলে গেছে। সেখানে বড় ফ্লাটে থাকে। বাবা মায়ের কাছে আসার সময় হয় না তার। আর বৌমা তো এ বাড়িতে এসে একমাস পুরতে না পুরতে আলাদা হওয়ার কথা জারি করে দিল। আসলে সাগরের কাজ ছিল। অনেক কষ্ট করে চাকরি জোগাড় করেছে সে। বাবার কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছিল ব্যবসা করবে বলে। কিন্তু এখন সে চাকরি করে এতটুকুই জানে বাবা মা। বৌমার সঙ্গে খাপ খায়নি রমলা দেবীদের। তাই বাবা মার কাছে এসে ছেলে বলেছিল, ” বাবা, মা তোমাদের একটা কথা বলতে এখানে এলাম।
– তুই কী কথা বলবি আমি জানি। রমেন বাবু বলে।
– দেখ বাবা আমি তোমাদর সঙ্গেই থাকতে চাই। কিন্তু তোমদের বৌমা তোমাদের সঙ্গে যেমন করছে তা আমি দেখতে পারব না। আমি কিছু বলতেওও পারব না। কেননা…
– কেননা তুই ওর বাবার কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছিস। আর তুই সেই জালে ফেঁসে গেছিস তো। রমেন বাবু বলে।
– বাবা আমি জানি তোমরা আমার ওপর রাগ করে আছ। কিন্তু আমার কিছু করার যে নেই। ওর বাবা একটা ফ্লাট দেখেছে আমাদের জন্য আমরা কাল ওখানে গিয়ে উঠছি। বলে সে বাবা মাকে প্রনাম করে ঘর থেকে নিজের ঘরে যায়। স্ত্রীর উৎসুক মুখ দেখে সাগর বুঝে এবার সে শান্তি। সাগর ফেঁসে গেছে স্ত্রীর জালে।
তরপর থেকে একমাত্র মেয়ে রিয়াকে নিয়েই বাবা মায়ের সব স্বপ্ন। ছেলে তো চলে গেল নিজের বাবা মাকে ছেড়ে। বউয়ের আঁচলে জড়িয়ে সে এখন নিশ্চয় অনেক সুখে আছে।
রমেন বাবু মেয়েকে খুব ভালোবাসে। সে চায় তার মেয়েকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দিতে। আর এই আশা নিয়েই তো তার দিন কাটছে। মেয়ের জন্য কত আয়োজন করে রাখছে বাবা মা তার বিয়ের কথা মাথায় রেখে। আর সেই স্নেহের মেয়ের নামে বদনাম শুনতে হল আজ! তাও আবার সেই কেরানিটার কাছ থেকে। এ অপমান কিছুতেই মেন নিতে পারছেন না রমেন বাবু।
মেয়ে এসে ঘরে ঢুকল। ব্যাগটা রেখে সে বাথরুমে ঢুকল। তারপর সে ঘরে ঢুকে দেখতে পেল বাবার মুখটা কেমন রাগি রাগি। আর মা তার পাশে। মাকে সে বলল, ” কী হয়েছে মা?”
” নারে মা কই কিছু না তো। তুই বস আমি তোকে ভাত দিচ্ছি। “
খেতে বসার আগে সে বাবকে বলল, ” বাবা কী হয়েছে অমনভাবে বসে আছ কেন?”
” দেখ মা আমি একটা ছেলে দেখেছি তোর জন্য। আর তোর বিয়ে হবে সামনের মাসে। ( এই ছেলে নিয়ে হালকা আলাপ হয়েছে শুধুমাত্র। সেই স্মৃতিই রমেন বাবু ব্যবহার করলেন।) “
রিয়া যেন আকাশ থেকে পড়ল। এসব কী বলছে বাবা। বাবা কি তাহলে তার বিয়ের ব্যপার নিয়েই এথ চিন্তিত। সে তো বলেছিল আগে বি এ শেষ করে সে বিয়ে করবে। কিন্তু এ কি বাবার মাথায় কী তাহলে বিয়ে দেওয়ার ভূত চাপল নাকি। আচ্ছা, বাবা কি জেনে গেছে তাহলে সে যে প্রেম করে। কিন্তু জানবে কী করে। না সে তো কখনই পথে ঘাটে বেরয়নি অন্যদের মতো। শুধু কলেজ ক্যান্টিনে সেটুকু কথা আর পড়ার ব্যাচে। তাছাড়া অার কখনও তারা এতটাও কাছাকাছি হয়নি যে বাবা তা জানতে পারবে। রিয়া জানে যে বাবা এই এলাকার একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। দাদার জন্য অবশ্য সে সম্মান বারোটা না হলেও আটটা বেজে গেছে। তারপরেও তো তার সম্মান আছে একজন মাস্টার হিসেবে। আর রিয়া জানত যে এখন একমাত্র সেই আছে যে বাবামাকে হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারে। এর জন্য তাকে সচেতন থাকতে হবে। সে যে একজনের সঙ্গে প্রেম করে সে কথা যেন কেউ ঘুণাক্ষরেও না জানতে পারে।
কলেজে এলে কম বেশি প্রেম প্রেম সবারই পায়। যেমন পেয়েছে রিয়ার। সে এ যুগের মেয়ে সে নিজেকে সামলাতে পারে। একদিন ক্লাসে ঢুকতে যাবে এমন সময় তার সমবয়সী একটা ছেলে তার পথ আটকে দাঁড়াল। সে তার সামনে এসে ভয়ে ভয়ে বলল, ” দিদি ওই দাদাটা তোমাকে একটু ডাকল।” বলে ওদিকটা দেখিয়ে দেয়। তারপর ছেলেটা চলে যায় নিজের ক্লাসে। রিয়া অবাক হল। কিন্তু তাকে ক্লাসে যেতে হবে বলে শুধু ছেলটিকে একবার দেখে নিয়ে ক্লাসে ঢুকল।
তিনটা ক্লাস করার পরে ক্যান্টিনে দেখা হল ছেলেটার সঙ্গে। ফর্সা সুন্দর চেহারার ছেলেটা রিয়ার টেবিলের পাশে এসে বসল। আর তারপর আলাপ হল। আসলে রিয়া ছেলেটাকে এড়িয়ে যেতে পারেনি কারণ ছেলেটা অনেক নম্র। খরাপ ভাষা ব্যাবহার করেনা অন্যদেল মতো। তারপর দিন যেতে লাগল। বাড়তে লাগল সম্পর্ক।
রিয়া এবার বাস্তবে এল। মা বলছেন, ” কীরে কী হল।”
” না, কিছু না। তোমরা এত তাড়াহুড়ো করছ কেন। আমার কলেজটা তো এখনও শেষ হয়নি।”
” হয়নি তো কী হয়েছে। আর মাত্র দুমাস আছে। এখন আর কোন কথা শুনব না।”
” কিন্তু বাবা তোমরাই তো বলেছ বি এ কমপ্লিট করার পর। “
” হ্যাঁ, বলেছি তোর কথার জন্য। তুই বি এ করে বিয়েতে বসবি কথা ছিল। আর যেহেতু তোর বি এ প্রায় শেষ তাই আমরা সেই ব্যবস্থা করছি। “
” মা বাবাকে বলো আমি আরও পড়ছে চাই। বি এ এর পরে এম এ…”
” না, এম এ করলে বিয়ের পর করবি।” রমেন বাবু বলেন।
” আচ্ছা, শোনো না ওর বি এ টা শেষ হোক তারপর না হয় দেখা যাবে।” রমলা দেবীর কথায় রমেন বাবু বলে, ” ঠিক আছে তুমি বলছ বলেই ওর বি এ পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। তারপর আর কোনও বায়না শুনব না।” বলে রমেন বাবু নিজের রুমে চলে গেলেন। রমলা দেবীও একটু পরে মেয়েকে বলে চলে গেলেন। রিয়া বুঝতে পারল এমন কিছু একটা হয়েছে জন্যই বাবা মা তাদের সিন্ধান্ত জানানোর জন্যেই তার ঘরে ঢুকেছে আজ।
রিয়া চিন্তায় পড়ল। সে ভাবল এই দুই মাসে কি সব সম্ভব?
২
রিয়া জানে তার বাবা মোটেও এতটা রাগি মানুষ না। যে এইরকমভাবে একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলবে তাকে। নিশ্চয় তার বাবা কখনও রিয়াদের তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখে ফেলেছিল। কিন্তু সে সুযোগ তো হওয়ার কথা নয় রিয়া আবার ভাবল। সে আরও অনেক ভাবল কিন্তু না কোনও ফাঁক খুঁজে পেল না সে। হঠাৎ তার চোখে মুখে একটা আতঙ্ক দেখা দিল। তবে কি তার বাবা ওদের দুজনকে সেদিন হোটেল দেখে ফেলেছিল। কিন্তু হোটেলে তো তারা এমনভাবে গিয়েছিল তাতে তার বাবার দেখে ফেলার তো কোনও প্রশ্ন উঠছে না। না না তার বাবা কেন হোটেলে যাবে। আর রিয়ার কোনও বান্ধবীও জানে না যে তারা সেদিন হোটেলে গিয়েছিল। কেননা এইরকম একটা ঘটনা ওদের জানিয়ে দেওয়া কখনই ঠিক নয়। নইলে সেটা নিয়েই তারা ব্ল্যাকমেল করতে থাকবে। একটু কিছু হলেও ভয় দেখাবে। আর প্রমিস টমিস আজকাল পলকে উড়িয়ে দিতে পারে মানুষজন। তাই তারা হোটেলে যাওয়ার আগে কাউকেই জানায়নি। রিয়ার ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে ভয় বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। সে ভাবল দু মাসের মধ্যে তার বিয়ে হয়ে গেলে সৃঞ্জয়ের কী হবে। সৃঞ্জয় ছেলেটাই হল তার প্রেমিক।
সেদিন পুজোর ছুটি চলছিল। কলেজ বন্ধ। সৃঞ্জয় থাকে কলেজের পাশে মেসে। সে বাড়ি ফিরে যাবে। কলেজের ছুটি হয়ে তার প্রেমে হবে অসুবিধা। সে রিয়াকে দেখতে পারবে না কতদিন এ তার দুঃখ। তাই কলেজ ছুটি হওয়ার দুদিন পরে যেহেতু তাকে মেস থেকে বাড়িতে যাবে তাই সে একবার রিয়ার সঙ্গে সময় কাটাতে চায়।
রিয়াকে বলে, ” শোন না চল না আমরা একটা রাত কাটাই।”
” মানে!” চমকে উঠেছিল রিয়া। ” রাত কাটানো মানে! কী বলতে চাইছ।”
” মানে আমাদের বহুদিন দেখা হবে না তাই আমি আমার হবু বউকে একটু কাছে পেতে চাই। “
এই রকম কথা শুনে রিয়ার হাত পা কাঁপতে শুরু করে। সে ঘামতে থাকে। রিয়াকে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকতে দেখে সৃঞ্জয় রিয়াকে জড়িয়ে ধরে। বুকে টেনে নেয়। রিয়া ভয় পেয়ে যায়। রিয়ার মুখে কোনও কথা আসে না। সৃঞ্জয় আঁধারে রিয়ার ঠোঁটে মুখ ঘসতে থাকে। তাকে জড়িয়ে রেখে রিয়ার শরীরটাকে কাছে জড়িয়ে ধরতে থাকে। রিয়া অবশ হয়ে যায়। ঘামতে থাকে সে। এমন সময় একটা গাড়ির আলো এদিকেই আসতে থেকে দেখে রিয়া এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। নিজেকে সামলে নেয় সে। সৃঞ্জয় অবাক হয়ে যায়। সে এমন করছে কেন। গাড়িটা ওদের পাশ দিয়ে চলে যায়। সৃঞ্জয় এবার বলে, ” তুমি রাজি তো?”
রিয়া কোনও জবাব দেয়না। তা দেখে সৃঞ্জয় বলে, ” কী হল রিয়া তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না। ঠিক আছে তুমি যদি আমাকে অবিশ্বাস করো তাহলে আমি তোমাকে ডিস্ট্রাব করব না আর। ” বলে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে থাকে। রিয়া ভয় পায়। প্রেম হারিয়ে ফেলার। সে অসহায় হয়ে পড়ে। সে সৃঞ্জয়কে মন দিয়ে ভালোবাসে। সে কীভাবে তাকে অবিশ্বাস করতে পারে। সে সৃঞ্জয়কে তার দিকে তাকাতে বলে আর তারপর একটু হাসে। সৃঞ্জয় খুশি হয়।
” কিন্তু সিঞ্জু আমকে তো বাইরে বেরতে দেবে না। “
” চাপ নেই।”
“চাপ নেই মানে। বাবা মা আমাকে রাতে অকারণে বেরতে দেবে কেন?”
” তুমি বলবে যে আমার বান্ধবীর সঙ্গে শপিং করব আর ওদের বাড়িতেই থাকব। ব্যাস। “
” কিন্তু..”
” কোন কিন্তু নয়, তোমার বাবা মা তোমার বান্ধবীর বাড়ি মোটেও চেনে না আমি জানি। আর তাছাড়া সুলেখা সত্যিই শপিংয়ে যাবে আমি খবর নিয়েছি। সেই কথাটাই বলে দেবে বাড়িতে। “
” তুমি এত কিছু জানলে কী করে?”
” আমি তোমার বর মানে হবু বর আমাকে তো জানতেই হবে। “
” তার মানে তুমি আমাকে সন্দেহ কর।”
সৃঞ্জয় বুঝল তার অ্যাকটিংটা একটু ওভার হয়ে যাচ্ছে। তাই সেটা মেক আপ করার জন্য বলল, ” না না একেবারে না। তোমাকে একটু কাছে পাওয়ার জন্য একটু সাতপাঁচ দেখে না নিলে হয়। “
” তাহলে তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন বলো। আমরা তো বিয়ের পর একসঙ্গেই থাকব। ওসব তখন করলেই হয়। “
” কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ের আগেই ভালোবাসতে চাই।”
” সঙ্গে নেব কিন্তু।”
হাসিমুখে সৃঞ্জয় বলে, ” সে নিয়ে তোমার কোনও নেই। আমি আছি।”
এবপর রিয়া বাড়িতে বলে অাসে সে সুলেখাদের বাড়ি যাচ্ছে। সুলেখার মা তাকে যেতে বলেছে। রমলাদেবী বলেছিল, “কোন সুলেখা রে?
” ও আমার কলেজ ফ্রেন্ড মা। তুমি অত চিন্তা কোর না। আমি কাল সকালে চলে আসব। বাবাকে বলে দিও চিন্তা না করতে। আসছি।”
বাবা তখন বাড়িতে ছিল না বলে বাবার সামনে তাকে আর মুখ দেখাতে হয়নি। তাহলে হয় তো সে মিথ্যা কথাটা বলতেই পারত না।
বাড়ি থেকে বের হয়েই দেখতে পেল সৃঞ্জয় একটা ম্যাজিক কারে অপেক্ষা করছে। রিয়া সেখানে গিয়ে উঠে বসল। সৃঞ্জয় সমস্তরকম ব্যাবস্থা যে করে রেখেছে এই দিনটার জন্য রিয়ার বুঝতে অসুবিধা হল না। রিয়া বাঁধা দিতে পারত কিন্তু সে তার প্রথম প্রেম কখনই হারাতে চায় না। সৃঞ্জয়কে ভালোবাসে মন প্রাণ দিয়ে। আর তাছাড়া এর আগে তারা এ বিষয়ে কথাও বলেছিল। রিয়া তার বাবাকে দেওয়া কথা বি এ পড়া শেষ হলেই তাকে বিয়ে করতে হবে সে কথাও সে বলে। সৃঞ্জয় খুব চতুর ছেলে। সে বলে,” দেখ, তোমারও বি এ কমপ্লিট হবে আর আমিও এম এ শেষ করব। ( রিয়াদের কলেজে কিছু বিষয়ে এম এও পড়ানো হয়। ) আমি আমার বন্ধুদের দিয়ে তোমার সঙ্গে আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে। অবশ্যই গুরুজনরা যাবে তোমার বাড়ি। আর আমাকে দেখলে আশা করি অপছন্দ করবেন না তোমার মা বাবা। “
” তা করবে না। আমার পছন্দ হলেই হবে।”
” তো হয়ে গেল আর কোন সমস্যা নেই। আর কমাস পরেই তাহলে বিয়ে করছি। ওকে। ফুল এন্ড ফাইনাল।” আর এই ভরসাতেই রিয়া অলীক স্বপ্ন দেখে।
গাড়ি থেকে নেমে দুজনে হোটেলের আটাশ নম্বর রুমে গেল। রিয়ার নিজেকে নতুন লাগছে। সৃঞ্জয় একসময় ঝাঁপিয়ে পড়ল রিয়ার ওপর। রিয়া আর ভাবতে পারল না। না না এসব কথা তো তার বাবা মা জানতে পারবে না। তবে একটা বিষয় তার মাথায় একটা চিন্তা ঢুকে গেছে। সুলেখা। আচ্ছা ওই সুলেখাই আবার কিছু বলেছে নাকি মাকে। রিয়ার মাথা ঘুরতে লাগল। এমনটা হতে পারে সে যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল তখন হয়তো মা সুলেখার নম্বরে ফোন করেছিল। আর সুলেখা যেহেতু জানত না যে রিয়া আসলে ওর কথা বলে অন্য খানে গেছে। আর তাই হয়তো মা কিছু একটা সন্দেহ করেছিল।
যখন সৃঞ্জয় রিয়াকে বিছানায় বসাল তখন রিয়ার নিজেকে মনে হতে লাগল সে একটা নতুন জগতে এসে পড়েছে। একেবারে নতুন কোন ব্রহ্মান্ডে সে আর তার প্রেমিক ছাড়া কেউ নেই। সৃঞ্জয় দরজা বন্ধ করে এল। এ ঘরটা হোটেলের একেবারে তিনতালায়। আর এখানে ঢোকার সময় তেমন লোকজনও দেখেনি রিয়া। সৃঞ্জয়ের অনেক টাকা আছে তাই সে হয়তো সবথেকে স্পেশাল রুমটাই ভাড়া করেছে। একরাতের জন্য। সৃঞ্জয় ধীরে ধীরে নগ্ন হতে থাকল। তারপর এগিয়ে এল রিয়ার কাছে। রিয়া এই প্রথম পুরুষের লোমশ শরীর দেখতে পেল। রিয়ার নিজেকে সামলাতে পারছিল না। মাঝে মাঝেই মাথায় চক্কর লেগে যাচ্ছিল। সৃঞ্জয় ক্রমে ক্রমে রিয়ার পোশাক গুলোর ওপর হাত রাখছিল। তারপর নগ্নতার ভেতর দুজনে ডুবে গেল। এক অন্য জগতে। তখন তো রিয়া এসব ভেবে দেখেনি। বাড়িতে যদি সে জানতে পারে তবে সে কী বলবে। রিয়ার হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল। তারা যখন পরের দিন সকালে হোটেল থেকে দুজনে বেরিয়ে শপিংমলে গিয়েছিল তখন রঞ্জনের মতো একটা ছেলেকে দেখেছিল। তাকে দেখতে পেয়েই রিয়া মাথা লুকিয়ে ফেলেছিল। তবে সে কি সত্যিই রঞ্জন ছিল কিনা তা সে জানতে পারেনি। রিয়ার মাথায় এখন চিন্তারা সারি সারি এসে লাইন দাঁড়াচ্ছে। রিয়া সুলেখাকে কখনোই সেই রাত নিয়ে কথা বলেনি এমনকি এতদিন একসঙ্গে কলেজে গেল তখনও তো সে এসব নিয়ে কথা বলেনি। রিয়া সুলেখাকে ফোন করতে গিয়েও ফোন করল না। মোবাইলটা রেখে দিল বিছানায়। তাহলে কি সেদিন ওটা রঞ্জনই ছিল। তাহলে সেই মাকে সব বলে দিয়েছে। রিয়ার নিজেকে ঘৃনা হতে লাগল। শেষে কি সেও দাদার মতো বাবা মায়ের মুখে চুনকালি ছিটিয়ে দিল। রঞ্জন ছেলেটা পাড়ার বখাটে ছেলে। তার কোনও ভরসা নেই। রাতে রিয়ার বিয়ের চিন্তা, সৃঞ্জয়ের চিন্তায় ঘুম এল না। রাত্রি জেগে জেগে কেটে গেল।
মা ঘুম থেকে ডাক দেয়নি। নিজেই উঠল রিয়া। শেষ রাতে একটু চোখ বুজে এসেছিল। ঘড়ি দেখল নটা বাজে। রিয়াকে দেখে রমলা দেবী বললেল, ” কী রে মা তোর কি শরীর খারাপ?”
” না তো।”
” তাহলে ওরকম চোখমুখ হয়ে আছে কেন?”
” কই নাতো মা।”
“আচ্ছা মা বল তো তুই কি কালকে রাত জেগেছিস?”
“না তো।”
” দেখ মিথ্যে কথা বলিস না। আমি জানি তুই রাত জেগেছিস। বিয়ের কথা শুনে চিন্তা করছিস। দেখ মা তোর বাবা কী থেকে কী শুনেছে সেই নিয়ে রাগ করে আছে। “
” কিন্তু মা আমি তো এখন বিয়ে করতে চাই না। “
” বুঝতে পারছি মা। কিন্তু তোর বাবাকে আমি রাজি করতে পারলাম না। তবে বলেছে যে দু মাস পরে যখন তোর বি এ শেষ হবে তখনই তোর বিয়ে দেবে। “
রিয়া কিছু বলল না।
কলেজে এসে রিয়া সৃঞ্জয়কে খুঁজতে লাগল। কলেজে ক্লাস রুমে এল কিন্ত সে নেই। আজ কি তবে সে অাসেনি। ফোনটাও সে তুলছে না। কতবার কল করেছে রিয়া। সৃঞ্জয় কি একটি বারের জন্যেও কলটা ধরতে পারে না। তাকে যে অনেক কিছু বলার অাছে রিয়ার। তাকে যে প্রয়োজন এখন খুব।
দুমাস হয়ে গেছে। এর মধ্যে কলেজ শেষ হয়ে গেছে রিয়ার। সৃঞ্জয়ের। একটা ব্যাচ কলেজে জমিয়ে রাখা স্মৃতিগুলো মনের গ্যালারিতে জমিয়ে রেখে পাড়ি দেওয়া শুরু করল নতুন কিছুর উদ্দেশ্যে। নতুনের সন্ধানে। কিন্তু আশ্চর্যভাবে রিয়া কিছুই পেল না। পেল শুধু দুঃখ। বাবা মায়ের কাছ থেকে যেমন। তেমন পেল সৃঞ্জয়ের কাছ থেকেও। যখন কদিন যোগাযোগ হল না তাদের মধ্যে। তখন একদিন বিকেলে সৃঞ্জয় কল করল রিয়াকে। রিয়া যেন প্রাণ পেল সেদিন। কিন্তু সেই প্রাণ বায়ুও এক নিমেষে ফুরিয়ে গেল। যখন সৃঞ্জ য় কোনরকম ভনিতা না করেই রিয়াকে বলল, ” রিয়া আই এম সরি। আমি আর আমদের সম্পর্কটা চালিয়ে নিতে পারছি না। আমি সুলেখাকে খুব ভালোবাসি। আমি ওর সাথে আমার বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। আমি জানি তুমি আমার ওপর রাগ করছ। কিন্তু আমি আর এই অস্বস্তি চেপে রাখতে না পেরে সত্যিটা তোমাকে জানিয়ে দিলাম। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না।” বলে টুট টু করে কেটে দিল ফোনটা। সৃঞ্জয় বলল এই কথা! সৃঞ্জয়! রিয়ার নিজেকে গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া কান্নার ফোঁটার মতো মনে হল। সে নরম মনের মানুষ বলে এতদিন সৃঞ্জয়ের সব কথা শুনেছে। তার সঙ্গে সংসার করার কথা ভেবছে। ভেবেছে সৃঞ্জয়ই পারবে তাকে সব থেকে সুখে রাখতে। এমনকি তার বাবা মায়ের কাছ থেকেও। আর সেই বিশ্বাসে ছাই ঢেলে দিল সে। আর সুলেখা সেও তবে এমন বিশ্বাসঘাতক। রিয়ার নিজের ওপর ঘৃন্না জমতে লাগল। তার প্রথম প্রেম ভেঙে গেল। প্রথম প্রেম ভেঙে যাবার দিন কী করতে হয় রিয়া জানে না। সে শুধু কান্নাই করতে লাগল।
বাবা মা এবার সব জানলেন। রিয়া শুধু গোপন রেখেছিল রাতের কথা। সব কথা সবসময় বলে দিতে নেই। অত্যন্ত প্রিয় মানুষের কাছেও। এতে সম্পর্কের ক্ষতি হয়। রিয়া দাদ চেপে বাঁচল।
৩
কদিন পরে রিয়ার বিয়ে হল সুতীর্থ মিত্রের সঙ্গে। রিয়াকে মেনে নিতে হল বিয়েটা। এরপর যা ঘটার তাই ঘটতে থাকল জীবনে। তাকে আর পড়াশোনার জন্য স্বামী পারমিশন দেয়নি। বাড়িতে থাকে। বাড়িতে একা থাকে। এই ফ্লাটটা নতুন নিয়েছে সুতীর্থ। এইভাবে চলতে থাকল জীবনের মুহূর্তগুলো। এই চলে যাওয়াটাকে রিয়া কখনই জীবন বলতে পারিনি সে। বাবা মায়ের চাপে হয়তো সে বিয়ে করেছে কিন্তু সেই যে তার প্রেমের দিনগুলো সেখান থেকে সে মন সরাতে পারে না আজও। সে ভাবতে থাকে সৃঞ্জয়ের সেই অন্যকে দিয়ে ডাক দেওয়া। তারপর কলেজ ক্যান্টিনে পাশে বসার কথা। এভাবে যখন সে ভাবে ভলো হয় মন কিন্তু ঠিক একটু পরেই যখন তার সেই প্রতারণার কথাগুলো মাথায় এসে আঘাত হানে তখন সে নিজেকে ঘৃনা করতে শুরু করে। সে কখনই ভাবেনি এমন হবে। অথচ হয়েছে। এভাবে দিন কাটছিল রিয়ার।
বেশ কিছুদিন পর রিয়া বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। সুতীর্থ বলেছে সে অফিস সেরে রিয়ার কাছে যাবে। চাপ না থাকলে সেই নিয়ে যেত। কিন্তু রিয়ার তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই কোনও। সে বলেছিল, ” ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। তুমি পরেই এস। “
পথে বেরিয়েছে। রিয়া কলেজের পাশ দিয়ে যেতে যেতে একটু খুব চেনা মুখ দেখে অবাক হয়ে গেল। আরে এটা সৃঞ্জয় না! হ্যাঁ, ওই তো। সেও কেমন দেখে আছে। রিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। রিয়া টোটো চালককে বলল, ” দাদা এখানে থামান।”
ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সে নেমে পড়ল কলেজের সামনে। এখনও পুজোর ছুটি চলছে কলেজে। নতুন কোনও প্রেমিক প্রেমিকার জন্য। কিন্তু
সৃঞ্জয় এখানে কী করছে। রিয়া বুঝে উঠতে পারল না কেন’র উত্তর কী হতে পারে। সৃঞ্জয় রিয়ার কাছে এল। রিয়া চুপটি করে দাঁড়িয়ে। একটা নীরবতার প্রহর পালন করছে দুজনেই। হঠাৎ রিয়ার দিকে তাকিয়ে সৃঞ্জয় ভাঙল এই নীরবতা। সে বলল, ” রিয়া আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ।”
– তোমাকে আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ঠকাবে না। কিন্তু তুমিও ঠকালে। আমি ঠকে গেলাম নিজের কাছে। নিজের বিশ্বাসের কাছে।
– জানি আমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। আমি তোমার চোখে অপরাধী। বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না।
– তোমার কিছুই করার ছিল না তা আমাকে বলতেই পারতে। আমরা একসাথে একটা উপায় বের করতে পারতাম। কিন্তু না থাক এখন এসব বলেই বা কী হবে। বলে রিয়া এগিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সৃঞ্জয় তাকে থামতে বলে, ” রিয়া প্লিজ একটু দাঁড়াও। আমি তোমার প্রতি আমার কোনও অধিকার আমার নেই। কিন্তু তোমাকে একটা সত্যি কথা বলব বলেই আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।
– আমি ভেবেছি। এটা এক্সেডেন্টলি। তার মানে তুমি জানতে আমি এখানে আসব।
– হ্যাঁ। আমি জানি যে তুমি এখানে আসবে।
– আচ্ছা। তা তুমি জানলে কার থেকে?
– সুলেখা বলেছে।
– সুলেখা! রিয়া রেগে উঠল এই নামটা শুনে। সে বলল, ” তুমি সরে যাও। আমাকে যেতে দাও। বলে রিয়া হনহন করে চলে যেতে লাগল সামনে। কিছুটা এগিয়ে গেছে রিয়া। সৃঞ্জয় পিছু নিল তার। রিয়াকে ডাকার পরেও সে কোনও জবাব দিল না। একসময় সৃঞ্জয়
রিয়ার হাত ধরে থামল। রিয়া নিজেকে সামলাতে না পেরে ঘুরে দাঁড়াল। আর একটা চড় বসাল সৃঞ্জয়ের গালে। সৃঞ্জয় রিয়ার হাতটা ছেড়ে দিল।
সৃঞ্জয় বলল, ” এটা আমার প্রাপ্য। আমি জানি। কিন্তু সত্যিটা জানলে তুমি কখনই আমাকে অপরাধী মনে করতে পারবে না।
– কী সত্যি কথা বলবে। আর যেই সত্যি কথাই হোক আমি আর জানতে চাই না।
– রিয়া আমি সেদিন তোমায় মিথ্যা কথা বলেছিলাম। আমি সুলেখাকে কখনও ভালোই বাসি নি।
– মানে! তুমি ওকে বিয়ে করো নি!
– না। ওর কথা বলে সেদিন তোমাকে ওসব আমি মিথ্যা সাজিয়ে বলেছি।
আমি জানি তুমি এসব শুনলে অবাক হবে। কিন্তু শোনো আমি এই মিথ্যা অপরাধী হয়ে থাকতে আর পারছি না। আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
– কী ছিল সত্যটা? রিয়া জিগ্যেস করল।
– আমি সেদিন সুলেখাকে জানিয়েই তোমাকে ফোন করেছি। তুমি যখন আমায় কল করছিলে আমাকে তুমি পাওনি কেন জানো?
– কেন?
– সেদিন আমার বাবা হার্ট আ্যাটাক করেছিল। বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার পরেই আমার বাবা মারা যায়। বাবা ছাড়া আমার কেউ নেই পৃথিবীতে। এ কথা আমি কাউকে বলিনি এমনকি তোমাকেও না। আর তখনই সব উল্টে পাল্টে গেল। আমি অসহায় হয়ে পড়লাম। আর তুমি আমাকে জানিয়েছ দুমাস পরে তোমার বিয়ে। আমি কী করব। বাবা নেই। এই দুমাসে কী করে একটা কাজ পেয়ে তোমার বাড়িতে যাই সম্বন্ধ নিয়ে। বন্ধুরা বলেছিল যে ওরা ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু বাবা যখন চলে গেল তখন অনাথ ছেলের সঙ্গে তোমার বাবা মা যে একটা নিষ্কর্মা ছেলের বিয়ে কখনই দেবে না আমি জানি। তাই সেদিন সুলেখা সব জানিয়ে এই মিথ্যাটা সাজালাম। সুলেখাও অবশ্য অবাক হয়েছিল সব শুনে। কিন্তু আমার কোনও রাস্তা ছিল না। আর আমি কখনোই চাই না তুমি আমাকে বিয়ে করে একটা খারাপ জীবন কাটাও। রিয়া প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো। বলে সৃঞ্জয় মাথা নিচু করে থাকল।
রিয়া কোনদিনও ভাবেনি এমন একটা দিন আসবে তার জীবনে যেদিন কিনা এমন একটা ভয়ংকর স্বীকারোক্তি সে শুনবে। তাও আবার তার জীবন নিয়ে। জীবনের ব্যার্থ প্রেমের কারণ জানবে সে। তার মুখে কোনও কথা আসছিল না। মুখ শুকিয়ে গেছে। রিয়ার চোখের কোনে জল এসে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল শুধু। সৃঞ্জয় মাথা নিচু করেই ফিরে যাওয়ার পথ ধরল। মুখে আর একটি কথাও না বলে সৃঞ্জয় ফেরার পথ ধরল। সে নিজেকে মুক্তি দিল একটা বিরাট অসহনীয় যন্ত্রণার বিষ থেকে। বিষন্ন হৃদয় নিয়ে সে ফিরল তার পথ। সুলেখা আজকেও তার সঙ্গে দিয়েছে। সে জানত আজ সুলেখা আজ তার বাড়িতে আসবে। সেও যেন মুক্তি পাবে। কিন্তু একটা বৃথা বিচ্ছেদের মুহূর্তের কথা সে অতটা অনুমান করতে পারেনি। সে শুধু চাইত রিয়া যেন তাকে ভুল না বঝুক।
রিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীর থেকে একটা কাঁপুনি এসে তাকে জানাল তার অবস্থান। মাথা ভনভন করছে তার। হঠাৎ তার মনে পড়ল সৃঞ্জয় তাকে ছেড়ে চলে গেছে। রিয়া একটিবার পিছন ফিরে তাকাল।
[ সমাপ্ত ]