কাম
কলেজ লাইফে যতদূর জানতাম সুজাতা আর অমিয়র মধ্যে লাভ চলছিল । কিন্তু সুজাতা অমিয়কে ছেড়ে তাপস স্যরকে কেন বিয়ে করল সেটা বোঝা গেল না। বাইক চালাতে চালাতে এই কথাগুলই আজ মাথায় আসছে বিনয়ের। অফিস থেকে বেড়িয়ে তাপস স্যরের বাড়িতেই যাচ্ছে বিনয়। স্যর বাড়িতে ডেকেছেন। তাপস স্যরের থেকেও বড় কথা সুজাতা নিজে আজ ফোন করে বলেছে অপিসের পর ওদের ফ্ল্যাটে একবার যেতে। সুজাতার এই অনুরধ উপেক্ষা করতে পারেনি বিনয়। কলেজ লাইফের কথা আজও সে কী করে ভুলে যাবে। একটা সময় সুজাতাকে তার ভাল লেগেছিল। সেইসময় বিনয় বুঝেছিল সুজাতা আসলে অমিয়কে ভালবাসে। নিজে থেকেই সরে গিয়েছিল তাপস। তারপর কেটে গেল বেশ কতগুল বছর। যেদিন সুজাতার সঙ্গে আবার দেখা হল সব জানতে পারল বিনয়। বাজাজ ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রাইভেট কোম্পানির মালিক তাপস দাসের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে সুজাতার।অমিয়র কথা জানতে চেয়েছিল বিনয় কিন্তু সুজাতা বিষয়টা একেবারেই পাত্তা দিল না।বিনয়ের আক্ষেপ হচ্ছে তাহলে কী সুজাতাকে সেইসময় ভুল বুঝেছিল! মাত্র পনের হাজার টাকা মাইনে শুনে সুজাতা সেদিন ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বিনয়ের হাতে দিয়ে বলেছিল আমাদের কোম্পানিতে চলে এসো আমি তোমার চাকরির ব্যবস্থা করে দেব। সুজাতার কারনেই চাকরিটা জুটে গিয়েছিল বিনয়ের। আজ সে প্রায় লাখ টাকার মত মাইনে পাচ্ছে।এখন কুড়িটা শাখার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদ সামলাতে হচ্ছে তাকে। বোনের বিয়ে দেওয়া নতুন ফ্লাট কেনা বাবার চিকিৎসা সবই এই চাকরির দরুনিই হয়েছে।তাপস স্যরের অবর্তমানে কখনো কখনো সুজাতা অফিসে আসতো। আড়চোখে বিনয়ের সঙ্গে চোখা চুখি হয়েছও কয়েকবার। বিনয়ের ভারি ভাল লাগে সুজাতাকে দেখতে যা সে বাইরে প্রকাশ করতে পারে না। নানান কাজের বিষয় নিয়ে সুজাতার ফ্ল্যাটে বেশ কয়েকবার গিয়েছিল বিনয়। তাপস স্যরের সঙ্গে কোথাও হয়েছিল বিস্তর কিন্তু সুজাতার সঙ্গে যেন একটা আলাদা সম্পর্কের দোলনা দুলছে। সেই সম্পর্কটা আসলে যে কি সেটা সেটা আজও সঠিক ভাবে ধরতে পারছে না বিনয়। সুজাতা কি তাকে ভালবাসতে চাইছে ?সুজাতা কি কাছে আসতে চাইছে? সেটা আরও একবার আনুধাবন করতে চাইছে বিনয়। আর সেই কারনেই আজ আরও একবার সুজাতার ফ্ল্যাটে যাবার অনুরধটা সে রেখেছে।
বাইকটা ফ্ল্যাটের নিচে পারকিং করে কলিং বেল টিপল। ঘড়িতে ছ’টা বাজে। দরজা খুললেন স্বয়ং তাপস দাস। আমি জানতাম তুমি আসবে, এসো এসো। রাস্তায় অসুবিধা হয়নি তো? আমাকে একটা ফোন করতে পারতে গাড়ি পাঠিয়ে দিতাম।
না না কোন অসুবিধা হয়নি।
ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বিনয়কে সোফায় বসায়। তাপস বাবু নিজে মুখোমুখি অপর সোফায় বসে।তোমার মত ট্যালেন্ট ছেলে পেয়ে সত্যি আমি খুব গর্বিত। তুমি কোম্পানির হয়ে অনেক পরিশ্রম করেছ।
বিনয় লাজুক মুখে মাথা নিচু করে, এটা তো আমার ডিউটি স্যর।
না শুধু ডিউটি বললে হবে না। তোমার মত কত ছেলেই তো কাজ করছে কই তাঁরা তো মাত্র তিন বছরের মধ্যেই কোম্পানির ম্যানেজার হতে পারেনি। কোম্পানির কুড়িটা শাখার দায়িত্ব তুমি সামলাচ্ছ। তাহলে কেন কোম্পানির মালিক তোমাকে আদর করে তার ফ্ল্যাটে ডাকবে না বল।
বিনয় কিছু বলে না। চুপ করে থাকে সে। আসলে কথা বলার ভাষা সে খুঁজতে চাইছিল।
ভাবছ তোমাকে আজ বাড়িতে ডেকেছি কেন। কী তাই তো?
বিনয় মুখে কিছু না বলে মাথা নারে।
আসলে তোমাকে আমি সব সময় দেখেছি কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে। তাই চাইছিলাম তোমার সঙ্গে একটু পার্সোনালই সময় কাটাই। তোমার আপত্তি নেই তো?
না না কী বলছেন।
সত্যি কথা বলতে কী সারাটা জীবন আমিও কেবল কাজ আর কাজই করে গেলাম। অর্ধেকটা জীবন বাইরেই কাটিয়েছি। তাই এখন মাঝে মাঝে রিলাক্স হতে ইচ্ছে করে। তোমাকে দেখলে আমার নিজের অতীত মনে পরে। একদিন আমিও তোমার মত ছিলাম। এই দেখো তোমাকে বসিয়ে বকবক করে যাচ্ছি কি দেব বল ডাণ্ডা না কফি… এই দেখো কে এসেছে।
ভিতর ঘর থেকে বেড়িয়ে এল সুজাতা। গোলাপি রঙের সালোয়ার কামিজ পরা সুজাতাকে অসাধারণ সুন্দরী লাগছে। বিনয় সুজাতার দিকে চেয়ে থাকে। চোখ সরাতে পারে না। সুজাতার সমস্ত শরীর থেকে রূপের ছটা বেড়িয়ে আসছে। নিখুঁত তার শরীরের অঙ্গ।যৌনতার আবহে মোরা নারী মহিমার পরিপূর্ণ প্রকাশ। এসেছ বিনয়।
মুখ নামিয়েও বিনয় আবারও সুজাতার মুখের দিকে চায়। সুজাতার মুখে হাসির রেখা। বিনয়ের মনে হল যেন মহাকালের বুক চিরে অফুরন্ত কোন উল্লাস বিনয়ের সমস্ত শরীর মনকে ছেয়ে ফেলল।
যাও যাও বিনয়ের জন্য কিছু নিয়ে এস। এই তুমি বলেলে নাতো কী দেব ডাণ্ডা না কফি।তাপস বাবু জিজ্ঞেস করে।
কফি দিন।
সুজাতা ভিতরে যায়।
বল তোমার ইনভেস্টমেন্ট একাউন্টগুল সঠিক রেসপন্স করছে তো?
কয়েকটার টাইম এক্সপেন্ড হয়ে গেছে তবে বাকি গুলো ঠিকিই আছে। আসা করছি কিছুদিনের মধ্যে ওইগুলোকেও কভার করে নেব।
চার্টার একাউন্টার এম সি এ পোর্টালগুলো কী করছে?
কাজ করাচ্ছি ওদেরকে দিয়ে তবে ওদের চার্জটা বড্ড বেড়ে গেছে।ইয়ারলি পনের লাখ চাইছে।
তুমি তাই দিচ্ছ নাকি?
না স্যর এই কারেন্ট ইয়ারে আমি দশ লাখে কাজ সেরেছি।
সুজাতা কফি নিয়ে এল। বিনয় কফিতে চুমুক দেয়। সুজাতা তাপস বাবুর পাসে বসে। বিনয়কে জিজ্ঞেস করে, তোমার সাউথ কলকাতার আমানতগুলর খবর কী?
সাউথ কলকাতা থেকে আমানতকারীদের টাকাই জমা পরছিল না। বাধ্য হয়ে আমাকেই শাখাগুলোতে যোগাযোগ করতে হয়েছিল। আমার মনে হয়ে কেউ বা কারা একাউন্টে টাকা জমা করছিল না। তাই লাস্ট এক বছর ধরে একাউন্টগুল একটিভ ছিল না।
সুজাতা তাপসবাবুকে বলে ওঠে, দেখেছ বিনয় কেমন কাজের। আচ্ছা বিনয় এখনও তুমি বিয়ে করছ না কেন? এখন তো তুমি ভাল রোজগার করছ।
বিনয় একটু লাজুখ মুখে মাথা নিচু করে।
সুজাতা বলল, কী এখনও মনের মত কাউকে পাওনি নাকি?
আঃ তুমি আবার এইসব কথা বলে বিনয়কে লজ্জা দিচ্ছ কেন। তাপসবাবু এবার উঠে দাঁড়ালেন। আমি পাশের ঘর থেকে আসছি বলে তাপসবাবু পাশের ঘরে গেলেন।
তাপসবাবু চলে যেতে বিনয় যেন নিজেকে আর সংযত রাখতে পারল না। সুজাতার মুখের দিকে চেয়ে থাকে।
সুজাতা বলল, বোকার মত কী দেখছ আমাকে।
বিনয়ের যেন হুঁশ ফেরে, কই কিছু না তো।
পুরুষমানুষের চোখের ভাষা নারীরা কিন্তু বোঝে।
সরি কিছু মনে করবেন না।
সুজাতা হেসে ওঠে। তুই এখনও সেই আগের মতই লাজুক ছেলেই রয়ে গেলি রে। আমি তো এমনি জাস্ট…
বিনয় সুজাতার মুখের দিকে তাকায়। সুজাতার একগাল হাসি তার বুকের সমস্ত সংযত আধার ভেঙে দিয়েছে। সুজাতাও মুখ নামিয়ে চুপ করে থাকে। সমস্ত ঘর জুরে নিস্তব্দতা নেমে আসে।
ঈর্ষা
পাশের ঘর থেকে ফোনে কথাবার্তা সেরে তাপস বাবু ফিরে এসে সুজাতার একেবারে গা ঘেঁসে বসে। বিনয় লক্ষ করল তাপসবাবুর শরীর সুজাতাকে স্পর্শ করেছে। বিনয়ের বুকে যেন কাঁটা বিঁধছে। তাপস স্যরের বয়স আন্দাজ পঞ্চাশের উপরে হবে। সুজাতার সঙ্গে একদম মানায় নি। সুজাতা কি করে যে এই বুড়োটাকে পছন্দ করল! তাপস মনে মনে ভাবে সুজাতা যদি আজ আমার হত দুজনের জীবনটা কত রঙিন হত। অফিসে সুজাতা যখন তাপস স্যরের সঙ্গে একসঙ্গে গাড়ি থেকে নামত একসঙ্গে অফিসে ঢুকত তখন ভারী হিংসা লাগত বিনয়ের। কেন যে বিধতা তার জীবন থেকে সুজাতাকে সরিয়ে নিল। আর কী কখনো পাওয়া যাবে সুজাতাকে!
কী বিনয় কিছু ভাবছ মনে হয়ে। সুজাতা বলল।
না না কিছু না।
কিছু একটা ওর মনের মধ্যে চলছে মনে হয়ে। তাপসবাবু বলল।
বিনয় একটু হাসার চেষ্টা করে নিজেকে হালকা করে।
মনের মধ্যে কোন কিছু আটকে রাখবে না বুঝলে। এই মন জিনিসটা ভারী সমস্যার। এটা একবার ফাঁদে পরলেই কাজের পক্ষে মহা সমস্যা হয়ে উঠবে। তাপস বাবু হাসে।
সুজাতা বলে ওঠে, বাবা তুমি কি বিনয়কে সাইকোলজির শিক্ষা দিচ্ছ নাকি।
সাইকো তো সব মানুষের মধ্যই আছে। সবাই এক একটা নিজস্ব স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে।
কিন্তু সব স্বপ্ন তো সত্যি হয় না। সুজাতা বলল।
তাপসবাবু চটপট উত্তর দিলেন, আর এখানেই তো সাইকোর উৎপত্তি। মরে যাওয়া স্বপ্ন থেকে সৃষ্টি হয়ে এক একটি সাইকো।
দুজনের কথোপকথন শুনে বিনয়ের যেন অস্বস্তি লাগছে। তোমাদের মত সুখী জীবন পেলে আমিও মন খুলে অনেক কথা বলতে পারতাম।
এই দেখো বিনয় কোন কথাই বলছে না। বিনয় আমি তোমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসছি। সুজাতা তাপসবাবুকে জিজ্ঞেস করে, এই শোনো না বিনয়ের জন্য কি বানাই?
সুজাতার কথা শুনে বিনয়ের মনটা যেন মুচকে গেল। স্বামীর প্রতি সুজাতার এই অন্তরঙ্গতা বিনয়কে যেন শেষ করে দিচ্ছে। ঈর্ষা বিনয়ের মনকে এতটাই ক্ষত করে দিল যে বিনয় দুজনের আর কোন কথাই শুনতে পেল না।
সুজাতা কিচেনের দিকে গেল। তাপসবাবু বিনয়কে বলল, আজ রাতটা আমাদের এখানেই থেকে যাও। দুজনে মলে অনেক কথা হবে।
না না বাড়ি ফিরতে হবে।
দেখো এই সুযোগ বার বার আসবে না। আমিও সব সময় ফ্রি থাকি না। তাই একটা রাত দুজনে মিলে একটু আনন্দ করলে ক্ষতি কি। দুজনে মিলে একটু রিলাক্সে ড্রিংক করবো।
না স্যর বাড়িতে চিন্তা করবে।
বাড়িতে ফোন করে বলে দাও না। আর যদি বল সুজাতা মেডাম কী ভাববে তাহলে একদম চিন্তা কর না তোমার শুদ্ধতা এতটুকুও নষ্ট হবে না। কী রাজি তো। তাপসবাবু এবার গলা হাঁকায়, এই সুজাতা একটু এইদিকে এস তো। সুজাতা কিচেন থেকে ফিরে আসতেই তাপসবাবু সোফা থে উঠে সুজাতার দুই বাহুতে হাত রেখে বলে। আজ বিনয় আমাদের বাড়িতেই থাক । ওর সঙ্গে একটু ড্রিংক করবো তুমি মানা কর না।
ইস এইসব কি বলছ বিনয় কি ভাববে।
সুজাতার সঙ্গে তাপসবাবুর এই আহ্লাদী বিনয়ের একদম সহ্য হচ্ছে না। বিনয়ের মনে হচ্ছে সুজাতার ওই শরীর একান্ত বিনয়ের নিজস্ব। সুজাতাকে স্পর্শ করার কোন অধিকার তাপসবাবুর নেই।
সুজাতা বলল, তোমরা যা ভাল বোঝ কর।
লোভ
বিনয় আজ রাতটা তাহলে আমাদের সঙ্গে থেকে যাও। সুজাতা তুমি বিনয়ের জন্য স্পেসাল কিছু বানাও।আমাদের কোম্পানির ডিরেক্টর ম্যানেজার বলে কথা। তাপসবাবু হাসে। কি বিনয় এখনও কী ভাবছ?
রাতে বাড়ি না গেলে বাড়িতে কী ভাববে।
ফোন করে বুঝিয়ে বলে দাও।কী সুজাতা তুমি বিনয়কে থাকার জন্য অনুরধ করলে না। বল বল তুমি না বললে ও থাকবে না।
সুজাতা বলল, উনি যখন এত করে বলছে থেকেই যাও না।
আচ্ছা তুমি কী চাও না আমি সুজাতা তোমার পাসে থাকি।
বিনয় তাপসবাবুর মুখের দিকে তাকায়।
সুজাতা বলল, আমরা তোমাকে আপন করছি আর তুমি আমাদের পর পর ভাবছ।
না না এমন ভাবছ কেন। বিনয় হাত কচলায়।
জীবনে আমি হয়তো অনেক ভুল করেছি কিন্তু আমার বিশ্বাস তুমি কোন ভুল করবেনা। তোমার ওপর সেই বিশ্বাসটা ছিল বলেই আমি তোমাকে একদিন আমাদের কম্পানিতে এনেছিলাম। আমি জানি একটা রাত কারুর বাড়ি কাটালেও তোমার কোন ভুল কাজ হবে না।ভাব আবেগের বসে কথাটা বলল সুজাতা।
বিনয় সুজাতার মুখের দিকে তাকায়। সুজাতাও আর চোখে বিনয়ের দিকে তাকায়।
তাপসবাবু বলে উঠল, বিনয়ের ওপর আমার এতটাই ভরসা বেড়ে গেছে যে আমার ইচ্ছে বিনয়কে দ্যা সেকেন্ড ম্যান অফ কোম্পানির পদে বহাল করবো। তারমানে মালিকের পরবর্তী ম্যান। কোম্পানির সমস্ত শাখার দায়িত্বে থাকবে বিনয়।
সুজাতা সঙ্গে সঙ্গে হাততালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে।
বিনয় তোমাকে এই সারপ্রাইজটা দেব বলেই বাড়িতে ডেকেছি। কিছু বুঝলে এবার।
বিনয় লাজুক মুখে হাসে।
তাপস বাবু আরও বললেন, আর সেই জন্যই আজ রাতটা আমরা ইঞ্জয় করে কাটিয়ে দেব। এমন সুযোগ বার বার আসে না বিনয়।
একটা রাত সম্পূর্ণ গোটা একটা রাত সুজাতার অনেক কাছে সত্যি এমন সুযোগ জীবনে দ্বিতীয়বার আর আসবে না। সুজাতার সঙ্গে গোপন পরিণয় আরও অনেক দূর গরাতে পারে। কোন মতেই এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। ঠিক আছে আমি বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।
বিনয় ফোন করতেই তাপসবাবু বলল, তুমি একটু বস আমি সামনের দোকানটা থেকে সিগারেটটা নিয়ে আসি। বিনয় সোফায় বসে। মুখোমুখি সোফায় বসে সুজাতা।
দম্ভ
বন্ধ দরোজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে তাপসবাবু। আমি তাপস দাস জীবনে কখনো হার মানতে শিখিনী। ছোট খাট এক চাকর কিনা সুজাতার সঙ্গে প্রেম করবে আর আমি তা মেনে নেব। এ আমি কিছুতেই মেনে নেব না। আজ ওদের হাতে নাতে ধরতেই হবে। অনেকদিন আগের থেকেই পরিকল্পনা ছিল ছেলেটাকে একদিন বাড়ি ডেকে এনে কেসটা ধরব। জীবনে বহু ধকল সহ্য করেছি আরও একটা না হয়ে করলামিই। দুজনকেই আজ উচিৎ শিক্ষা দেব।দরজা ঢেলে ভিতরে ঢোকে তাপস। দুজনে মুখোমুখি বসে গল্প করছে। সরি কিছু মনে কর না আসতে দেরি হয়ে গেল। সুজাতা তুমি কিচেনে গিয়ে বিনয়ের জন্য কিছু বানাও।
কী বল ফিরতে হবে।সামনের দিকে এগোতে গেলে কখনো কখনো বাইরেও থাকতে হয়ে। তুমি কি আর এগোতে চাও না নাকি এখানেই ফিনিশ। ইয়ং মেন বাইরের জগতটাকে চিনতে শেখ। এই চেনাতা জীবনে বড় হওয়ার পথের এক অঙ্গ।আমাকে দেখো একটা সময় বাইরে হোটেল রেস্টুরেন্টে পরে থেকে জীবন কাটিয়েছি কোন মানুষ আমার কোন ক্ষতি করতে পারেনি আর তুমিত তো সামান্য এক ছোকরা মাত্র। আজ রাতটা আমার সঙ্গে ইঞ্জয় করে কাটিয়ে দাও দেখি।
না স্যর এইসব ব্যাপার নয়।
তাপসবাবু গলা হাঁকিয়ে সুজাতার উদ্দেশে বলে, সুজাতা তুমিই একটু বিনয়কে বোল না ও এখনও লজ্জা পাচ্ছে।
সুজাতা কিচেন থেকে ফিরে আসে, তুমি কিন্তু ওকে বেশি খাওয়াবে না।
সুজাতা বিনয়ের মুখের দিকে তাকায়। বিনয়ও সুজাতার দিকে তাকিয়ে থাকে। সুজাতা বলল, ওনার কথা শুনবে না বেশি খাবে না।
বিনয় মুখে কিছুই বলতে পারল না।
সুজাতা কিচেনে যায়। তাপসবাবু আলমারি খুলে বিদেশী মদের বোতল বার। বিনয়কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে তাপসবাবু বললেন, আরে এখনও তুমি লাজুক হয়ে বসে আছো এসব আমি তোমাকে একটু জাস্ট আনন্দ দেবার চেষ্টা করছি। ডোন্ট মাইন্ড।
তাপসবাবু নিজে এক পেগ মদ খেয়ে নিয়ে আর একটা গ্লাস বিনয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। নাও খেয়ে নাও সঙ্কোচ করছ কেন আরে সুজাতা কিছু মনে করবে না ।নাও নাও খাও।
বিনয় মদটা খেয়ে নিল।
তাপসবাবু বলে চলল, যান সুজাতা আমাকে প্রথমে বিয়ে করতে চায়নি। বলতে পার একপ্রকার আমিই ওকে জোর করে বিয়ে করেছি। ক্ষমতা … ক্ষমতা বুঝলে। পুরুষমানুষের ক্ষমতা না থাকলে তার কোন দাম নেই। আর সেই ক্ষমতা আমি তিল তিল করে গরেছি। তোমাকে এই কারুনেই আমি এইসব কথা বলছি কারুন আমি চাই আমার মতই তোমার মধ্যও ক্ষমতা তৈরি করার শক্তি আসুক।
তাপসবাবু আর এক পেগ মদ বিনয়কে দিয়ে বলল। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা । এই জিনিসটা কখনো কারুর সঙ্গে করে না। এই তাপস দাস বিশ্বাসঘাতকতাকে ছেড়ে দেয় না।
সুজাতা প্লেটে করে খাবার নিয়ে এল।
তাপসবাবু বলে চলল,অর্থ। জীবনে অর্থই সব বুঝলে। টাকা দিয়ে সব কেনা যায় মান সন্মান যশ। নইলে এই দেখো না সুজাতার মত মেয়ে কিনে আমার মত অ্যানম্যাচিং লোককে বিয়ে করে?
কথাটা বোধহয় সহ্য হল না সুজাতার। বলে উঠল, তোমার এই দম্ভই পতনের কারুন জেনে রাখবে।
দম্ভ একদিনে হয়না মাই ডার্লিং তার পিছনে ক্ষমতা দরকার। তাপসবাবু আর এক পেগ মদ গলায় ঢেলে নিল।
সুজাতা বিনয়কে বলে, তুমি কিছু মনে কর না। ও ড্রিংক করলে ভুল বকে। সুজাতা পাশের ঘরে চলে গেল।
মোহ
খাটে বসে সুজাতা হাতের তালু মুঠো করে। আজ রাতেই তাকে এই বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে। অমিয়র সঙ্গে কথাবার্তা ঠিক হয়ে আছে। শুধু সুজাতার একটা ফোনের অপেক্ষা। ফোন করলেই অমিয় গাড়ি নিয়ে বাগানের ধারে চলে আসবে। তারপর দুজনে মিলে একেবারের জন্য এই দেশ ছেড়ে পালাবে। পালিয়ে যাবার কিছুদিন বাদেই চিঠি মাওফত তাপসকে সব জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বিনয় যে আজ থেকে যাবে সেটা জানা ছিল না। ভালই হল বিনয়ের সঙ্গে তাপস মদ্যপানে মগ্ন থাকবে এইসুজগে পালানর সুবিধা হবে। সেই কলেজ লাইফেই অমিয়র সঙ্গে ভালোবাসা জন্মিয়েছিল সুজাতার মনে। মাঝখানে কি করে যে তাপস এসে পরল। তাপসবাবুর টাকা পয়সা দেখে বাবা মায়ের কথা শুনে বিয়েটা করেই ফেলেছিল সুজাতা। পরে অমিয় আসাতে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। অমিয়কে সুজাতা অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু তবুও অমিয় কিছুতেই সুজাতাকে ছেড়ে থাকতে পারছে না। শেষে অমিয়র প্রেমের কাছে হার মানতে হয় সুজাতাকে। অমিয় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সুজাতকে নিয়ে সে এই দেশ ছেড়ে পালাবে। নতুন একটা সংসার গরবে। তাপসের কাছে সুজাতার জীবন হাঁপিয়ে উঠেছিল। বিয়ের পর থেকে তাপস ব্যবসার জন্য বাইরে বাইরে থাকত। একটা মহিলার আশা আকাঙ্ক্ষার কোন মূল্য নেই তার কাছে। কাজ থেকে মধ্যরাতে বাড়ি ফিরে এসে শরীরের কোন খিদে তাপসের মধ্যে ছিল না। একা একা জীবন কাটাতে হচ্ছিল সুজাতকে। এমনি এক সময় অমিয়র সঙ্গে দেখা হয়ে যায় সুজাতার। সম্পর্ক গভীর থেকে গভিরতর হয়ে ওঠে। অবশেষে দুজন পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।
সময়ের অপেক্ষা করে সুজাতা। আজ রাতেই পালাতে হবে তাকে। কিন্তু বিনয়ের আগমনে মনটা ভারী খারাপ লাগছে সুজাতার। বিনয় ছেলেটা সত্যি ভাল। কলেজ লাইফে আমাকে চেয়েছিল। বেচারি আজও আমাকে চায়। নিঃশ্বাস ফেলে সুজাতা, বিনয় তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে গ্রহন করতে পারলাম না। সুজাতার ফোন বেজে ওঠে। অমিয় করেছে- কি গো আর কতক্ষণ।
আমি তোমাকে একটু পরে ফোন করছি।ফোনটা রেখে সুজাতা বিনয়দের কাছে যায়।
ক্রোধ
তাপসবাবু মদের নেশায় সোফায় গা হেলিয়ে বসে আছে। সুজাতা বিনয়কে বলে তোমরা এবার খেয়ে নাও।
এখনিই খাব রাত তো এখনও অনেক বাকি ডার্লিং। বিনয়ের সঙ্গে কথা বোল একটু।এই দেখো না তুমি চলে গেছ বলে বিনয়েরও ভাল লাগছে না।
এই দেখো তোমার নেশা হয়ে গেছে দেখছি। সুজাতা বলল।
নেশা তো তোমাদের দুজনের মধ্যে হয়েছে। কি বল বিনয়।
স্যর কি সব বলছেন।
চুপ কর শালা। তাপসবাবু উঠে দাঁড়ায়। দুজনের মধ্যে প্রেম কাহিনী চলছে আমি কিছু জানি না ভাবছিস। সুজাতার সঙ্গে রাত কাটাবি। খুব সখ না শালা। ভাল ছেলেরা কখনো পরের ঘরে রাত কাটায় না রে।
অনেক হয়েছে এবার তুমি থামবে। সুজাতা মেজাজ হারায়।
স্যর আপনি একটু শান্ত হন।
তাপসবাবু উত্তেজনায় সোফার তলা থেকে বন্দুক বার করে দুজনের দিকে উঁচিয়ে বলে আজ তোদের দুজনকেই একেবারের জন্য শেষ করে দেব।
সুজাতা চিৎকার করে বিনয়কে বলে এই দেখো এই মানুষটার আসল রুপ। বিয়ের পর থেকে আমাকে জালাচ্ছে। বিনয় তুমি ওকে একেবারে শেষ করে দাও।
বিনয় এক লাফে তাপসবাবুর হাত থেকে পিস্তলটা কেরে নিয়ে তাপসবাবুর দিকে তাক করে। সুজাতা চিৎকার করে বলে , বিনয় কিল হিম।
বিনয়ের হাত কাঁপে। এ তুমি কি বলছ সুজাতা উনি তোমার স্বামী। একটু নেশার খেয়ালে…
না না বিনয় তুমি জানো না এই মানুষটা একটা জানোয়ার।
না সুজাতা রাগের বসে এইভাবে বোল না। আচ্ছা আমি এখনি চলে যাচ্ছি।
না বিনয় তুমি চলে গেলে ও আমাকে মেরে ফেলবে। প্লিস বিনয় তুমি আমাকে বাঁচাও।
বিনয় হতভম্ভ হয়ে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সুজাতা চিৎকার করছে বিনয় শুট হিম। মেরে ফেল জানোয়ারটাকে। তোমার ভালোবাসার দিব্য।
তাপসবাবু হেসে ওঠে এক পা এক পা করে বিনয়ের দিকে এগিয়ে যায়। আমকে মারার ক্ষমতা আজ পর্যন্ত কারুর হয়নি। তুই তো সামান্য এক ছোকরা মাত্র। আমি আজ তোদের দুজঙ্কে নিয়েই মরব।
সুজাতা শরীরের পোশাক তুলে বিনয়কে দেখায়। দেখো বিনয় দেখো বিনয় এই মানুষটা কি ভাবে আমার ওপর অত্যাচার করেছে।
অবাক চোখে বিনয় দেখে সুজাতার পিঠে কালো কালো দাগ। শয়তান এইভাবে তুই আমার সুজাতাকে কষ্ট দিয়েছিস।
বিনয় শুট হিম। সুজাত চিৎকার করছে।
বিনয়ের হাত কাপছে। না না আমি পারব না।
পারতে তোমাকে হবেই বিনয়। আমার ভালোবাসার দিব্য। শুট হিম।
তাপসবাবু ছিটকে বিনয়কে ধরতে যায়। আর তখনি বিনয়ের আজান্তেই পিস্তলের টিগার থেকে গুলি বেড়িয়ে যায়। তাপুসবাবু মেঝেতে লুটিয়ে পরে।
পিস্তল হাতে বিনয় তাপসবাবুকে জড়িয়ে ধরে। সুজাতা বারান্দা দিকে যায়। অমিয়কে ফোন করে। অমিয় তুমি এখনি চলে আস আমি তৈরি।দশ মিনিটের মধ্যে এখান থেকে পালেতে হবে। কুইক সময় নেই।
ফোন হাতে পিছন ঘুরতেই সামনে পিস্তল হাতে বিনয় দাঁড়িয়ে। হাত থেকে ফোন পরে যায় সুজাতার। কে এই অমিয়। যে তোমাকে এক সময় ভালবাসত।কোথায় পালাবার কথা বলছিলে?
সুজাতা কাঁপা গলায় বলে বিনয় বিশ্বাস করে যা ঘটেছে আমাদের একান্ত ইচ্ছায় ঘটেনি।কেমন করে যে সব ঘোটে গেল! দেখো বিনয় পুলিশ কিন্তু এসে পরবে আর সম্পূর্ণ ভাবে তুমি ফেঁসে যাবে।
সুজাতার ফোন বাজে। বাগানের দিকটায় আলো জ্বলছে মনে হয়ে কেউ একজন এসেছে।
দেখো বিনয় আমাকে যেতে দাও।
অমিয় ততোক্ষণে বারান্দার জানালার কাছাকাছি এসে পড়রেছেভিতর থেকে বিনয় অমিয়কে চিনতে পারে। সুজাতার দিকে তাক করে থাকা পিস্তলের টিগারে চাপ দেয় বিনয়। রক্তাক্ত অবস্তায় নিচে পরে যায় সুজাতা। বিনয় ঘর্মাক্ত শরীরে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সুজাতার কপাল থেকে বেড়িয়ে আসা রক্ত গড়িয়ে বিনয়ের পায়ের কাছে চলে এসেছে।