যেমন কর্ম তেমন ফল| কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য | শম্পা কর| Bengali Stories for Matured
0 (0)

ঘাড়ের পাশে আলতো স্পর্শে রিমার সারা শরীরে শিহরন জেগে উঠলো। তারপর তার ডান গালে একটা নরম স্পর্শ অনুভব করল। গাল থেকে সরে আসা হাতের দিকে লক্ষ্য করেই বুঝতে পারল বিষয়টা। পরক্ষণেই গালের উপর একটা শীতল কোমল স্পর্শে চোখ দুটো আপনা হতেই বুজে এলো। গায়ের লোম খাঁড়া হতে শুরু করেছে তার; আঙ্গুলগুলো যেন সর্বশক্তি দিয়ে জাপটে ধরতে চায় সদ্য উপহার পাওয়া স্মার্টফোনটিকে। ঠোঁটে আলতো চাপ অনুভব করতেই ঠোঁটটা কেপে উঠলো রিমার। ক্রমেই শরীর ও মন উত্তেজনার শিখরে পৌঁছতে লাগল উভয়েরই। উত্তেজনা শেষে যখন ক্লান্তি অনুভব করল তখনই যেন হুশ ফিরল রিমার। এ কি করল সে! আর অরিত্রও বা কেন করল এমন! সে তো তাকে বলেছিল কোন ভয় নেই তোমার। আমি তোমায় ভালোবাসি, তোমার শরীরকে নয়। তাহলে! আর সেও বা কেন বাধা দিলনা অরিত্রকে? তবে কি সে চাইছিল তার সাথে এটা ঘটুক? নিজের বিবস্ত্র শরীরের দিকে একবার তাকাল রিমা। সে যদি চাইত তার সাথে এমনটা ঘটুক তাহলে কেন বিবস্ত্র অবস্থায় নিজেকে দেখে এত খারাপ লাগছে তার?

             রিমার চোখে ঘুম নেই। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে রাত এগারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট। বাড়ি ফেরার পর থেকে এখন পর্যন্ত অরিএকে কম করে বার ত্রিশেক কল করেছে রিমা। দম বন্ধ হয়ে আসছিল তার। ঠিকমতো বাড়ি ফিরেছে তো অরিত্র? ফোনটা সুইচ অফ করে রেখেছে কেন? চার্জ নেই নাকি রাগ করে? কিন্তু… এমনটাতো করে না কখনো! হাজারে চিন্তা মাথায় আসে তার। হোয়াটসঅ্যাপ খুলে একটা টেক্সট করে, তুমি ঠিক আছো তো? কিন্তু লাভ তো কিছু নেই। ফোনটাই যেখানে সুইচ অফ।

                আরো বার পাঁচেক চেষ্টা করার পরেও যখন ফোনে পেলোনা তখন ভয়ে কেঁদে ওঠে রিমা। এমন সময় একটা মেসেজ আসে ফোনে। আমি ঠিক আছি। সাথে সাথে নাম্বারটা আবার ডায়াল করে রিমা। ফোনটা রিসিভ হওয়ার সাথে সাথেই রিমা কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলে ওঠে, এতক্ষণ কোথায় ছিলে? ফোনটা সুইচ অফ ছিল কেন? তুমি ঠিক আছো তো? কখন ফিরেছো? ফোনের ওপার থেকে ঘুম জড়ানো বিরক্তিসূচক কন্ঠে উত্তর আসে, উফ্ একসঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন করলে উত্তর দিই কি করে? রিমা চুপ করে যায়। আমি বাড়িতেই ছিলাম। ঘুমোচ্ছিলাম। রিমা বিস্মিত কন্ঠে বলে ওঠে ঘুমোচ্ছিলে! শরীরটার ওপর থেকে বেশ ধকল গেছে তো তাই। আর আমি এদিকে চিন্তায় চিন্তায় মরে যাচ্ছি। চিন্তা না করলেই পারতে, অবশ্য এরপর থেকে আর তোমায় আমার জন্য চিন্তা করতে হবে না। মানে? কি বলতে চাইছো তুমি? আমার মত একটা খারাপ ছেলের সাথে থাকার তোমার কোন দরকার নেই। রিমার গলার স্বরটা নিচু হয়, এখনো রাগ করে আছো আমার ওপর? না। তাহলে? তাহলে কি? দেখো তুমি তো জানো বিয়ের আগে আমার ওসব ভালো লাগে না। ভালো লাগে না নয় বরং একটু বেশিই ভালো লাগে, বেশ তো মজা নিচ্ছিলে আজ। যত্তসব ন্যাকামো! রিমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি ন্যাকামো করছি? তবে নয় তো কি? তোমার তাই মনে হয়? মনে হয় বলেই বললাম। যাই হোক এখন ফোনটা রাখো। তোমার সাথে বাজে বকবক করার মতো সময় নেই আমার। আমি বাজে বকছি? ধুর বাবা! রাতদুপুরে বিরক্ত লাগে! যত্তসব! বলে ফোনটা কেটে দেয় অরিত্র।

             শরতের রোদ ঝলমলে সকাল। পুজোকে আর মাত্র বিশ-পঁচিশ দিন বাকি। কলেজ ক্যাম্পাসে কাশফুলের সারি আর সবার মধ্যেই কেমন একটা খুশি খুশি ভাব। স্টুডেন্টরা শপিং নিয়ে ব্যস্ত আর টিচাররা পুজোর ছুটির আগে সিলেবাস টা এগিয়ে রাখতে। বইপ্রেমীরা পুজো উপলক্ষে পত্রিকাগুলো প্রকাশের অপেক্ষায়, লেখকরা নিজের লেখা প্রকাশিত হয়েছে এটা দেখার অপেক্ষায়।

             জয়ন্ত স্যার আজ কলেজ না আসায় ফিলোসফি ক্লাসটা আজ অফ যাবে। কৃষ্ণা কলেজ ক্যান্টিনে এসে বসলো। সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি আজকে। পর-পর দুটো টিউশন পড়ানো ছিল। খুব খিদে পেয়েছে মাসি… এক প্লেট কচুরি দাও সাথে দুটো সিঙ্গারা দিও। বাবা! বড্ড খিদে পেয়েছে গো।

            কৃষ্ণা কলেজের সেকেন্ড ইয়ার বাংলা অনার্সের ছাত্রী। কোমর পর্যন্ত ঘন কালো কোকড়া চুল, গায়ের রং শ্যামবর্ণ, গোলগাল চেহারা, দীর্ঘ নাসিকা সম্পন্ন একটা বছর কুড়ির মেয়ে। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ছাত্রী। টিউশন করে নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেকেই করতে হয়। না হলে এতদিনে বিয়ে করে সংসার করা ছাড়া গতি ছিল না। মা বিয়ে দেওয়ার কথা বললেও বাবা খুব সাপোর্ট করেন মেয়েকে তাই এখনো পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে কৃষ্ণা।

           খুব খিদে পাওয়ায় তাড়াহুড়ো করে খেতে গিয়ে বিষম খায় কৃষ্ণা। পাশের টেবিল থেকে কেউ একজন জলের বোতল এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে কিছুটা জল খেয়ে ধাতস্থ হয় সে। তারপর মুখ তুলে দেখে একটা ছেলে। ধন্যবাদ। না না এতে ধন্যবাদের কি আছে? একটু ধীরে খাও পরের ক্লাস শুরু হতে এখনো ঢের দেরী। অবাক হয় কৃষ্ণা! আপনি কি করে জানলেন! এখন সবে বারোটা বেজে কুড়ি। এখনো পর্যন্ত ক্লাসে যাওনি মানে এই ক্লাস টা করবে না বা ক্লাস অফ যাবে কাজেই পরের ক্লাস শুরু হতে এখনো ঢের দেরী। এবার একটু হাসে কৃষ্ণা ও! আমি তো চমকে গিয়েছিলাম। তা মাঝে মাঝে একটু চমকানো ভালো। একঘেয়ে জীবন কি কারো ভালো লাগে? বাই দ্যা ওয়ে তোমার নাম কি? কৃষ্ণা, কৃষ্ণা পাল। আপনার? অরিত্র ভৌমিক। লাস্ট ইয়ার ইংলিশ অনার্স। এবার তুমিও বাকিগুলো বলে ফেলো চটপট। বাংলা অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। ওয়াও! গ্রেট! বলেই পাশের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল অরিত্র। তারপর বলো তোমার বাড়ি কোথায়? এই সামনেই। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর কৃষ্ণা উঠে ওর ক্লাসের দিকে রওনা দেয়।

            পরদিন কলেজ ক্যান্টিনে আবার দেখা হয় দুজনের। অরিত্র প্রথমে ভাবেনি যে আজই দেখা হয়ে যাবে কৃষ্ণার সাথে যদিও ওর কলেজ ক্যান্টিনে বসে থাকার কারণ দেখা করাই ছিল। হাই? ওহ্! হ্যালো? তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য! কেন? হ্যাঁ, আসলে কালকে তোমার নাম্বারটা নেওয়া হয়নি তাই… কেন? আমার নাম্বার নিয়ে আপনি কি করবেন? না এমনিই জাস্ট… কফি খাবেন? হ্যাঁ, কেন নয়? মাসি?দু’কাপ কফি দিও। বসুন। হ্যাঁ, কখনো যদি কোনো দরকার হয় তাই নাম্বারটা কথা শেষ হতে না দিয়েই কৃষ্ণা বলে ওঠে নাইন – সেভেন অরিত্র দ্রুত মোবাইলে সেভ করে নেয় নাম্বারটা।

         হ্যালো! কে? আমি অরিত্র। বলুন? ব্যস্ত আছো? পড়তে বসেছি। আচ্ছা পড়ে নাও তারপর ফোন কোরো। ওকে। কৃষ্ণা? একটা কথা বলবো তোমায়? হ্যাঁ, বলুন না? ফোনটা রেখো না প্লিজ। ফোনটা ধরা থাক তুমি পড়ে নাও তারপর কথা বোলো। কিছু কি হয়েছে আপনার? সেরকম কিছু না মনটা একটু খারাপ তাই। মন খারাপ কেন? আসলে আমি একজনকে ভালোবাসতাম। বছরখানেক হলো তার বিয়ে হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হত। এখন আর হয় না কিন্তু মাঝে মাঝে ওর কথা মনে পড়লে মনটা বড্ড খারাপ করে। জানো তো! আমি না কখনো কাউকে আমার কষ্টের কথা বলি না পাছে ওরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে কিন্তু কেন জানিনা আজ তোমাকে বলতে ইচ্ছে হল হয়তো তোমার কাছে সেই ভরসার জায়গা টা পেয়েছি। এই দেখেছো তোমার পড়ার ডিস্টার্ব করলাম। তুমি পড়ে নাও ফোনটা রেখো না প্লিজ! আমি কথা বলবো না। খুব একা লাগছিল তাই তোমায় ফোন করেছি। না না ঠিক আছে আপনি বলুন আমি শুনছি। তোমার পড়া? আমার পড়া হয়ে গেছে আর একবার জাস্ট চোখ বুলিয়ে নিতাম। জানো তো অপুও না ঠিক তোমার মতো ছিল। তোমার মধ্যে আমি অপুকে খুঁজে পাই। কোন ক্লাসে পড়তো আপনার অপু? উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পর আর পড়েনি।  আমি তখন সেকেন্ড ইয়ার। আমাদের নিজস্ব বিজনেস আছে ঠিকই কিন্তু গ্রাজুয়েট না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে কি করে বিয়ের কথা বলি বলো? অপুকে বলেছিলাম আর একটা বছর অপেক্ষা করো কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেল! আচ্ছা ছাড়ুন। যা গেছে তা গেছে। এসব ভেবে কষ্ট পেয়ে এখন আর কোনো লাভ নেই। হ্যাঁ, ওই আর কি! আমার কথা বাদ দাও তোমার কথা বলো। আমার? হ্যাঁ, কাউকে ভালোবাসো তুমি? আমি? খিলখিল করে হেসে ওঠে কৃষ্ণা। কি হল হাসছো যে? হাসবো না? বলেই আবার হেসে ওঠে। এতে হাসির কি হল সেটাই তো বুঝছি না! আমার মত মেয়েকে কেউ কখনো ভালোবাসে? কেন? তুমি কিসে খারাপ? দেখতে। ধুস! এখনো মানুষ গায়ের রঙ দেখে নাকি? দেখে না বলছেন? শুকনো কন্ঠে প্রশ্ন করে কৃষ্ণা। অরিত্র এতক্ষণ এই জায়গাটাই খুঁজছিল। দুর্বলতা। মানুষের মন জয় করার উপায় দুটো উপায়। এক পেট; দুই দুর্বল জায়গায় প্রলেপ লাগানো। গায়ের রং যারা দেখে তারা আবার মানুষ নাকি? রূপ নিয়ে কি সংসার হয়? তার জন্য গুণের প্রয়োজন আর তাছাড়া রূপ আজ আছে কাল থাকবে না কিন্তু গুণটা থেকে যাবে।  ভালোবাসার জন্য একটা ভালো মনের প্রয়োজন হয় আর সেই মন যাদের আছে তারা গায়ের রং দেখে না। কথাগুলো শুনে চোখের জল এসে গিয়েছিল কৃষ্ণার। সে ভাবছিল এ তো তার মনের কথা। তার মনের কথা এই মানুষটা জানলো কি করে!  কৃষ্ণা? চমকে উঠে সাড়া দেয় হ্যাঁ? কিছু ভাবছো? ভাবছি সেরকম মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে এক আপনি আছেন যে রূপের থেকে গুণের কদর বেশি করে।

          ধুর বাবা! এখন আবার কে ফোন করে ঘুম জড়ানো চোখে ফোনটার স্ক্রীনে চোখ রাখে কৃষ্ণা। অরিত্র দা! হ্যাঁ, সামনে কখনো দাদা না বললেও ফোনে অরিত্র দা বলেই নম্বরটা সেভ করে রেখেছে কৃষ্ণা। ফোনের সময় বলছে এগারোটা বেজে উনষাট মিনিট। এত রাতে ফোন করছে কেন বুঝে উঠতে পারেনা কৃষ্ণা। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আনন্দোচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে শোনা যায় শুভ জন্মদিন কৃষ্ণা। প্রথমটা হকচকিয়ে যায় কৃষ্ণা তারপর ফোনের স্ক্রীন লাইট টা অন করে তারিখটা দেখে নেয় সাথে সময়টাও সাতই ফেব্রুয়ারি রাত বারোটা। হ্যালো? ওপাশ থেকে প্রশ্নসূচক কণ্ঠে শোনা যায় অরিত্রের গলা। থ্যাঙ্ক ইউ। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে? ফেসবুক থেকে। তোমার বার্থডে টা কিন্তু খুব ভালো দিনে আজ রোজ ডে জানো তো? হ্যাঁ। তুমি সত্যিই ফুলের মত পবিত্র। কৃষ্ণা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না তাকে আজ পর্যন্ত কেউ কখনো এভাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়নি। সে একই সাথে বিস্মিত ও অভিভূত। ওকে। আজ আসছো তো কলেজে? হ্যাঁ। ঠিক আছে এখন ঘুমাও কলেজে দেখা হবে উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফোনটা কেটে দেয় অরিত্র।

             এ বাবা! এসবের কোন দরকার ছিল না। ছিল ছিল। মানে? আমি মানে বই নই বাপু। এতো মানে টানে বলতে পারবো না। নাও তো এবার কেকটা কাটো। খুব খিদে পেয়েছে আমার। কেন তুমি কিছু খেয়ে আসোনি? সরি! সরি! আপনি কিছু খেয়ে আসেননি? বাবা! তাও ভালো ভুল করে হলেও বলেছ তো। আচ্ছা একটা কথা বলো আমাকে আপনি বলো কেন? নয় – নয় করে ছ’মাস হয়ে গেল আমাদের বন্ধুত্ব তাও কি আপনি থেকে তুমি বলা যায়না? এ বাবা! তা নয়, আচ্ছা বেশ তুমি কিছু খেয়ে আসোনি কেন? তোমার সাথে একসাথে খাব বলে। মানে? ওরে বাবা! আবার মানে? ওর মুখটা দেখে হেসে ফেলে কৃষ্ণা আচ্ছা আচ্ছা কাটছি।

           কলেজের পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে সেখানেই ফুল দিয়ে সাজিয়ে এলাহী আয়োজন করেছে অরিত্র। কেক কাটার পর দুজনে মিলে একসাথে লাঞ্চ সারল। লাঞ্চ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটা গিফট দিয়েছে অরিত্র যদিও কৃষ্ণা অনেক আপত্তি করে বলেছিল এই পর্যন্ত যা করেছ সেটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া এসব গিফট এর কোনো প্রয়োজন নেই প্লিজ তুমি এটা নিয়ে যাও। প্রত্যুত্তরে অরিত্র জানায় যে সে এটা শুধুমাত্র তার জন্যই এনেছে পছন্দ যদি না হয় ফেলে দিও কিন্তু দয়া করে এটা নিয়ে যাও নাহলে আমার খুব খারাপ লাগবে। অগত্যা গিফট টা নিতেই হয় কৃষ্ণাকে। বাড়িতে এসে দেখে একটা রিস্টওয়াচ; কোম্পানির নাম দেখে চোখ কপালে ওঠে কৃষ্ণার। এত দামি ঘড়ি! হঠাৎ কৃষ্ণার মনে একটা প্রশ্ন জাগে এত টাকা খরচ করার কারণ কি? ফোনের আওয়াজে ভাবনায় ছেদ পড়ে তার। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে একটা নাম মধুপর্ণা।

            মধুপর্ণা সম্পর্কে কৃষ্ণার মাসতুতো বোন। মাসতুতো বোন হলেও ওরা মায়ের পেটের বোনেদের থেকেও বেশি আপন। দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে। একে অপরের আয়না। ওদের প্রায় দিনই ফোনে কথা হয়। ইদানিং কৃষ্ণাই ওকে বেশি ফোন করতে মানা করেছে। সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। মধুপর্ণা দিদির ওপর যেমন জোর খাটায় তেমনি দিদির সব কথা শোনেও। দুজনে দেখতে হুবহু এক তবে মধুপর্ণা গায়ের রং নিয়ে মন খারাপ করে না। তার মতে সে সারাজীবন বিয়ে করবে না তাও ঠিক আছে কিন্তু শুধুমাত্র শ্যামবর্ণ হওয়ায় কেউ তাকে তাচ্ছিল্য করবে এটা সে সহ্য করবে না।

               সরি রে দিদি! আজ সারাদিন ব্যস্ত থাকায় তোকে ফোন করতে পারিনি। যাইহোক, শুভ জন্মদিন। থ্যাংক ইউ। তারপর বল কি করছিস? কিছুই না। তোর পড়াশোনা কেমন চলছে? ভালো। কিছু কি ভাবছিস তুই? কি রে? হ্যাঁ, বল। কি ভাবছিস? শরীর ঠিক আছে তো? আসলে অরিত্র দা… কথা শেষ করতে না দিয়েই মধুপর্ণা চিৎকার করে বলে ওঠে প্রপোজ করল আজ? প্রপোজ! এই শোন তুই কিন্তু বড্ড পাকা হয়েছিস ধমকের সুরে বলে ওঠে কৃষ্ণা। কেন নয়! অরিত্র দার তোকে ভালো লাগে আর তুইও তো তাকে বেশ পছন্দই করিস। আরে সে তো বন্ধু হিসেবে। বন্ধুত্বই তো ভালোবাসার প্রথম পর্যায়। যাক গে। তুই কি বলছিলি সেটা বল। আজ সারা দিনে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেয় কৃষ্ণা। পুরোটা শুনে মধুপর্ণা বলে ওঠে তাহলে তো সামনের ভ্যালেন্টাইন্স ডে তেই… এই চুপ কর তো। গলার স্বর টা একটু নিচে নামিয়ে মধুপর্ণা বলে দিদি শোন? সাথে সাথে হ্যাঁ বলিস না যেন! বুঝলি? সপ্তাহ খানেক সময় চেয়ে নিবি। এই তুই ফোনটা রাখো তো বলেই ফোনটা কেটে দেয় কৃষ্ণা। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। এরকম এর আগে কখনো হয়নি তার। তাহলে কি সত্যিই আমি ওকে ভালোবাসি?

             অরিত্র আজ পর্যন্ত কারো পেছনে এতটা সময় দেয়নি যতটা কৃষ্ণার পেছনে দিয়েছে। অরিত্রকে দেখতে সুন্দর, স্মার্ট, হ্যাণ্ডসাম, কথাবার্তাও যথেষ্ট ভালো; বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার মনের ভেতরে কি চলছে কাজেই একটার পর একটা মেয়ে ওর ফাঁদে পা দেয় অবলীলায়। কলেজের অধিকাংশ মেয়ের ক্রাশ অরিত্র ভৌমিক।

            পার্ক ভর্তি লোকের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে একটা গোলাপ ফুলের তোড়া হাতে তুলে ধরল কৃষ্ণার সামনে, আই লাভ ইউ। কৃষ্ণা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। ঠিক শুনেছে তো সে! স্বপ্ন দেখছে না তো? ভাবনাতে ব্যাঘাত পড়ল আবার সেই তিনটে শব্দে আই লাভ ইউ। কৃষ্ণা হাত বাড়িয়ে ফুলের তোড়াটা নেয়। ওর চোখ জলে ভরে উঠেছে। অরিত্র কৃষ্ণার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বুকের মধ্যে টেনে নেয়।

                তুই একটা গাধা। কয়েক দিন সময় চেয়ে নিতে পারলি না? হ্যাঁ বলে দিলি! ধুর! তোর আর কোনো দামই রইলো না ওর কাছে। কৃষ্ণা অপরাধীর মত বকা শুনছিল বোনের কাছ থেকে। যাক গে। তোরা  ভালো  থাকলেই ভালো। এবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাসীমণিকে জানিয়ে দে। পরে জানাবো। ভয় পাচ্ছিস?  আমি বলবো মাসীমণিকে? আরে বাবা না। আমিই বলবো কিন্তু পরে। আচ্ছা, অরিত্র দা কেও বলিস বাড়িতে জানিয়ে রাখতে।

         আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে কৃষ্ণা। রাতে কথা না বললে ঘুম আসে না ওর। অরিত্রই এখন ওর ধ্যান-জ্ঞান। আস্তে আস্তে পড়াশোনারও ক্ষতি হতে থাকে তার। ক্লাস অফ করে কখনো পার্কে যাচ্ছে তো কখনো নদীর পাড়। বাড়ি ফিরে মধুপর্ণাকে সবটাই বলতো কেবলমাত্র অত্যন্ত ব্যক্তিগত কিছু কথা ছাড়া। মধুপর্ণা সবটাই বুঝতো কখনো কখনো মজা করতো আবার কখনো নিজের মনে হাসতো।

        মধুপর্ণা অনেকদিন থেকেই অরিত্রের সাথে দেখা করতে চাইছিল। সে কারণেই অরিত্র কৃষ্ণার জন্মদিনের প্ল্যানিং করছে দেখে ওইদিনই অরিত্রর সাথে দেখা করিয়ে দেবে বলে জানায় কৃষ্ণা। কিন্তু তার আগেরদিন হঠাৎই জানায় ব্যবসায়িক কাজের জন্য নাকি অরিত্র সেদিন বাড়ি থাকবে না তাই তার সাথে দেখা করাতে পারবে না কৃষ্ণা। আসলে অরিত্র সেদিন কৃষ্ণার সাথে একটু একা সময় কাটাতে চেয়েছিল তাই বাধ্য হয়ে কৃষ্ণাকে মিথ্যে কথা বলতে হয় মধুপর্ণার কাছে। ভালোবাসার মানুষের জন্য কখনো কখনো মিথ্যে কথা বলতে হয় বৈকি!

          অরিত্র সেদিন একটা হোটেলের রুম ভাড়া করে খুব সুন্দর করে সাজায়। কৃষ্ণার জন্য একটা ড্রেস এবং বার্থডে কেক নিয়ে আসে। কেক কাটার পর কৃষ্ণাকে ড্রেসটা দিয়ে পরে আসার কথা বলে অরিত্র। কৃষ্ণা পোশাক দেখে অবাক হয়। সে কোনদিন এই ধরনের পোশাক পরেনা সেটা অরিত্র খুব ভালো করে জানে। অবাক হয়ে তাকায় অরিত্রের দিকে কিন্তু চারিদিক কেমন যেন ঝাপসা ঝাপসা লাগছে তার। মাথাটা ঘুরছে কেন! কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসে তার।

             এই সুযোগ। এইবার বাকি কাজটা সারতে হবে তাকে। কাল রাত থেকেই এই মুহূর্তের কথা ভেবে ভেবে উত্তেজনায় সারারাত ঘুম হয়নি তার। সে জানতো কৃষ্ণা কোনোভাবেই এই পোশাকটা পরতে রাজি হবে না বাকি সব তো অনেক দূরের কথা। তাই সে কেক এর মধ্যেই ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় তার শরীরটা ভালো নেই এই অজুহাতে নিজে কেক খায় না। এতক্ষণে অরিত্রর আসল চেহারাটা বের হয়ে আসে।

          বুকের ওপর থেকে ওড়না টা টেনে সরিয়ে নেয়। আস্তে আস্তে বিবস্ত্র করে দেয় কৃষ্ণাকে সাথে নিজেও। উত্তেজনায় পরিপূর্ণ দুটো চোখ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে কৃষ্ণার সারা শরীর। পরে যাতে কোনো বিপদে পড়তে না হয় তার জন্য ফোনের ক্যামেরাটা অন করে নেয় অরিত্র। তারপর মেতে ওঠে এক পাশবিক খেলায়।

           আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। দিদির বালিশের নিচ থেকে পাওয়া কাগজের টুকরো টা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় মধুপর্ণা; তার থেকেও বেশি অবাক হয়ে পোস্টমর্টেমে পাওয়া রিপোর্টটা দেখে প্রেগন্যান্ট! এত বড় একটা কথা দিদি তার কাছ থেকে লুকিয়ে গেল! দিদির ফোনটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও অরিত্র দা কে করা ফোন বা মেসেজ তো দূরের কথা ফোন নাম্বার টা পর্যন্ত কন্টাক্ট লিস্টে পায়নি। এবার পুরো ঘটনাটা বুঝতে পারে মধুপর্ণা। জন্মদিনের দিনে এসব সমস্যা হয়েছে তাহলে কিন্তু দিদি তাকে বলেনি কেন! তাকে বললে পুলিশকে দেওয়ার মতো অন্তত একটা কল রেকর্ডিং তো থাকতো।  খুব অসহায় লাগছে নিজেকে। অরিত্র দার সাথে দিদির তোলা কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছিল তাকে কিন্তু তা দিয়ে আর কি প্রমাণ করবে সে! যেখানে দিদি লিখেই গেছে – “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়”।

          মধুপর্ণা স্টার মার্কস পেয়ে পাশ করার পর ইংলিশ অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে। কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে হঠাৎ একটা ছেলেকে দেখে চোখ আটকে যায় ওর। অরিত্র দা! হ্যাঁ তাইতো মনে হচ্ছে! কিন্তু অরিত্র দা এখানে কি করছে? কিছুক্ষন পর অরিত্রের সাথে চোখাচোখি হয় মধুপর্ণার। অরিত্র চমকে ওঠে মেয়েটাকে অবিকল কৃষ্ণার মতো দেখতে। অরিত্র কিছুদিন পর জানতে পেরেছিল কৃষ্ণা সুইসাইড করেছে। সেটা জানতে পারার পর থেকেই নিজেকে বড় বেশি অপরাধী মনে হয় তার। আজ পর্যন্ত সে অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছে ঠিকই কিন্তু কেউ সত্যিই যে তার জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে সেটা সে ভাবেনি কখনো।

             হাই? মধুপর্ণা ঘৃণাভরে তাকায় অরিত্রর দিকে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়। আসলে তোমাকে হুবহু আর এক জনের মতো দেখতে। তাই? হ্যাঁ। তুমি কোন ইয়ারে পড়ো? ফার্স্ট ইয়ার। আপনি? আমি আসলে আগে এই কলেজে পড়তাম এখন ইউনিয়নে আছি তাই অনুষ্ঠান দেখতে চলে এলাম এমনিতেও বাড়িতে বসে বসে বিরক্ত হচ্ছিলাম। কি দরকার? না কোন দরকার নেই আসলে ওই যে বললাম তোমাকে হুবহু আরেকজনের মতো দেখতে। কার মতো? আমার একজন গার্লফ্রেন্ড ছিল তার মত। এখন নেই? না। কেন? সব সম্পর্ক কি থাকে? রাখতে চাইলেই থাকে। শুকনো হেসে অরিত্র পিছন ফিরে হাঁটতে থাকে। শুনুন? আমি? হ্যাঁ, আপনার নামটা তো বললেন না? অরিত্র ভৌমিক। তোমার? মধুপর্ণা রায়। নামটা শুনে চমকে ওঠে অরিত্র। মধু? আই মিন কৃষ্ণার বোন মধু? কে কৃষ্ণা? কৃষ্ণা পাল। চেনো না? না তো। আপনার নাম্বারটা পাওয়া যাবে? কেন? ইউনিয়নে আছেন বললেন যদি কখনো কোনো দরকার হয়। ইয়েস, অফকোর্স।

                 জানো আমি কোনোদিন ভাবিনি জীবনে কাউকে এতটা ভালোবাসবো। তাই? হ্যাঁ। সত্যিই খুব ভালোবাসো আমাকে? বিশ্বাস হয় না? কি জানি! সত্যি ভালোবাসা কতটা পবিত্র হয় তুমি আমার জীবনে না এলে আমি বুঝতে পারতাম না। তোমার সাথে এক মুহূর্ত কথা না হলে কেমন যেন ইনসিকিউর ফিল করি আমি। দিনে তো হাজার বার ফোন করো। মৃদু হেসে উঠে দাঁড়ায় অরিত্র। নদীর পাড়ে গিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। মনে মনে নিজের দোষ স্বীকার করে। সে এতদিনের করা অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত। সে এতদিনে বুঝেছে ভালোবাসা আসলে ঠিক কি! পেছন থেকে গিয়ে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মধুপর্ণা। মধু! বলে কেঁদে উঠে ওর দিকে ফিরে তাকায় অরিত্র। তুমি কোথাও যাবে না তো আমাকে ছেড়ে? আরে কিন্তু কাঁদছো কেন তুমি? খুব ভালোবাসি তোমায়। বিশ্বাস করো খুব ভালোবাসি।

              সেদিন রাতের ঘুম উড়ে যায় মধুপর্ণার। সে বুঝতে পারে অরিত্র সত্যিই আজ নিজের কাছে অনুতপ্ত। সত্যিই মধুপর্ণাকে সে ভালোবাসে কিন্তু মধুপর্না কখনোই তাকে ভালোবাসেনি আর তার সাথে পরিচয়ের প্রথম রাতেই সে ঠিক করেছিল অরিত্রকে সে শাস্তি দেবে আইনত ভাবে না পারলেও মানসিকভাবে। তার জন্য সে তার দিদিকে হারিয়েছে। তাই আজ দু’বছর ধরে অরিত্রর সাথে ভালোবাসার নাটক করে আসছে। আজ তার প্ল্যান সাকসেসফুল হয়েছে। অরিত্র দা সত্যিই তাকে খুব ভালবাসে। তার দিদির সাথে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা যদি তার সাথে ঘটতো তখন সে পুলিশকে জানাতো তার জন্য সে সবসময় প্রস্তুতি নিয়েই অরিত্রর সাথে দেখা করতে যেত কিন্তু আশ্চর্য এই দু’বছরে অরিত্র একবারও তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি! তথাপি শাস্তি তাকে পেতেই হবে কারণ ভুল করার পর অনুতপ্ত হলে পরবর্তীকালে ভুল করা রোধ করা গেলেও পূর্বে কৃত ভুলগুলো যখন শুধরে নেওয়া যায় না তখন শাস্তি মুকুব করারও কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

              হাতটা দাও। কেন? দাও না! অরিত্র ঋতুপর্ণার হাতে একটা সোনার আংটি পরিয়ে দিলো। এটা কিসের আংটি? সোনার? হ্যাঁ। কোন দরকার ছিল না এটার। কেন? এইটুকু করতে পারিনা না আমি? এই নাও তোমার আংটি বলেই নিজের হাত থেকে আংটিটা খুলে অরিত্রর হাতে দিয়ে দেয় সে। মধু! আর… এক মিনিট বলেই ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে অরিত্রর হাতে দেয় এই নাও। অরিত্র অবাক হয়ে মধুপর্ণার মুখের দিকে তাকায় এটা কি? বিয়ের কার্ড। বিয়ের কার্ড! কার বিয়ের কার্ড? আমার, আগামী সপ্তাহের পনেরো তারিখ বাড়ির সবাইকে নিয়ে এসো। তুমি কি মজা করছ আমার সাথে! দেখো এই ধরনের মজা আমার একদম ভালো লাগে না। মজা করবো কেন? কার্ডটা খুলেই দেখনা। দ্রুত হাতে কার্ডটা খোলে অরিত্র। জলভরা চোখে দেখতে পেল পাত্রী মধুপর্ণা রায়। হাত থেকে কার্ডটা পড়ে গেল। না এটা হতে পারে না। মধু! মধু! এসব মিথ্যে বলো? তুমি মজা করছ আমার সাথে তাই না? খামোখা মজা করতে যাব কেন? অরিত্র মধুকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়। মধু তুমি শুধু আমার। শুধু আমার। খুব ভালোবাসি তোমাকে। কেন মজা করছ আমার সাথে বলো? আমার কিন্তু সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে। মধুপর্ণা ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয় অরিত্রকে মজা করছি না আমি। যা দেখছ যা শুনছ সবই ঠিক। তাহলে আমার ভালোবাসা? আমাদের দু’বছরের সম্পর্ক? এগুলো? এগুলো সব ভুল ছিল? হ্যাঁ, আমি তোমায় কখনো ভালোবাসিনি। মধু? হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। আমি তো তোমায় খুব ভালোবাসি। সেখানে আমার কিছু করার নেই। মধুপর্ণার দু’গালে হাত রাখে অরিত্র নিজের মুখটা মধুপর্ণার মুখের একদম কাছে নিয়ে গিয়ে বলে রাগ করেছ আমার ওপর? কেন রাগ করেছ বলো? না। ক্রমশ অরিত্রর চোখ লাল হয়ে উঠছে, তাহলে? কেন বলছো এসব? আর এই এইসব কার্ড কেন ছেপেছো? বাহ্ রে! বিয়ের কার্ড ছাপবো না? না ছাপবে না। কারণ তুমিও শুধু আমাকেই ভালোবাসো। না, বাসি না। হ্যাঁ, তবে একজন তোমাকে খুব ভালোবাসতো। কৃষ্ণা পাল। অরিত্র ছিটকে

দু’পা পিছিয়ে যায়। ভয় পেলে? কৃষ্ণা আমার দিদি। খুব ভালবাসতাম ওকে। দিদিও আমাকে খুব ভালোবাসত কিন্তু ওর জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিল তোমাকে ভালোবাসা। নেহাৎ কোন প্রমাণ ছিল না তাই। নচেৎ… সে যাক। আমি এটা দেখে খুশি যে তুমিও কাউকে ভালোবাসতে পারো। আমি তার জন্য অনুতপ্ত। খিলখিল করে হেসে ওঠে মধুপর্ণা। অনুতপ্ত! কি হবে অনুতপ্ত হয়ে! পারবে আমাদের দিদিকে ফিরিয়ে দিতে? পারবে না। দিদি চায়নি তুমি শাস্তি পাও এতটাই ভালোবাসতো ও তোমাকে। তাই সব প্রমাণ লোপাট করে দিয়ে গেছে। এটা কি শাস্তি নয়? কোনটা? আমার চলে যাওয়া? তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে শাস্তি। বলেই ফিরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ায় মধুপর্ণা। পেছন থেকে হাতটা চেপে ধরে অরিত্র তার চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রুবিন্দু গাল গড়িয়ে মাটিতে পড়ছে। মধু! হয়তো আমি তোমার ভালোবাসার যোগ্য নই শুধু তোমার কেন কারো ভালোবাসারই যোগ্য নই তবুও বলছি বিশ্বাস করো তোমাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তোমাকে আমাকে ভালবাসতে হবে না শুধু আমার কাছে থাকলেই হবে। থাকবে? যে কটা মেয়ের মন ভেঙেছো তাদের মধ্যে কেউ কি এভাবে বলেছিল তোমায়? নিশ্চয়ই কেউ না কেউ বলেছিল। তুমি কি তখন রেখেছিলে তার কথা? হাতটা ছেড়ে দেয় অরিত্র। মধুপর্ণা ফিরে যায়।

            জীবনে করা সমস্ত খারাপ কাজগুলো একসাথে মাথার মধ্যে ভিড় হয়ে আসে তার। বিয়ের কার্ডটা ছিঁড়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয় সাথে কেক আর সোনার আংটিটাও। জ্যোৎস্নারাত, একাকী নদীর পাড়ে বসে থাকতে বেশ লাগছিল অরিত্রর। নদীর শীতল বাতাস এসে তার সারা শরীর কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পায়ে জলের স্পর্শ অনুভব করল সে। বুঝতে পারলো জোয়ার আসছে ততক্ষণে অবশ্য চোখের জলে ভাটা পড়েছে।

             পরদিন সকালে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে হেডলাইন বেরোলো; পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল থানার অন্তর্গত রূপনারানের পাড়ে পঁচিশ বছর বয়সী এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার।

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ষড়রিপু| কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য | আনন্দ সূত্রধর| Bengali Stories for Matured
Next post তিলোত্তমা| কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য | তীর্থ| Bengali Stories for Matured