(১)
“ছাড়, প্লিজ! কেউ চলে আসবে…” উমা আশুতোষকে দূরে ঠেলার চেষ্টা করলো, কিন্তু ততক্ষণে নিষ্ঠুর প্রেমিক তার প্রেমিকার বক্ষবস্ত্রের অন্তরে থাকা সুডৌল কুসুমবিভাজিকার মধ্যে দংশাঘাত করে ফেলেছে।
প্রেমিক নিঃশব্দে নিজের কর্মে লিপ্ত থাকলো। দরজা বন্ধ, দুর্গা অষ্টমীর প্রভাতে উমা আশুতোষের বাড়ি এসেছিলো। আশুতোষের বনেদি বাড়ির দুর্গা পূজা গোটা শহরে বিখ্যাত। কিন্তু অঞ্জলি দেওয়া শেষ হলেই উমাকে নিজের লেখা একটা কবিতা শোনাবার আছিলায় নিজের ঘরে ডেকে এনে ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয় আশুতোষ। কোনো বাক্যব্যয় না করেই নিজের বলিষ্ঠ বাহু দ্বারা উমাকে দেওয়ালে ঠেসে ধরে চুম্বন শুরু করে! সে কবি, তাই সে কবিতা লিখবেই— শুভ্র পৃষ্ঠায় হোক বা উমার শরীরে!
“আঃ, আশু!” ধ্বনিত হলো উমার কণ্ঠে এবং একই সাথে ঘোষিত হলো তার পরাজয়ের বার্তা। ঠিক যেভাবে যুদ্ধবন্দী সৈনিক, বড়শি বিদ্ধ মৎস্য, এবং সিংহকবলিত হরিণী পরাজয় স্বীকার করে, সেভাবেই আত্মসমর্পণ করলো উমা।
শাড়ির আঁচল সরে গেলো, খুলে গেলো ব্লাউজের হুক, ব্রা-র ফিতে বন্ধনছিন্ন হলো! তাল, লয়, হুশ, কাণ্ডজ্ঞান, এবং সম্ভ্রম এই পঞ্চগুণকে জলাঞ্জলি দিয়ে উমা মেতে উঠলো প্রেমিকের আলিঙ্গনে। নিজের দু’হাত দিয়ে আশুতোষকে আবদ্ধ করে নিজের লিপস্টিকসিক্ত রক্তাভা ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা প্রেমিকের ঠোঁটকে শাসন করতে শুরু করলো সে!
আশুতোষের করতলদ্বয় তখন উমার দুই সুউচ্চ পীনপয়োধর মর্দনে অতিবাহিত। প্রেমিকার ঠোঁট ত্যাগ করে এবার সে তার কুচবৃন্তের সুধাপানে মত্ত হলো! উমা নিজের সমস্ত কিছুই প্রেমিকের সুবিধার্থে প্রস্তুত করলো। শাড়ির উপরিভাগ খুলে গেলেও নিম্নভাগ তখনও শরীর আচ্ছাদিত করে রেখেছিলো উমা, কিন্তু প্রেমিক নিষ্ঠুর! সে এবার হাঁটু গেরে বসে উমার শাড়ির কুচির ভাঁজ এবং সায়া-রজ্জুর গ্রন্থির উপর আক্রমণ করলো।
যুদ্ধে জয়লাভের পর তার সম্মুখে পরিবেশিত হলো শুভ্র অন্তর্বাসের অন্তরে থাকা উমার সিক্ত যোনিপ্রদেশ! প্রেমিকার উরু, কটিদেশ, এবং পশ্চাদস্থ নিগূঢ়নিতম্বের কোমলতা উপভোগের পর যখন আশুতোষ উমার দিকে দৃষ্টিপাত করলো তখন উমার চোখ বুজে এসেছে, শ্বাস ত্বরান্বিত হয়েছে, এবং দন্ত দ্বারা সে নিজের নিম্নোষ্ঠ কামড়িয়ে ফেলেছে!
কিংকর্তব্যবিমূঢ় উমা তখন আপনার অজান্তেই প্রেমিকের মুখমণ্ডল নিজ পদযুগলের মধ্যবর্তী স্থানে প্রেষণ করলো! উমার এই প্রবল দুর্বলতায় গর্বিত প্রেমিক এবার তার নারীত্বের সবথেকে স্পর্শকাতর অঙ্গে অত্যাচার শুরু করলো! মৃদু দংশন, তীব্র লেহন, এবং প্রেমিকের দাড়ির কণ্টকময় স্পর্শে উমা আর স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না! তার দুই পা তখন তীব্র শিহরণে কম্পমান! একমাত্র যে নারী নিজের প্রাণপুরুষকে এভাবে নিজের নিম্নাঙ্গে নিযুক্ত করতে পেরেছেন কেবলমাত্র তিনিই জানেন এরূপ আনন্দ যন্ত্রণার থেকেও পীড়াদায়ক!
প্রবল প্রণয়ের অভিসারেই হোক বা রতিরণে অপরপক্ষের প্রতি কারুণ্যবশতই হোক, উমাকে কোলে তুলে নিলো আশুতোষ এবং নিজের খাটে শায়িত করলো। নিজের পাঞ্জাবি এবং ধুতি ত্যাগ করে উমার ওপর শয়ন করলো সে!
সেবার সন্ধি পূজা ছিলো দুপুর বারোটায়। পুরোহিত মহাশয়ের ঘণ্টা, ঢাকের কাঠি, রমণীদের উলুধ্বনিতে মিলিয়ে গেলো উমার হর্ষনাদ!
(২)
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছিলো আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং উমা সেনগুপ্ত ছিলো সংস্কৃত বিভাগে পাঠরতা। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের এরূপ মিলন ব্যতিক্রমী হলেও তাদের মধ্যে একটি সাদৃশ্য ছিলো। তাদের দু’জনেরই আদি নিবাস ছিলো কৃষ্ণনগর এবং সেখানকার সরকারি কলেজেই তাদের প্রথম পরিচয়।
প্রথম কিছুদিন লুকিয়ে প্রেম করলেও পরবর্তীকালে তাদের দু’জনেরই পরিবার সেটি জানতে পারে এবং উভয়পক্ষই তা সানন্দে মেনেও নেয়। ফলে একে অপরের বাড়ি গিয়ে দেখা করা বা একসাথে ঘুরতে যাওয়ায় কোনো বাঁধা ছিলো না তাদের এবং সেই সুযোগে উমা এবং আশুতোষ একে অপরের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে।
তবে প্রকৃত প্রেমে বিরহ অনিবার্য। আশুতোষ গবেষণার জন্য ভারত তথা এশিয়ার সবথেকে বড়ো বিশ্ববিদ্যালয় বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পায়। উমাও সুযোগ পায় গবেষণার, তবে তার ইচ্ছা ছিলো যে যুব সমাজকে সে পুনরায় সংস্কৃত শিখতে উদ্বুদ্ধ করবে। সংস্কৃতকে “মৃত ভাষা” বলে মানতে সে কোনোরূপেই রাজি নয়। তাই সে নবদ্বীপে ফিরে এসে একটি সংস্কৃত শেখাবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
কিন্তু বেনারস গিয়েই আশুতোষের মধ্যে আসে এক পরিবর্তন। তার ইচ্ছা হয় যে সে গিটার বাজানো শিখবে। ফলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত সঙ্গীতকলা বিভাগে শুরু হয় তার যাতায়াত। সেখানেই পরিচয় হয় তার তিলোত্তমার সাথে।
তিলোত্তমা মজুমদার। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী, প্রাচীন ভারতীর সঙ্গীত শিখতে বর্তমানে বেনারসে এসেছে সে। নামের মতোই সর্বগুণে পারদর্শী সে। সঙ্গীত ও সাহিত্যচর্চায় তার যেরূপ ব্যুৎপত্তি, ঠিক ততোটাই মুক্তমনা এবং সকলকে অনুপ্রেরণা প্রদানকারী সে। তার প্রতিটি কর্মে তার নামের স্বার্থকতা বিরাজমান। তাই খুব সহজেই আশুতোষের চিত্তাকর্ষণ করেছিলো সে।
এরই মধ্যে শুরু হয় আশুতোষ এবং উমার মধ্যে মানসিক দূরত্ব। সারাদিনের লেখালিখি, গবেষণা, চাকরির প্রস্তুতি, এবং অন্য সমস্ত কর্ম সামলাতে হিমশিম খেতো আশুতোষ। দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে যখন উমার সাথে কথা বলতো তখন নিদ্রায় অবশ হয়ে আসতো তার দুই চক্ষু। অপরদিকে, উমাও আশুতোষের কর্মবিস্তারের বিষয়ে বিন্দুমাত্র দৃষ্টিদান না করেই সর্বক্ষণ অভিযোগ করতে শুরু করে যে আশুতোষ তাকে সময় দেয় না, এবং সেই জন্য সে নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে আশুতোষের সাথে রুক্ষ ভাবে কথা বলতে শুরু করে।
এই মানসিক দূরত্বই পর্যায়ক্রমে এরূপ অবস্থায় পর্যবসিত হয় যে তাদের মধ্যে বাক্যালাপ সম্পূর্ণরূপে স্থগিত হয়ে যায়। আশুতোষ ভেবেছিলো যে উমা অবুঝের মতো তার সাথে ঝগড়া না করে তার পরিস্থিতি বুঝবে। কিন্তু ভাবনা এবং জীবনক্ষেত্রের মধ্যে যে বিস্তর পার্থক্য তার উপলব্ধি প্রতিকূল পরিস্থিতি ব্যতীত কেউ প্রদান করতে সক্ষম নয়।
উমাহীন জীবন আশুতোষের কাছে ছিলো কল্পনাতীত। কিন্তু সেই উমাই যখন অনুপ্রেরণার অমৃত প্রদানে বিমুখ হয়ে সর্বদাই অভিযোগের গরলপ্রদানে সচেষ্ট তখন ভেঙে পড়লো আশুতোষ। তার যে কলম নিত্য কবিতার জন্ম দিতো সেই কলম দিনের পর দিন অব্যবহৃত অবস্থায় থাকলো। মস্তকের কেশ এবং মুখমণ্ডলের দাড়ি দীর্ঘকাল বিরত থাকলো নাপিতের স্পর্শ থেকে। সারাদিন হৈ হৈ করে কাটানো আশুতোষ অদ্ভুতভাবে গৃহবন্দীর ন্যায় জীবন নির্বাহ করতে লাগলো।
এমনই সময় তার পাঠানো একটা উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি বারংবার প্রত্যাখ্যাত হয় সমস্ত প্রকাশনী দ্বারা। শেষবার খুব আশা করে সে দিল্লীর একটি বিখ্যাত প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়েছিলো সে। কিন্তু সেই প্রকাশকও যখন আশাহত করলো আশুতোষকে তখন সে বেসামাল হয়ে পড়লো।
দীর্ঘদিন গিটার ক্লাসে অনুপস্থিত থাকায় এবং তিলোত্তমার ফোন এবং মেসেজের কোনো উত্তর না দেওয়ায় একদিন সে নিজে আশুতোষের হোস্টেলে এসে উপস্থিত হলো। যদিও ছেলেদের হোস্টেলে মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ, তবুও আশুতোষকে সকলেই সমীহ করতো তাই কেউই তাকে বাধা দিলো না। ঘরে ঢুকেই সে দেখতে পেলো যে প্রবল জ্বরে আশুতোষ কোকাচ্ছে, কণ্ঠে তার “উ…মা…”
সমগ্র ঘরময় ছেটানো খাতা বইয়ের স্তূপ, জামা কাপড়ের অগোছালো অবস্থা, এবং শরীরের প্রতি প্রবল অযত্ন পরিদর্শনে বেদনার্ত হলো তিলোত্তমার মন। কিন্তু আরও বেদনার্ত হলো সে আশুতোষের কণ্ঠে উমার নাম শুনে। যদিও আশুতোষ তাকে উমার ব্যাপারে বলেছিলো, তবুও তিলোত্তমার মনে তার জন্য এক বিশিষ্ট স্থান পরিব্যাপ্ত ছিলো। অনেকবার ভেবেছিলো সে নিজেকে আটকাবে, কিন্তু নারী একবার কাউকে ভালবেসে ফেললে তাকে ছাড়তে চায় না। তিলোত্তমাও ব্যতিক্রম নয়।
হোস্টেলের পরিবেশে থাকলে আশুতোষ আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে এই ভেবে তিলোত্তমা ঠিক করলো যে তাকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যাবে এবং সেখানে তার সেবা শুশ্রূষা করবে।
(৩)
প্রায় একপক্ষকাল কেটে গেছে তারপর। তখন সকাল প্রায় সাড়ে আটটা। বিছানায় শুয়ে ছিলো আশুতোষ, তবে এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ। সকালে আশুতোষকে চা দিয়ে স্নানে গেছিলো তিলোত্তমা। আশুতোষ চা পান করতে করতে গতরাত্রের অর্ধসমাপ্ত ‘ফিফ্টি শেডস্ অফ্ গ্রে’ উপন্যাসটি পড়ছিলো সে। প্রেমের উপন্যাস ওর একদমই ভালো লাগতো না, খুব ন্যাকা-ন্যাকা মনে হতো। কিন্তু তিলোত্তমাই একরকম জোর করে ওকে এটা পড়তে বাধ্য করেছে। কিন্তু কেনো সেটা আশুতোষ বুঝতে পেরেছে এতক্ষণে।
“এভাবে কী দেখছো?” স্নান সেরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ কৃষ্ণকেশরাশিকে তোয়ালে দ্বারা মুছছিলো তিলোত্তমা। আয়নার প্রতিফলকে আশুতোষের মুগ্ধদৃষ্টি লক্ষ্য করে এই প্রশ্ন।
“তোমায়”, উত্তর দিয়ে বই বন্ধ করলো আশুতোষ। উঠে গিয়ে আপন বাহুদ্বয়দ্বারা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তিলোত্তমাকে।
মেয়েরা স্নান করলে এক মিষ্টমাদকতাপূর্ণ ভাব ফুটে ওঠে তাদের শরীরে। আশুতোষ সেটিরই অনুসন্ধান করছিলো তাই যে তোয়ালে আবরণ দিয়ে তিলোত্তমা তার লজ্জা নিবারণ করছিলো সেটি সে টান দিয়ে খুলে দিলো! তার ঠোঁট তিলোত্তমার গ্রীবাদেশে এবং দু’হাত তার সুডৌল নিতম্বযুগলকে মর্দনে রত।
“একি করছো সকাল সকাল?” আয়নায় নিজেকে আশুতোষের বাহুবদ্ধ অবস্থায় নিজেকে নগ্নরূপে দেখে হেসে প্রশ্ন করলো তিলোত্তমা।
কিন্তু কোনো প্রত্যুত্তর সে পেলো না আশুতোষের থেকে, পেলো তার উদ্যত নিতম্বে আশুতোষের পুরুষালী হস্তের এক সজোর চপেটাঘাত!
“আঃ!” আঁতকে উঠলো তিলোত্তমা। ঠাস করে আরও একটি চর পড়লো উক্তস্থলে। অবাক দৃষ্টিতে সে ফিরে তাকালো আশুতোষের। কিন্তু তখনই ঠোঁটে তার এক রহস্যময় হাস্য ভেসে উঠলো!
হঠাতই তিলোত্তমাকে চেপে ধরে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিলো আশুতোষ। ঠিক এমনভাবে উপুড় করে শুইয়ে দিলো তাকে যাতে তার ঊর্ধ্বতন বিছানায় হেলান দিয়ে থাকলেও তার নিম্নতন দুই পায়ের ওপরেই স্থিতিশীল হলো। পূর্ণিমার বিভাবরীতে ইন্দু যেরূপ পূর্ণ প্রকাশিত হয় ঠিক সেভাবেই তিলোত্তমার অনাবৃত পৃথুলা পশ্চাদ্দেশ।
“কী চাও তুমি?” এবার প্রশ্ন করলো আশুতোষ।
“তোমার দাসী হয়ে থাকতে”, মৃদুস্বরে উত্তর দিলো তিলোত্তমা।
“দাসী?” প্রশ্ন আশুতোষের।
“হ্যাঁ, যৌনদাসী”, সংক্ষিপ্ত উত্তর তিলোত্তমার।
“অর্থাৎ?” পুনঃপ্রশ্ন আশুতোষের।
“অর্থাৎ তুমি আমার মালিক, আমার প্রভু। আমি তোমার পোষ্য, তোমার দাসী। তুমি আমার সাথে যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারো। তোমার খুশিতে আমার খুশি, তোমার আঘাত আমার কাছে ঈশ্বরের প্রসাদসম”, দ্বিধাহীন ও নির্লজ্জের মতো বললো তিলোত্তমা এবং হতবাকচিত্তে শুনে গেলো আশুতোষ।
“কিন্তু কেনো?” আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলো সে।
“এটাই আমার ফ্যান্টাসি। আমি তোমার হাতে অত্যাচারিত হতে চাই”, উত্তর দিলো তিলোত্তমা।
“তুমি কি আজেবাজে বলছো এসব?” আশুতোষ বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করেই চলেছে।
“আমি সব খুলে বলছি, কিন্তু তুমি আমায় প্লিজ পাগল ভেবো না। আমি চিরকাল এমন একজন পুরুষকে খুঁজেছি যে শুধুমাত্র শারীরিকভাবে পুরুষালী হবে না, চিত্তেও থাকবে পৌরুষ। আমি তোমায় যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকেই তোমার প্রতি আসক্ত হয়েছিলাম”, বললো উমা এবং আশুতোষের সম্মুখে নতজানু হয়ে বসে বললো, “আমি তোমায় ভালোবাসি, কিন্তু আমি জানি যে তোমায় কোনোদিনও প্রেমিকরূপে পাবো না আমি কারণ তোমার হৃদয়ে আজও উমা বাস করে।“
হঠাৎ উমার কথা মনে পড়ায় কিঞ্চিৎ বিচলিত হয়ে উঠলো আশুতোষ। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো সে এবং প্রশ্ন করলো, “কিন্তু এসবের সাথে তুমি যা বললে তার কী সম্পর্ক?”
“বেশ, শোনো তবে সব। তুমি যে উপন্যাসটা পড়ে আমার পাছায় চর মেরে পরীক্ষা করতে চাইলে যে আমিও ঐ উপন্যাসের নায়িকার মতো কিনা, সেটা তোমায় পড়তে দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্যই তোমায় এটা বুঝিয়ে দেওয়া যে আমি বি-ডি-এস-এম আসক্ত। আমি চাই তুমি আমায় শাসন করো, আমায় বলপূর্বক সম্ভোগ করো, আমায় তোমার যেভাবে ইচ্ছা যা খুশি করো! তোমার কাছে পরাধীন হতে চাই আমি, তাতেই আমার সুখ”, বললো তিলোত্তমা।
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি এসব যা কিছু বলছো! তোমার মতো শিক্ষিতা এবং আধুনিকা একজন মেয়ে এভাবে কিভাবে বলতে পারে!” পুনঃপুনঃ বিস্ময় প্রকাশ করলো আশুতোষ।
“সোহাগের সাথে শিক্ষা আর আদরের সাথে আধুনিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। উভয়ই যুক্তির বাইরে, ঠিক যেমন সকল যুক্তির বাইরে আমার ফ্যান্টাসি। তোমার সাথে একদিন রোজ শুয়েছি, আদর করেছি তোমায়, তুমিও আদর করেছো আমায়। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার সম্পূর্ণ তৃপ্তি হয়নি। ওভাবে আমার কোনোদিনও তৃপ্তি হবে না”, উত্তর দিলো তিলোত্তমা।
“বেশ”, কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় এর থেকে বেশি উত্তর দিতে পারলো না সে।
“শুধু কি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে? আমি কি তোমার দাসী হওয়ারও যোগ্য নই? আমায় কাছে টেনে নাও না, আশু! প্লিজ মেক মি ইওর স্লেভ!” হাতজোড় করে প্রবল মিনতির স্বরে বললো তিলোত্তমা।
আশুতোষ কোনো উত্তর দিতে পারলো না। সে বুঝতেই পারলো না এরপর কি উত্তর দেওয়া যায়! অবশেষে তিলোত্তমার দুই গালে হাত রেখে সে বললো, “তোমার থেকে ভালো বন্ধু আমার কেউ নেই, কিন্তু তোমাকে আঘাত করবো এটা ভাবতেও আমার অস্বস্তিবোধ হচ্ছে।“
“তুমি আঘাতের উদ্দেশ্যে আঘাত করছো না, আশু। তুমি আঘাত করবে শুধুমাত্র আমার ইচ্ছা পূরণের জন্য”, তিলোত্তমা নতজানু অবস্থায় জড়িয়ে ধরলো আশুতোষকে।
“তোমার যেভাবে ভালো লাগে তাই হবে”, পরিশেষে বললো আশুতোষ এবং তৎক্ষণাৎ আশার ও আনন্দের দ্যুতি ছলছল করে উঠলো তিলোত্তমার অক্ষিপলকে।
“খাটের নিচে হ্যান্ডকাফ আর একটা চাবুক আছে”, ইঙ্গিত দিলো তিলোত্তমা।
(৪)
পরদিন সকালে আশুতোষের ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছিলো। তিলোত্তমা আগেই উঠে যথারীতি সমস্ত কাজ সেরে আশুতোষের জন্য চা বানিয়ে এসে ডাকলো তাকে।আশু উঠে তিলোত্তমার দিকে তাকাতেই তার গতকালের ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো। সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা থেকে রাত্রি সে তিলোত্তমার সকল ইচ্ছা পূর্ণ করেছে। কিন্তু তার অস্বস্তি তখনও কাটেনি।
“তুমি এখনও কালকের কথা ভাবছো? আরে পাগল, ওটা শুধু আমার ফ্যান্টাসি। আমি সবসময় তোমায় ওমন করতে বলবো না, তুমি ভয় পেয়ো না”, বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো তিলোত্তমা।
“বাঁচলাম!”, বলে হেসে ফেললো আশুতোষও।
“না মহাশয়, আপনি বাঁচেন নি। তাড়াতাড়ি চা খেয়ে নিন আর ফ্রেশ হয়ে স্টেশনে যান। এগারোটায় উমার ট্রেন আসবে, ওকে পিক্-আপ করতে যেতে হবে”, চায়ের কাপে চিনি মেশাতে মেশাতে বললো তিলোত্তমা।
“মানে?” আকাশ থেকে পড়লো আশুতোষ।
“মানে আপনি এখনও মেয়েদের মনের কিচ্ছুটি বুঝতে শেখেননি!” আশুতোষের নাক মুলে দিয়ে বললো তিলোত্তমা।
“উমা এখানে আসছে? কিন্তু কেনো? ওকে তুমি ডেকেছো?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো আশুতোষ।
“হ্যাঁ”, উত্তর দিয়ে উঠে যাচ্ছিলো তিলোত্তমা, কিন্তু আশুতোষ তার হাত ধরে টেনে থামালো।
“কিন্তু কেনো?” যতোই তিলোত্তমাকে দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে আশুতোষ।
“মেয়েটা তোমায় খুব ভালোবাসে। তোমার যখন জ্বর ছিলো তখন ও একদিন ফোন করেছিলো। আমার মুখে তোমার শরীরের অবস্থা শুনে ও আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি”, উত্তর দিলো তিলোত্তমা।
“আর কী বললো ও?” উৎসুক হয়ে প্রশ্ন আশুতোষের।
উমার নাম শুনেই আশুতোষের প্রবল আগ্রহ দেখে কিছুটা দুঃখিত হলেও তা গোপন করে মৃদু হেসে তিলোত্তমা বললো, “বললাম যে তোমায় আমার কাছে এনে রেখেছি। সেটা শুনে হয়তো একটু কষ্টই পেয়েছে ও, কিন্তু কোনো অভিযোগ করেনি। বরং বারবার তোমার যত্নই নিতে বলেছে।“
“কিন্তু তুমি ওকে এখানে আসতে বললে কেনো?” আশুতোষ প্রশ্ন করলো।
“তোমার বড্ড বেশি প্রশ্ন, বাপু!” হেসে উত্তর দিলো তিলোত্তমা, “সাড়ে ন’টা বাজে। তাড়াতাড়ি চা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। ওকে নিয়ে এসো, তারপর সব কথা হবে।“
অগত্যা উঠতে হলো আশুতোষকে। প্রাত্যহিক কর্ম সেরে স্নান করে সে উমাকে আনতে স্টেশনে গেলো। প্রায় তিনমাস পর দেখা হলো উমার সাথে। দেখেই একে অপরকে তীব্র আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেছিলো তারা।
একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে দু’জনেই তিলোত্তমার ফ্ল্যাটে আসলো, কিন্তু তার কোনো দর্শন নেই। ঘর খোলা, অথচ সে কোথাও নেই। বারংবার তার নাম করে ডেকেও কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। টেবিলের ওপর রাখা একটা সাদা পৃষ্ঠায় তার লেখা একটা ছোটো চিরকুট পেলো আশুতোষ। তাতে লেখা, ‘তিলোত্তমা অনুঘটকের ন্যায়, আশুতোষ এবং উমার মিলনে তার কর্ম সমাপ্ত।‘