পলক ফেলা বারণ| পলক ফেলা নিষেধ | মানব মীরা দে| Bengali Thriller Story
0 (0)

পাড়ার ভুলুর ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেল। এমনিতেই ঘুমটা আমার বেশ পাতলা। রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমলেও মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায় প্রায়। বেড সাইড থেকে জলের বোতলটা নিয়ে কিছুটা জল খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। আবার হাল্কা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব সবে এসেছে সাথে সাথে মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল!! এত রাতে আবার কে কল করল!! দেখি কানুদা! আবার কী হল কে জানে!! – ফোনটা রিসিভ করলাম,”হ্যালো — বলো?”

অপর প্রান্ত থেকে কুণ্ঠাযুক্ত ভয়ার্ত স্বর ভেসে আসে, “বাবলু, আবার ওরা এসেছে!!”

আমি বলে উঠি, “আবার!! — এত কিছুর পরেও!!”

কানুদা বলে, “হুম্ — ভাই তুমিএক্ষুনি একবার আসতে পারবে আমার এখানে?? খুব দরকার —-”

দ্বিধাগ্রস্ত স্বরে বললাম, “এখন!!–”

কানুদার আকুতিপূর্ণ অনুরোধ, “প্লিজ্ ভাই খুব ভয় করছে!! —- একবার এসো প্লিজ্!!”

বললাম, “আচ্ছা — আসছি তুমি দরজা খোলো। –”

কানুদা বলল, “খোলাই আছে — প্লিজ্, চলে এসো ভাই!”

গত কুড়ি-পঁচিশদিন ধরে কানুদার ফ্ল্যাটে এই এক সমস্যা হয়েছে — যদিও সমস্যাটা প্রথম দিকে অত গুরুত্ববহ ছিল না। মোটামুটি আমরা সবাই মাস তিনেক হল এই নতুন ফ্ল্যাটে এসেছি। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো বাসিন্দা সমরদা চারমাস হল এসেছেন। তারপরে আমরা সবাই। ফ্ল্যাটের অবস্থান শহরের প্রায় প্রাণকেন্দ্রই — তাই দামটাও ভালোই পড়েছে আর প্রায় বছরখানেক আগে থেকে বুক করতে হয়েছে। কিন্তু কানুদার হল যত বিপদ!! ফ্ল্যাটে আসার মাস দেড়েকের মধ্যেই শুরু হল এক বিপত্তি!কানুদা আর বৌদি মাঝে মাঝেই তাদের ফ্ল্যাটে কিছু অবয়ব দেখতে পায়!! না আমি ব্যাপারটা এত সহজে আপনাদের বলে দিলেও ব্যাপারটা এত সহজ নয়। ঘটনাটাকে যতটা সহজবোধ্য সরল মনে হচ্ছে আসলে ঠিক তার বিপরীত। প্রথম থেকে যদি না বলি তাহলে আপনারা কিছুই বুঝতে পারবেন না। বরঞ্চ আমি ততক্ষণ কানুদার ফ্ল্যাটের দিকে এগোতে এগোতে আপনাদের ঘটনাগুলো বলি।

।।২।।

মূল ঘটনার সূত্রপাত হয় গৃহ প্রবেশের চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ দিন পর থেকেই। একদিন রিনাদি অর্থাৎ কানুদার বৌ রাতের  বেলা বাথরুম গিয়ে ফেরার সময় বাথরুমের লাইট অফ্ করার পরও বার বার জ্বলে উঠছিল!! কানুদাকে ডাকে সে,প্রথমে কানুদা ভেবেছিল রিনাদি ঘুমের ঘোরে ভুল বকছে বা ভুল দেখেছে। কিন্তু কানুদা নিজে ব্যাপারটা পরখ করে দেখে বুঝল সত্যিই তো তাই, আলো অফ্ করার পর আবার জ্বলে যাচ্ছে!! বার তিনেক এমন হবার পর আর হয়নি। দু’জনেই ভাবল কানেকশানের সমস্যা — এই ভেবে শুয়ে পড়ে।

কিন্তু পরের দিন রাতে বাঁধল আরেক ঝামেলা!! খুট খাট শব্দে রিনাদির ঘুম হঠাৎ করে ভেঙে যায় তাকিয়ে দেখে ফ্রিজের কাছে একটা ছায়া যেন ঘুরে বেরাচ্ছে!! ব্যস্ ওই এক মূহুর্তের জন্য! কানুদাকে ডেকে রিনাদি সব বলে। কিন্তু আর কিছুই দেখা যায় না। কানুদা রিনাদির কথা ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বলে, “তোমার গ্যাস হয়ে গেছে। অত রিচ খেও না।” বলে কানুদা পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে।

এরপর দু-তিন দিন আর কিছু হয়নি,সব চুপচাপ। আরো বড় গোল বাঁধে চতুর্থদিনে। কানুদা কাজে বাড়ির বাইরে গেছিল, ফিরতে বেশ রাত হবে বলে চাবি সঙ্গে নিয়ে গেছিল। ফিরে এসে দরজা খুলে দেখে রিনাদি চুপচাপ বিছানায় গুটিসুটি হয়ে বসে আছে!! কানুদা প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে চুপ করে বসে আছ!!”

রিনাদি কোন উত্তর দেয় না! শুধু তাকিয়ে থাকে কানুদার দিকে! কানুদা রিনাদির কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে, “কি হয়েছে??”

রিনাদি তাও কোন উত্তর দেয় না। ভাষাহীন দৃষ্টি নিয়ে কানুদার দিকে তাকিয়ে থাকে!! কানুদা রিনাদির কাছে বসে রিনাদির দুই কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে, “কী হয়েছে তোমার!!?”

রিনাদি কোন উত্তর না দিয়ে ডানহাতের তর্জনী তুলে সামনের ডিভানটা দেখায়!! কানুদা এতক্ষণ সেদিকে ধীরে ধীরে দৃষ্টিপাত করল! একটা ঠান্ডা হিমেল স্রোত তার মাথার টিকি থেকে ককসিস্ পর্যন্ত মেরুদণ্ড হয়ে বয়ে গেল!!! কানুদা মূহুর্তে জন্য দেখল ডিভানে চারটি অস্পষ্ট অবয়ব!!! — দু’টি বড় আর দু’টি ছোট!!! তার মধ্যে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের অবয়ব, একজন পূর্নবয়স্থ নারী আর একটি বাচ্চা মেয়ে ও ছেলের অবয়ব ছিল!!

।।৩।

“ওরা বার বার আসবে। স্বামী-স্ত্রী আর তাদের দুই সন্তান!” লোকাল পুরোহিত দেবদূতদা বলে ওঠেন। বয়সে বেশ নবীন, মন্ত্রচর্চার সাথে বিজ্ঞান সাধনাও করেন।

কানুদার কাছে সব কথা শুনে আমাদের ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার মিলন তার পরিচিত পুরোহিতকে ডেকে এনেছে।

দুটো কড়িকে ওপরে তুলে ঘরে মাঝখানে ফেলে দেন। তারপর কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে থেকে বিড়বিড় করে মনে মনে কিছু একটা বলেন, তারপর বলেন, “ওরা বার বার আসবে। স্বামী-স্ত্রী আর তাদের দুই সন্তান!”

কানুদা কেঁদো কেঁদো গলায় বলে, “তা’হলে উপায়??”

দেবদূতদা গম্ভীর ভাবে কিছু ভেবে বলেন, “খুবই জটিল!! এরা ছাড়নেবালা নয়। তবু আমি চেষ্টা করছি!”

কানুদা বলে, “এরা এল কেন?!”

দেবদূতদা বলেন, “বলা মুশকিল! তবে নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে — ওদের উপস্থিতি খুব কম পাবে তবে পাবে মাঝে মাঝেই!”

“ওদের দূর করুন আপনি এখান থেকে!” হাত জোড় করে রিনাদি দেবদূতদার কাছে অনুরোধ করে!

দেবদূতদা চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে মনে মনে আবার কিছু বলেন! তারপর বলেন, “ঠিক করে আমি কিছু বলতে পারব না — চেষ্টা করব ওদের ভয় দেখিয়ে দূর করার! কিন্তু কত দিন সময় লাগবে বলা মুশকিল! — এমন কি চলে গেলে আবার ফিরে আসতে পারে। আবার নাও আসতে পারে। সেটা সময়ই বলতে পারবে!”

কানুদা ব্যগ্র হয়ে বলে, “যা করার করুন। কিন্তু করুন!”

রিনাদি বলে, “সে যা করার উনি করুন, যতদিন না এ সমস্যার মিটছে আমি এখানে আর থাকব না!”

দেবদূতদা বলেন, “তা করলে হবে না। কেউ যদি বাড়ি না থাকেন তাহলে ওরা সমগ্র বাড়ি দখল করবে। তখন আমি আমার মন্ত্রতন্ত্র দিয়ে কিছুই করতে পারব না। আর আমার প্রতি ওদের কোন ভয়ও থাকবে না। আমরা ওদের তাড়াবার সব সুযোগ হারাব!”

কানুদা করুণ দৃষ্টিতে রিনাদির দিকে তাকায়, রিনাদি রূক্ষ স্বরে বলে, “যা হবার হবে আমি আর এক মূহুর্তও এখানে থাকব না!”

তারপর আর কী রিনাদি বাপের বাড়ি চলে গেল। দেবদূতদা রোজই নিজের মন্ত্রতন্ত্রের প্রয়োগ শুরু করলেন। আমরা ফ্ল্যাটের অন্যান্যরা রাতে পালা করে কানুদার সাথে থাকতে লাগলাম। আমিও কয়েক রাত ছিলাম। আর সেই সব রাতের অভিজ্ঞতাকে অভিজ্ঞতা না বলে বিভীষিকা বলাই ভাল। এখন যত সহজে ঘটনাগুলোর বিবরণ আপনাদের আমি দিচ্ছি পরিস্থিতি কিন্তু অত সহজ ছিল না!

।।৪।।

দেবদূতদা নিজের কিছু মারণ ও উচাটন বিদ্যা দিয়ে প্রথমে ঘরগুলোকে বেঁধে দিলেন। আমরা ওদের আসার কারণ আর আমাদের বিরক্ত করার কারণ জিজ্ঞাসা করলেই দেবদূতদা বলেন, “এটাই স্বাভাবিক — আমরা তো আসলে যেটাকে বা যে স্থানকে বা স্থাবর-অস্থাবর বস্তুকে নিজের ভাবছি তা আমাদের নয়,মানে আমাদের কাছে সর্বদা সত্য নয়। তেমনই ওরা যেটা নিজের ভাবছে সেটা চিরজীবনের জন্য ওদের নয়! — আসলে আমরা আর ওর একই স্থানে সর্বদা বিরাজ করি।এমন কি আমাদের, তোমাদের সবার ঘরে ইভেন এখন এখানেও তাদের উপস্থিতি আছে, কিন্তু ভিন্ন ফ্রিক্যুয়েন্সিতে। যতক্ষণ না পর্যন্ত একে অপরের ফ্রিক্যুয়েন্সি মিলে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ কাউকে দেখতে বা অনুভব করতে পারব না!কিন্তু যেই মিলে যাবে —”

দেবদূতদার কথা শেষ হবার আগে ৬নম্বর ফ্ল্যাটের ননীদা বলে ওঠেন, “তখনই একে অপরকে দেখতে পাব —- তাই তো?”

দেবদূতদা ননীদার কথার সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেন, “একদমই না! — উভয় যে পক্ষের মধ্যে যাদের অনুভূতি শক্তি ও ইন্দ্রিয়সকলের ক্ষমতা বেশি হবে সেই পক্ষই আগে অন্য পক্ষকে অনুভব করতে বা দেখতে পারবে। কোন পক্ষের অপর পক্ষের উপস্থিতি অনুভব করার সম্ভাবনা তাদের মনন অনুভূতির ওপর নির্ভর করে! —- দুপক্ষেরই অনুভূতি খুবই ক্ষনিকের জন্য হয়!! তবুও তা কিন্তু বড়ই ভয়ানক হয়!!”

সবই আমার মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল! প্রশ্ন করলাম, “আপনি কি পারেন না এমন কিছু করতে যাতে এই ফ্রিক্যুয়েন্সি আর কোনদিনও না ম্যাচ হয়??”

দেবদূতদা নেতিবাচক ঘাড় নেড়ে তার অক্ষমতার কথা জানিয়ে দিলেন! কানুদার প্রশ্ন, “ওরাও যদি আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পারে তাহলে কি হবে?!!”

দেবদূতদার উদাস উত্তর, “কী আর হবে! — ওরাও আমাদের মত ভয় পাবে! — সাহসীরা কারণ অনুসন্ধান করবে। তবে আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পারলে তার ভালো দিকও আছে খারাপ দিকও আছে!”

১২ নম্বর ফ্ল্যাটের রঞ্জুদার প্রশ্ন, “কি হতে পারে তাতে!!!?”

“ভাল দিক হল, ভয় ওরাও পাবে সেটা সিওর — আর ভয় পেয়ে ভীতু হলে পালাবে – কিন্তু!!” দেবদূতদা থামলেন!

কানুদার কাতর প্রশ্ন, “কিন্তু!!!????”

“যদিও ওদেরও এটাই আমাদের মতো অতিকষ্টে অর্জিত ঠাই হয়, তা’হলে ওরাও নাছোড়বান্দা হয়ে উঠবে!”দেবদূতদার চিন্তিত উত্তর!!

ননীদার প্রশ্ন, “তাহলে কি হবে!!?”

দেবদূতদার কপালে ভ্রূকুটি দেখা দিল! বললেন, “তা’লে সমস্যা আছে!! —- ওরা তখন আমাদের উৎখাত করার জন্য ওদের গুনিন বা পুরোহিত বা ওঝা ডেকে আনবে!”

ননীদা বলেন, “সে কি!!! ওদেরও এসব আছে নাকি!!?”

দেবদূতদা হেসে বলেন, “কেন থাকবে না!! — ওটাও আমাদের জগতের মতো একটা জগৎ! — বলতে গেলে আমাদের বিপরীত জগৎ!!”

কানুদা কম্পিত কন্ঠে বলে, “তা’হলে কী হবে?!”

দেবদূতদার ভাবলেশহীন উত্তর, “কী আর হবে!! —- আমরাও চেষ্টা করব, ওরাও চেষ্টা করবে! আর যে পক্ষের শক্তি ও সামর্থ্য বেশি হবে সেই পক্ষই টিকে থাকবে — অন্য পক্ষকে হুট আউট হয়ে যেতে হবে!!”

কানুদা অতিকষ্টে জিজ্ঞাসা করে, “তাহলে কি আমাকে এই ফ্লাট ছেড়ে চলে যেতে হবে?! — অনেক কষ্টে এটা নেওয়া!!”

দেবদূতদা বলেন, “সে তো ছাড়তেই হবে নয় আমাদের নয় ওদের! — তবুও লড়াইটা দুপক্ষকেই করতে হবে। তবে যতক্ষণ না ওরা আমাদের উপস্থিতি টের পাচ্ছে ততক্ষণ আমি মন্ত্রতন্ত্র দিয়ে আমাদের পক্ষকে রক্ষা করে যাব। — বাকিটা উনিই জানেন!”

দেবদূতদা উপরের দিকে তাকান। আমরাও তার দৃ্ষ্টি অনুসরণ করে উপরের দিকে তাকাই। কিন্তু কিছুই নজরে আসে না!!

।।।।

দেবদূতদার সাথে আমাদের সম্পর্ক দাদাভাইয়ের মতোই হয়ে উঠেছিল। দেবদূতদা থেকে কখন দেবুদা হয়ে উঠেছিলেন। দেবুদা কানুদার ফ্ল্যাটের সব রকম বন্ধন করে দেন।

তবু ওরা না বুঝলেও আমরা মূহুর্তে মূহুর্তে ওদের উপস্থিতি বুঝতাম আর সেই অনুভুতিকে ভয়ানক বা হাড়হিম করা না বলা চললেও মোটেই মধুর নয়!! প্রায় রাতে ওদের উপস্থিতি ওরা জানান দিত। আমি আর কানুদা হয় তো বিছানায় শুয়ে আছি, হঠাৎ করে বাচ্চা অবয়ব দুটো খেলার ছলে নিজেদের মধ্যে মারপিট করতে করতে আমাদের ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়ল! আমরা চমকে উঠলেও ওরা নির্বিকার! তবে যখন যখন আমরা ওদের সংস্পর্শে যেতাম তখন তখন একটা শ্বাসরূদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হত!!! দেবুদা বলতেন,” এটা হল এক ধরণের নার্ভাল ডিসওর্ডার!! — এমনকি টেনশানে তোমাদের মস্তিকে একধরণের কোলাটেরাল ড্যামেজ সৃষ্টি হতে পারে — সাবধান সেই ড্যামেজ তোমাদের মস্তিকে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে শেষও করে দিতে পারে!!”

খুব সাবধানে থাকতে হত আমাদের!! ওদের সংস্পর্শের অধিক চলে এলে দেবুদার বিশেষ কিছু নির্দেশ ছিল। উনি বলতেন, “ওদের সংস্পর্শে এলে কখনই চোখের পলক ফেলবে না! তাহলেই তোমরা শেষ! আর  খুব সাবধান আস্তে আস্তে সমস্ত আবাসনে  এদের প্রাধান্য বিস্তার করার সম্ভাবনা প্রবল!!”

তাই অস্তিত্বের রক্ষায় ওদের ঘনিষ্ঠতায় আমাদের পলক ফেলা বারণ ছিল!! পলক ফেলেই হয়তো সহজেই ওরা আমাদের উপস্থিতি টের পেত তাই!

কিন্তু একদিন ভুলটা আমিই করে ফেললাম!! সে পরের বিষয়, কিন্তু তার আগে যে সব ঘটনা ঘটে গেল তা শুধু আমার বা কানুদার উপর দিয়ে নয় মোটামুটি আমাদের আবাসনের যারা যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হল সেই সব বাসিন্দাদের উপর দিয়ে কম বেশি ঝড় বয়ে গেল!!

একদিন রাতে কানুদার রুমে শুয়ে আছি — হঠাৎ দেখি বন্ধ বাথরুমের দরজায় বাথরুমের ভেতর থেকে কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে!! পাশে তাকিয়ে দেখি কানুদা অঘোরে ঘুমচ্ছে!! আমার গলা দিয়ে ভয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না! ধাক্কার পরিমান অনবরত বেড়েই চলেছে!! আমারও ঘর্মগ্রন্থির সক্রিয়তাও বেড়ে চলেছে! প্রতিটা সেকেন্ডকে একটা দিনের মত মনে হতে লাগল!! মনে হল বাথরুমের দরজায় নয় আমার মাথার মধ্যে যেন কেউ হাতুরী পেটাচ্ছে!! আমার মাথার শিরাগুলো যখন প্রায় ফেটে পড়তে  চলেছে ঠিক তখনই বাথরুমের দরজাটা দরাম করে খুলে যায়! ঈষৎ আলোয় দেখলাম একটা বাচ্চা মেয়ের অবয়ব আসতে আসতে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল!! ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল আমার।

ননীদার অভিজ্ঞতা আরো ভয়ানক কিন্তু বেশ হাস্যকর!! ননীদা একদিন কানুদার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন,সেদিন কানুদার সঙ্গে তিনি কিঞ্চিৎ সুরা পান করেছিলেন! কানুদা রাতের খাবার আনতে গেছে আর ননীদা ঘুমছেন। হঠাৎ বুকের ওপর এক তীব্র চাপ অনুভব করলেন! প্রচন্ড অসোয়াস্তিতে তাকিয়ে দেখলেন বুকের ওপর দুটো বাচ্চা অবয়ব বসে হাসছে খেলছে!! ভয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হলেও দেবুদার সতর্কীকরণ স্মরণ করে চোখ খুলেও চোখের পলক ফেলেন না! তারপর আসতে অবয়ব দুটো মিলিয়ে গেল!

রঞ্জুদার ফ্ল্যাটটা কানুদার পাশেই।  একদিন সন্ধ্যেবেলা কোন কাজে  ফ্ল্যাট থেকে বের হচ্ছিল। হঠাৎ দেখে কানুদার ফ্ল্যাটের সামনে ছ’টা অবয়ব ঘুরঘুর করছে!! রঞ্জুদা নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে পলকহীন চোখে!! তারপর তারই চোখের সামনে ছ’টা অবয়ব কানুদার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ঢুকে যায়!!

।।।।

“না, সমস্ত ঘটনা ধীরে ধীরে জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে!!” সব ঘটনা শোনার পর দেবুদা চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলেন!

রঞ্জুদা বলে, “ওইদিন আমার নাভিশ্বাস উঠে গেছিল!!”

দেবুদা বলেন, “সঠিক ভাবে বলুন তো কী কী দেখেছিলেন সেদিন?”

রঞ্জুদার গলা যেন শুকিয়ে গেল! খুবই ধীর স্বরে বলে, “আমার সেদিনের ঘটনা মনে করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই! — তবু — আমি নিজের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে সবে দু’পা এগিয়েছি,দেখি কানুদার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে, প্রথমে ভাবলাম কানুদার পরিচিত লোকজন হবে। কিন্তু তারপর তাদের কারুর মুখাকৃতি ঠাউর করতে পারলাম না! কেমন সব ঝাপসা ঝাপসা লাগল!! মনে হল ব্যক্তিগুলোর মুখ মাঝে মাঝে স্পষ্ট হচ্ছে আবার মাঝে মাঝে আবছায়া হয়ে যাচ্ছে!! আরো কিছুক্ষণ দেখার পর বুঝলাম শুধু মুখ নয় ওদের শরীরগুলোই পুরো অস্পষ্ট!! — আর বুঝতে বাকি রইল না যে ওরা কারা!!!”

দেবুদা কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন তারপর বললেন, “ভেবেছিলাম সহজেই এই সমস্যার থেকে রেহাই পাব কিন্তু এখন দেখছি এ সমস্যা আর পাঁচটা সাধারণ সমস্যার মত নয়! আমার কক্ষবন্ধনীগুলো তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারিনি এই আগুন্তুকদের ওপর!”

১৭ নম্বর ফ্ল্যাটের সুমিতবাবু নতুন এসেছেন। তিনি বললেন, “আমিও কিন্তু আজ কাল আবাসনের ইতিউতি অজানা অচেনা অবয়বের আনাগোনার আভাষ পাচ্ছি বিভিন্ন আবাসিকদের কাছ থেকে!”

সিক্রুইরিটি গার্ড রতনের বক্তব্য, “আমি আর ভজন রাতের দিকে কিন্তু আবাসনের বিভিন্ন করিডোরে ছায়ামূর্তি দেখতে পাই! — এমনকি ভজন ভোর রাতে এক মহিলার ছায়ামূর্তি দেখেছে যার হাবভাব ছিল একজন মাতালের মতো! — কিন্তু সবই ওই ক্ষণিকের জন্য!”

দেবুদার মুখ আরো কৃষ্ণবর্ণ হয়ে ওঠে!!! আমি বলি, “তার মানে সম্পূর্ণ আবাসনেই কি তাদের উপস্থিতি স্পষ্ট??”

রতন বলে, “কিন্তু এর কারণ কি??”

সুমিতবাবু বলেন, “এই আবাসনের জমি কি কোন কারণে অপবিত্র ছিল?”

দেবুদা বলেন, “অসম্ভব কিছু নয় — তবে এখন তো জমি মানেই অপবিত্র — লালসা ও লোভের প্রতিমূর্তি তো সম্পত্তি – অর্থ – জমিজমা! শেষে ক্ষেত্রে কোন জমিকে আপনি পবিত্র বলবেন??

রঞ্জুদা বলে, “আমি কিন্তু এমন কোন কথা এই জমি সম্পর্কে শুনিনি!”

দেবুদা বলে, “সে জমি পবিত্রই হোক আর অপবিত্রই হোক এটা সত্যি যে এখন তারা সবাই এই আবাসনকে গ্রাস করতে চাইছে!!”

এরপর ননীদার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ননীবাবু সেদিন আপনার সাথে যা ঘটেছিল সব শুনেছি! — বাবলু আমায় সব বলেছে। তবু আপনার মুখ থেকে পুনরায় সব শুনতে চাই।”

কথাটা শুনে ননীদা যেন কেঁচোর মত কুঁকড়ে গেলেন! ফ্যাঁকাসে স্বরে বললেন, “আমি আর ওই দিনটা মনে করতে চাই না! — এখন নিজের ঘরেও ছেলে-বৌয়ের সাথেও বসতে ভয় লাগে! — তবে জীবনে কোনদিন ওই বাচ্চাটার মুখের অবয়বকে ভুলতে পারব না! — মুখের সবটা না বোঝা গেলেও চোখ দুটো কিন্তু ওর স্পষ্ট হয়েছিল কয়েক মূহুর্তে জন্য — কী মারাত্মক!! দেবুবাবু আপনি চোখের পলক ফেলতে বারণ করেছিলেন। ঘুম ভেঙে ওই চোখ দুটো দেখে আমার বুকের রক্ত জমে গেছিল!!”

দেবুদা বললেন, “চোখ স্পষ্ট হচ্ছে মানে ওরা এবার কিন্তু যে কোন মূহুর্তে আপনাদের উপস্থিতি বুঝে যেতে পারে!!”

সবাই মিলে সমস্বরে বলে উঠি, “তা’হলে উপায়!!?”

দেবুদা বললেন, “দেখি আমি কী করতে পারি! — কিছুদিন অন্ততঃ ব্যাপারটাকে আটকে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু আপনারা সবাই একটা কথা সব সময় মাথায় রাখবেন, ওদের সামনাসামনি বা ঘনিষ্ঠ হলে আপনাদের নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য চোখের পলক ফেলা কিন্তু বারণ। সেটা করলে তারপর কি হবে আমি নিজেও জানি?!”

এরপর দেবুদা আবার পুনরায় আমাদের আবাসনের সব ফ্ল্যাট বন্ধন করলেন।

।।।।

রাত তখন প্রায় ১টা বাথরুমে যাওয়ার জন্য আমি পা বাড়ালাম। বাথরুমের দরজা খুলতে হাত বাড়ালাম কিন্তু তার আগেই বাথরুমের ভিতর থেকে দরজা ঠেলে বেড়িয়ে এল সেই পূর্ণবয়স্ক নারীর অবয়ব! কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট এবং নিকটস্থ!!  সমস্ত ঘটনাটা দ্রূত সংগঠিত হওয়ার দরুন আমি বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে ভুলে যাই!! ফলতঃ আমার চোখের পলক পড়ে যায়!! আর সে নারীও আমাকে স্পষ্ট না হলেও অনুভব করতে পারে!!! বিকট হাঁ করে চিৎকার করে ওঠে! আমি ঘটনার আকস্মিকতায় ভয়ে আমি এক অপার্থিব চিৎকার করে জ্ঞান হারাই!!

হুশ্ ফিরলে দেখি আমি খাটে শুয়ে আছি!আবাসনের সবাই আমার চারপাশে জিজ্ঞাসু দৃ্ষ্টি নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে!! দেবুদা পাশের চেয়ারে গম্ভীরভাবে বসে!! — জ্ঞান ফিরতে আমি দেবুদাকে সব জানাই। সব শুনে দেবুদা বলেন, “হু —- তার মানে ওরা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়েছে!! – আমি যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি যাতে এমন ঘটনা আবার না ঘটে! — কিন্তু যা বুঝেছি এবার ওরাও কিন্তু ওদের ক্ষমতার প্রয়োগ করবে। তোমরা সাবধানে থেকো —- আমিও আমার সর্বব্যাপী ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করব!!”

দেবুদা পরের দিন এক যজ্ঞের আয়োজন করেন! যজ্ঞ ভাল ভাবে সম্পন্ন হল — কিন্তু চিন্তা সবার মনে ও মস্তিকে পার্মানেন্ট ভাড়াটের মত আাস্তানা গড়ে বসে রইল! এবং তার দু’দিনের মধ্যে সেই নারী অবয়ব ক্ষনিকের জন্যেও হলে সুমিতবাবুকে অনুভব করল!! সেই নারী অবয়বের সাথে করিডোরে সুমিতবাবুর সাথে সম্মুখ সংঘর্ষ হয়! সুমিতবাবু বুঝলেও সেই নারী অবয়ব বুঝেও বুঝে উঠতে পারে না যে সে কেন হোঁচট খেল। সুমিতবাবু তাকে দেখার আগেই সে বাতাসে মিলিয়ে যায়। দেবুদা আবার যজ্ঞায়োজন করলেন। ফলে কিছুদিন আমরা না ওদের অনুভব করতে পারলাম না, ওরাও পারল না! কিন্তু বলে গেলেন, “ওরা যদি সঠিক ভাবে আপনাদের কাউকে নির্ধারণ বা অনুভব করতে পারে তবে সেটা কিন্তু আপনাদের পক্ষে মারাত্মকরূপে ক্ষতিকারক হতে পারে। কারণ তখন ওরা নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে  বেপরোয়া পদক্ষেপ গ্রহন করবে! — আর ওদের গুনিনরা হয় মারাত্মক — হিংস্র প্রতিহিংসা-পরায়ণ! — এমনিতেই ওরা নিজ নিজ স্বার্থ চরিতার্থে সগোত্রীয়দের রেহাই দেয় না তো আমরা তো কোন ছাড়্! — অতএব আমার একটাই বক্তব্য, নিয়ম মানুন —- তবেই ওদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন!”

তারপরই আজ এই কানা রাতে কানুদার ফোন এল!! তারপর —-

।।।।

কানুদার ফ্ল্যাটে ঢুকে চমকে গেলাম!! কানুদা গুটিশুটি হয়ে বিছানায় বসে আর সারা ঘর জুড়ে ধোঁয়া আর শুকনো লঙ্কার ঝাজ্ !! ওরা ওদের গুনিন এনে যজ্ঞ করছে!! কানুদা দিশেহারা!! এক মূহুর্ত দেরী না করে দেবুদা কল করলাম!!

দেবুদা দ্রূত এসে উপস্থিত হলেন! সব দেখেশুনে বললেন, “ওরাও এখন অস্তিত্বের লড়াইয়ে নেমেছে!! — আমাদেরও নামতে হবে!”

দেরী না করে নিজের চিরসঙ্গী ঝোলা থেকে যজ্ঞের উপকরণ বের করে দেবুদাও যজ্ঞে বসলেন!

শুরু হল দুই ফ্রিক্যুয়েন্সির জগতের দুই গুনিনের এক অপার্থিব লড়াই!! আমরা তখন দর্শক মাত্র!! দুই গুনিন একে অপরের সঙ্গে অদ্ভুত ভাষায় কথা বলেন! যার বিন্দু মাত্র আমরা দুই জগতের কেউই বুঝতে পারি না!! শুধু ওরা দুজনই জানেন! সমগ্র ফ্ল্যাটে আগুনের হল্কা ঘুরতে থাকে কখন! কখনও বা হিমশীতল হাওয়া বইতে থাকে!! কখনও ঘরের তাপমাত্রা অগ্নিগহ্বর হয়ে ওঠে কখন উত্তরমেরুর চরম শীতলা বিরাজ করে!!এরই মাঝে অদ্ভুত ভাষায় কথা চলে দুই গুনিনের!! একে অপরের ওপর মারত্মক সব মন্ত্র প্রয়োগ করেন তাঁরা! কখনও এ আহত হন তো কখনও অন্যজন আহত হন!! এ যেন টিভিতে রামানন্দ সাগরের রাম-রাবনের যুদ্ধ চলছে। আমরা দুই জগতের বাসিন্দারা সেই যুদ্ধের উত্তাপে যে দগ্ধ হচ্ছি না,তা কিন্তু নয়! কিন্তু আঘাতের পরিমান তুলনামূলক ভাবে অতি নগণ্য! অবশেষে সব থামে! শান্ত হন দুই গুনিন! নিজেদের মধ্যে বিশেষ ভাষা ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তারা কিছু ভাবের আদান-প্রদান করেন! তারপর ওদের গুনিন ওদের কিছু একটা বলে ও একটা প্যাকেট দিয়ে হেসে বেরিয়ে যান। দেবুদা নিজের যজ্ঞের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে আমাদের কাছে এসে বলেন, “আপাততঃ সমস্যার সমাধন হয়েছে — ওদের গুনিনের সাথে আমার একটা সামঝোতা হয়েছে!”

কানুদার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে, “কি সমঝোতা?!”

দেবুদা বলেন, “সহাবস্থানের — তোমরা আর ওরা বা অন্যরা সবাই এই ফ্ল্যাটেই থাকবে কিন্তু কেউ কাউকে দেখতে বা অনুভব করতে পারবে না!”

আমি বললাম, “সেটা কি করে সম্ভব?!”

দেবুদা আমাদের কিছু রঙীন সুতাসহ তাবিজ দেন আর বলেন, “এগুলো হাতে পড়ে নাও আর আবাসনের সবাইকে পড়িয়ে দাও, কম পড়লে আরো পাঠিয়ে দেব। এগুলো পড়ে থাকলে না ওরা তোমাদের অনুভব করতে পারবে না তোমরা ওদের। ঠিক তেমন ভাবে ওদের গুনিনও ওদের এমন কবজ দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ভুলেও এ তাবিজ খুলো না,বা হারিও না। তা’হলে আবার সব সমস্যা শুরু হবে। তখন আমারও আর কিছু করার থাকবে না!! আমার দক্ষিণা ও তাবিজের মূল্য অন্ অ্যাকাউন্ট পাঠিয়ে দিও। আমি বিল পাঠিয়ে দেব।”

দেবুদা তাবিজ দিয়ে চলে যান। এরপর আমরা আবাসনের সকলে সেই তাবিজ ধারন করি। রিনদিও ফ্ল্যাটে ফিরে আসে।আমরা নির্ঝঞ্ঝাটে সেই ফ্ল্যাটেই থেকে যাই। সত্যি বলতে কী এরপর না আমরা মানুষদের উপস্থিতি অনুভব করতে পেরেছি ; না মানুষেরা আমাদের সহাবস্থান অনুভব করতে পেরেছে!!

সমাপ্ত

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post কর্ণ পিশাচিনীর শাপ| পলক ফেলা নিষেধ | সুকান্ত আচার্য্য| Bengali Thriller Story
Next post রিজর্টে এক রাতে| পলক ফেলা নিষেধ | অমিতাভ সাহা| Bengali Thriller Story