বিষ্ণুপুরে হত্যাকাণ্ড | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
0 (0)

প্রথম খন্ড

ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিক। স্বরস্বতী পূজো শেষ হয়েছে কিছুদিন আগেই। স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা তখনও পূজোর রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তখনও সবাই টিউশন পড়তে এসে, টিউশন পড়ে বাড়ি যাওয়ার পথে পূজো নিয়েই আলোচনা করছে। কে কোথায় ঘুরেছে, কী খাওয়াদাওয়া হয়েছে, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেড়িয়েছিল নাকি বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে, সেইসব নিয়ে আলোচনাতেই মশগুল। শীতের প্রকোপ একটু কমলেও, সন্ধের পর বাড়ির বাইরে বেরোলে শোয়েটার, চাদর ছাড়া বেড়োনো যাচ্ছে না। এমনই এক সন্ধাবেলায় গোলাপবাগ মোড় থেকে একটু এগিয়ে একটা চায়ের দোকানে সন্ধের আড্ডা বসেছে। দোকানটার নাম বিকাশ টি স্টল।রোজ সন্ধেবেলাতেই লোকজনের সমাগম হয় সেখানে। মানুষের কথাবার্তা, চায়ের উষ্ণতায় , সিগারেটের ধোঁয়ায় মহল বেশ গরম হয়ে ওঠে।সেদিনও তার খামতি হলো না। সবাই চা খাচ্ছে কথাবার্তা বলছে, এমন সময় হঠাৎ চাদরটা গায়ে দিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সুদীপ্ত পাড়ার ছেলেমেয়েদের রাস্তায় যেতে আসতে এইসব আলোচনা শুনে বিরক্তিকর একটা মন্তব্য  করে বলল,

” ধুর ধুর…… , যা ভেবেছিলাম কিছুই হবেনা। আজকালকার সব ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা হবে না ছাই…।”

তাই শুনে রাকেশ খবরের কাগজটা মুখের সামনে থেকে সড়িয়ে হেসে বলল,

” তুই আবার ছেলেমেয়ে গুলোকে নিয়ে পড়লি কেন?”

তার কথা শুনে সুদীপ্ত একইরকম বিরক্তিভাব প্রকাশ করে বলল,

” আরে এতে আবার পড়াপড়ির কী আছে? মা স্বরস্বতী জলে গেছে চারদিন হয়ে গেল। আর এইসব ছেলেমেয়ে গুলোকে দেখ, পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখনো সেই পূজো নিয়ে পড়ে আছে। এদিকে যাকে নিয়ে আলোচনা করছে তিনি এতদিনে কৈলাসে তার মা বাবার কাছে পৌঁছে গেছে।”

সুদীপ্তর রাগের আগুনে একটু ঘি ঢেলে দিয়ে সৌমিক বলল,

” না.. না..। এই এতো ঠান্ডায় মা এখন কৈলাসে যেতে পারবে বলে মনে হয়না। মাঝে দাঁড়াবে হয়তো কোথাও। তাছাড়া অনেকটা পথ, বেশ দুর্গমও বটে। একটু রেস্ট নেওয়া দরকার রাস্তায়। মা এখন কোথাও একটা দাঁড়াবে। ঠান্ডা কমলে তারপর আবার যাবে কৈলাসে।”

সৌমিকের কথা শুনে রাকেশ খবরের কাগজটা দেখতে দেখতে ফিক-ফিক করে হেসে বলল,

” হ্যাঁ পূজোর কদিন যা ঠান্ডা গেল। মা মনে হয় এখনও ধরাধামেই আছে , সেইজন্য ছেলেমেয়েরা এখনও রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি।”

তাদের কথা শুনে সুদীপ্ত রেগে গিয়ে বলল,

” অ.. , মক করছিস, খুব মক করছিস। কর কর, কী আর বলবো! এখন বুঝবি না। এইসব জেনারেশনের ভবিষ্যৎ টলমলে। আর হবে নাইবা কেন, গোড়াই তো নড়বড়ে। তাহলে ডগা তো টলবেই।”

তার কথা শুনে রাকেশ পাশে বসে থাকা সৌমিককে ফিসফিস করে বলল,

” ইঞ্জিন গরম হচ্ছে। আজকে পাড়ার সবকটা ছেলেমেয়ের চোদ্দো গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়বে মনে হচ্ছে।”

সৌমিক রাকেশের কথা শুনে মুচকি হেসে সুদীপ্তকে থামানোর চেষ্টা করে বলল,

” না….. ইয়ে  মানে….. , আমি বলছিলাম , তুই এত ভাবনাচিন্তা কেনই বা করতে যাচ্ছিস। ওরা যা করে করুক। তোর তাতে কী? “

সেই শুনে সুদীপ্ত বলল,

” তোরা আর কী বুঝবি ! ছেলেমেয়েদের অধঃপতন যেহারে হচ্ছে… , চোখে দেখা যায়না।কাল স্কুলে গিয়ে হচ্ছে ওই সবগুলোর।”

তার কথা শুনে রাকেশ পেপারটা ভাঁজ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

” হয়ে গেল। “

পরক্ষণেই সে সুদীপ্তর দিকে তাকিয়ে তার বড়ো বড়ো চোখ দেখে বলল,

” মানে…. , পেপার। পেপার পড়া হয়ে গেল। এই বিকাশ দা আজকাল চা একটু বেশিই ফুটিয়ে ফেলছো বুঝলে। যার জন্যে গরম হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। “

সুদীপ্ত তার কথা শুনে বলল,

” দেখ রাকু আমি একদম ফালতু কথা বলিনি কিন্তু। তোদের আর কী….। তোরা তো বলে দিয়েই খালাস। “

রাকেশ হো হো করে হেসে উঠে বলল,

” আরে ভাই খালাস টালাস এর কী আছে? তুই একটা কথা ভেবে দেখ, স্কুল কলেজে ছেলেরা মেয়েদের সঙ্গে কথা বলবে এটা কমন ব্যাপার। একসঙ্গে কলেজে যাবে, পড়তে যাবে। এগুলো তো হবেই। প্রেমও হয় কলেজে। বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড সবকিছুই থাকে। আমাদের সবারই একটা কলেজের প্রেম, ক্রাশ এইসব ছিল। হ্যাঁ কারো সেই প্রেম কলেজেই চাপা পড়ে যায়, কারো এগিয়ে যায় এই আরকি। এখন যেটা হয়েছে ব্যাপারটা অনেক ওপেন হয়ে গেছে, আমাদের সময় এটা অতটা ছিলনা। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে ভাই। তুই নব্বই এর দশকে পড়ে থাকলে কী করে হবে বল? যুগ এগোচ্ছে সবাইকে এগোতেই হবে। বুঝলি….? “

সুদীপ্ত একটু চুপ করে থাকার পর বলল, ” হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে ঠিক আছে। থাক আর বোঝাতে হবে না।”

বিষয়টা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, হাসিঠাট্টা চলতে থাকলো। রাকেশদের এই বন্ধুদের দলে সবমিলিয়ে ব্যাক্তি সংখ্যা ছয়জন। আগে পাঁচজন ছিল। রাকেশ , সুদীপ্ত , সৌমিক , মিহির , তৃষাণজিৎ। মাস চারেক হলো একজন যুক্ত হয়েছে। গগন ভট্টাচার্য। সে মাস চারেক হলো গোলাপবাগে এসে উঠেছে। কয়েকমাসেই বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে। তার বয়স বত্রিশ বছর। সে ব্যাঙ্কে কাজ করে।

গগন ছাড়া তাদের দলের বাকিরাও প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তি। সবাই কোনো না কোনো চাকরির সঙ্গে যুক্ত। একমাত্র রাকেশ ছাড়া। সে তার বাবার গারমেন্টস এর দোকানে বসে। সেদিন দোকানে ইয়ার্কি ঠাট্টা করতে করতে মিহির বলল,

” কী ব্যাপার বলতো? সাড়ে আটটা পেড়িয়ে গেল অথচ তৃষাণের কোনো পাত্তা নেই। “

রাকেশ বলল,

” দেখ হয়তো ঘুরতে গেছে কোথাও বউকে নিয়ে।”

এমন সময় পাশ থেকে অনেকটা সময় পর গগন ভট্টাচার্য তার ভারী গলায় বলল,

” না না ঘুরতে যায়নি। আমি ফোন করেছিলাম। ওর অফিসে কাজ সেরে ফিরতে একটু দেরী হবে বললো।”

সুদীপ্ত বলল,

” বাব্বা , তৃষাণ আমাদের এতো বছরের বন্ধু। আমাদের বললো না, তোমাকে বললো?”

পাশ থেকে রাকেশ বলল,

” কী আশ্চর্য! গগন দা ফোন করেছিল তাই বলেছে। আমরা করিনি তাই বলেনি। আর এটা কোনো বড়ো ফ্যাক্টর নয়। বেসরকারি কাজ বাবা……। এমপ্লয়িদের একবারে নিংড়ে নেবে। “

তারা সবাই বসে গল্পগুজব করছে এমন সময় একটা টাউন সার্ভিস বাস এসে মোড়ে দাঁড়াতেই একটা লম্বা ছেলে নেমে সোজা এসে উঠল দোকানে। সে পিঠের ব্যাগটা ধপ করে বেঞ্চে নামিয়ে রেখে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল,

” বিকাশ দা একটা চা দাও। “

রাকেশরা প্রথমে অন্ধকারে তার মুখটা ভালো করে দেখতে না পেলেও তার বলা কথাটা শোনার পর রাকেশ বলল, ” আজ খুব চাপ ছিল নাকি? “

সে অন্ধকারে মুখটা ভালো করে দেখতে না পেলেও কথাটা বলতে কোনোরকম সংকোচ করল না। কারণ সে ছেলেটাকে চেনে। শুধু সেই নয়। তাদের বন্ধুদের সবাই তাকে চেনে। সে তাদের মধ্যে সবথেকে অগ্ৰগণ্য। তার নাম তৃষাণজিৎ ঘোষ। ফর্সা গায়ের রং, মাথায় ভর্তি কালো চুল, লম্বা সুঠাম চেহারা।

তৃষাণ বেঞ্চে বসেই একটা বড়ো হাঁপ ছেড়ে বলল,

” ধুর …… , আর পারা যাচ্ছে না। এ চাকরি ছেড়ে দেবো। “

তার কথায় সবাই একটু হকচকিয়ে গেল। মিহির বলল,

” কেনো? কী হলো আবার? “

তৃষাণ রেগে গিয়ে বলল,

” কী হয়নি বল। সবকিছুই তো হয়ে গেছে। সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ওদের জন্য কাজ করতে হবে। আজ সকালে একটা প্রজেক্ট দিয়েছে সেটা আজকের মধ্যেই রিপোর্ট রেডি করে সাবমিট করতে হবে। “

তার কথা শুনে গগন বলল,

” মনে হচ্ছে ভালোই নিংড়েছে আজকে তোকে অফিসে। “

তৃষাণ বলল,

” রোজ নিংড়েই নেয়। কোনোদিনই শান্তি নেয়।

আজকে তো ঝাড়ন খেয়েই দিনটা শেষ হয়ে গেল।

আর ওই এক ম্যাডাম আছে, আমাদের সিনিয়র, তার কোনোকাজেই শান্তি হয়না। আজকে রিপোর্ট সাবমিট করে তিনদিন ছুটি নিয়ে এসেছি। এইসব কাজ না মানুষ মারার কল ভগবান জানে।”

কিছুক্ষণ সবকিছু চুপচাপ হয় যাওয়ার পর রাকেশকে  উদ্দেশ্যে করে তৃষাণজিৎ বলল,

” রাকু, তুই অনেক শান্তিতে আছিস। নিজের ব্যাবসায়। অন্তত আমাদের মতো কারো লেজ ধরে ঘুরতে হবে না।”

মিহির তৃষাণজিৎের কথায় সমর্থন করে বলল,

” হ্যাঁ…। যা বলেছিস। তাও যদি সেই লেজ হয় ষাঁড়ের। “

গগন বলল,

” যাক গে যাক, ইয়ে তুই এক কাজ কর তৃষাণ, তুই আজকে বাড়ি চলে যা। একদম রেষ্ট পাসনি। চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমরাও তো একটু পর চলে যাবো।”

বাকি সবাই তার কথাতেই সায় দিল। তাই তৃষাণ বেশি কথাবার্তা না বলে বাড়ি চলে গেল। তার বাড়িতে মা এবং তার স্ত্রী সৌমিলি। তাদের বিয়ে হয়েছে সাত মাস। সেদিন রাত্রে সে বাড়িতে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে হাতমুখ ধুয়ে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন সকাল হতে না হতেই কলিং বেল বেজে উঠল। সৌমিলি গেট খুলতেই দেখলো রাকেশ, মিহির, সুদীপ্ত, সৌমিক একেবারে সদলবলে এসে উপস্থিত। সৌমিলি তাদের সাদর আমন্ত্রণে ভিতরে আসার জন্য অনুরোধ জানালো। মিহির ভিতরে ঢুকেই জিজ্ঞাসা করল,

” তা সে কোথায়?”

সৌমিলি জানালো তৃষাণ এখনো উঠেনি। একথা শুনে মিহির বলল,

” আচ্ছা… , ব্যাটা ছুটি নিয়েছে শুধু ঘুমোনোর জন্যে। তোরা দাঁড়া এখানে আমি তাকে ডেকে নিয়ে আসি।”

তৃষাণের মায়ের দিকে তাকিয়ে মিহির বলল,

” কেমন আছেন কাকিমা? “

তৃষাণের মা সৌজন্যেমৃলক একটা হাসি বিনিময় করে জানালো ভালো। সৌমিলি বলল,

” হ্যাঁ, মিহির দা ডেকে নিয়ে আসুক। ততক্ষণ আপনারা বসুন আমি চা করে নিয়ে আসছি। “

রাকেশ তাতে সায় দিয়ে বলল,

” হ্যাঁ সেই ভালো। চা খাওয়া হোক, ততক্ষণ তৃষাণ আসুক , তারপর একটা জমিয়ে প্ল্যানিং করতে হবে।”

সুদীপ্ত বলল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ। করতো কাল বা পরশুর মধ্যে। একটা কোথাও না গেলেই নয়। “

তারা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে হাসিঠাট্টা করছে এমন সময় মিহির হন্তদন্ত হয়ে ওপর থেকে নেমে এসে বলল,

” এ…এ তোরা সবাই আয়তো একবার ওপরে। তৃষাণ কোনো সাড়াশব্দ দিচ্ছে না। ওর শরীরটাও কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে। “

মিহিরের এই একটা কথায় সকলের সমস্ত হাসি মূহুর্তের মধ্যে উবে গেল। সবাই একুছুটে ওপরে গিয়ে দেখে, তৃষাণ বিছিনায় তখনও ঘুমোচ্ছে। সবাই হাঁকডাক করে তাকে ডাকা সত্ত্বেও কোনো সাড়া নেই তার। শরীরটাও কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে। বাধ্য হয়েই পাশের পাড়ার সন্দীপন ডাক্তারকে খবর দেওয়া হল। তিনি এসে তৃষাণের একবার স্টেথোস্কোপ বসিয়ে ও পালস দেখে জানালেন, তৃষাণ আর ইহলোকে নেই। সে এখন পরলোকের বাসিন্দা। ডাক্তারের কথায় হঠাৎ একটা হাড়হিম করা ভয় ছড়িয়ে গেল সকলের মধ্যে। সৌমিলি এবং তৃষাণের মা মূহুর্তের মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। তাদেরকে সামলানো দায় হয়ে গেছে। তার চার বন্ধু পাথর হয়ে গেছে। তাদের সবথেকে কাছের, সবথেকে প্রিয়, সবথেকে প্রাণবন্ত বন্ধু তৃষাণ আর বেঁচে নেই। তাদের চোখের কোণে জলকণায় ভরে গেলেও তারা নিজেদের সামলানোর চেষ্টা করছে। সকালের সূর্যের কিরণের সাদা ধবধবে হাসি মূহুর্তের মধ্যে কালো মেঘে পরিণত হল। সেই হাসি আর নেই। সেই আনন্দ আর নেই। শুধু আছে কান্নার তীব্র আওয়াজ। শোকের ছায়া নেমে এল সমগ্ৰ পাড়ায়। ধীরে ধীরে পাড়ার সবাই জমা হলো। তাদের পাড়ার সকলের প্রিয় তৃষাণ আর বেঁচে নেই। সমগ্ৰ পাড়া থেকে কান্নার রোল ভেসে আসছে। সেই আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে আকাশে বাতাসে। রাকেশ, সুদীপ্ত, সৌমিক, এবং গগন ভট্টাচার্য, বুকে এক মস্ত ভারী পাথর চাপিয়ে, তাদের প্রিয় বন্ধুর শেষকৃত্যের ব্যাবস্থা করলেও মিহির তৃষাণের এই অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। না মানতে পারাটাই স্বাভাবিক। তৃষাণের বয়স সবেমাত্র উনত্রিশ। শরীরে কোনো রোগব্যাধিও ছিল না। তাই একটা সুস্থ স্বাভাবিক ছেলে হঠাৎ করে রাতে ঘুমোলো আর সকালের মধ্যে একটা লাশে পরিনত হয়ে গেল, এটা খুবই অস্বাভাবিক। বিশেষ করে মিহিরের কাছে তো এটা আরও অস্বাভাবিক। কারণ সে একজন সিআইডি অফিসার। সে এই ঘটনাটায় কোথাও একটা চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে। রীতিমতো ঝাঁঝালো একটা গন্ধ। তাই সে তার প্রিয় বন্ধুর শেষকৃত্যের কাজ এক লহমায় স্থগিত করে দিল। সে জানালো যে তৃষাণের মৃত্যুটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তাই সে এবং তার সিআইডি টিম এই ঘটনার তদন্ত করবে।

মিহিরের কথায় পাড়ার বেশ কিছু মানুষ বেঁকে বসে। তাদের মতে মৃতদেহের শেষকৃত্য না করলে তার আত্মা অতৃপ্ত থেকে যায়। সৌমিলিও তাদের সঙ্গে একমত। শোকের যে কালো ছায়া তার ওপর নেমে এসেছিল, তদন্তের কথা শুনে এক মূহুর্তে সে মিহিরের বিপক্ষে প্রটেস্ট করার জন্য উঠেপড়ে লাগলো। কিন্তু মিহির নাছোড়বান্দা। সে তার বন্ধুর এভাবে ছেড়ে চলে যাওয়াটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না, তাই সে তদন্ত করবেই। একমাত্র গগন ভট্টাচার্য ছাড়া তার বাকী সকল বন্ধুরাই তার কথায় সায় দিল। সর্বোপরি তৃষাণের মা নিজে তার ছেলের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব সঁপে দিল মিহিরের কাঁধে। এরপর আর কারোর কিছুই বলার থাকলো না। সৌমিলি এই ঘটনাটা না মানতে চাইলেও জোর করে মানতে বাধ্য হল। মিহির তৃষাণের মায়ের কাছে গিয়ে তার হাত দুটো ধরে অপরাধীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার পূর্ণ প্রতিজ্ঞা করল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মিহির দেখলো বারোটা বাজে। কিছুক্ষণ পরেই তার টিম এসে তৃষাণের মৃতদেহটা ফরেনসিক ল্যাবে নিয়ে গেল। শুরু হল তদন্ত।

Pages ( 1 of 4 ): 1 234তারপর »

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌসুমী দাশ | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
Next post বিষাক্ত রক্তাহুতি | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | পার্থিব ঘোষ | Bengali Thriller Story | 9F10